Home » লৌহ ও ইস্পাত শিল্প কাকে বলে? এ শিল্প গড়ে ওঠার কারণ সমূহ কি কি?
লৌহ ও ইস্পাত শিল্প কাকে বলে,

লৌহ ও ইস্পাত শিল্প কাকে বলে? এ শিল্প গড়ে ওঠার কারণ সমূহ কি কি?

by Susmi
0 comment

লৌহ ও ইস্পাত শিল্প

সাধারণ অর্থে যে শিল্পে লৌহ ও ইস্পাত উৎপাদন হয় তাকে লৌহ ও ইস্পাত শিল্প বলে। অন্যভাবে বলতে গেলে খনি হতে উত্তোলিত আকরিক লৌহের সাথে নানাবিধ লৌহশংকর ধাতব খনিজ পদার্থ মিশিয়ে বাত চুল্লির সাহায্যে যে নিয়ে গৌহ ও ইস্পাত উৎপাদন করা হয় তাকে লৌহ ও ইস্পাতশিল্প বলা হয়। লৌহ আকরিকই এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। খনি হতে উত্তোলিত আকরিক লৌহকে কোক কয়লা ও চুনাপাথরের সাথে মিশ্রিত করে এবং চুল্লিতে গলিয়ে কাঁচা লৌহ (Pig Iron) প্রস্তুত করা হয়। কাঁচা লৌহের সাথে ম্যাংগানিজ, টাংস্টেন, ক্রোমিয়াম, নিকেল প্রভৃতি লৌহসংকর ধাতব খনিজ মিশিয়ে ইস্পাত প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে অবশ্য ইস্পাত উৎপাদনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া আবিষ্কৃত হয়েছে।

খনিজ সম্পদ কাকে বলে? খনিজ সম্পদের গুরুত্ব আলোচনা কর।

লৌহ ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণ সমূহ

লোহ ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার পেছনে কতগুলো কারণ বিদ্যমান। এ কারণগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

প্রাকৃতিক কারণসমূহ

নিম্নলিখিত প্রাকৃতিক কারণসমূহের প্রেক্ষিতে কোনো কোনো স্থানে লৌহ ও ইস্পাতশিল্প গড়ে ওঠে। যেমন-

১. কাঁচামালের সহজলভ্যতা: লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হলো অকটিতে দেখ। এছাড়া চুনাপাথর, ম্যাঙ্গানিজ, টাংস্টেন প্রভৃতি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব কাঁচামালের সহজলভ্যতা যেখানে বেশি সেখানে লৌহ ও ইস্পাতশিল্প গড়ে ওঠে।

২. কয়লা ও শক্তি সম্পদের সান্নিধ্য: লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন। কয়লাই শক্তির প্রধান উৎস। তাই কয়লার সহজলভ্যতা যেখানে বেশি সেখানে এ শিল্প গড়ে ওঠে।

৩ . পানি সরবরাহ: লৌহ ও ইস্পাত শিল্পে পানির গুরুত্ব অত্যধিক। কারণ লৌহ আকরিক ধৌতকরণ এবং গলিত লৌহকে ঠান্ডা করতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়।

৪. ব্যাপক সমভূমি: লৌহ ও ইস্পাতশিল্প একটি বৃহদাকার ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ, মালামাল স্থানান্তরকরণ প্রভৃতি কাজে সমভূমির গুরুত্ব অত্যধিক। ফলে এ শিল্প সমভূমি এলাকায় গড়ে ওঠে।

৫. জলবায়ু: লৌহ ও ইস্পাতশিল্প গড়ে ওঠার অন্যতম প্রধান নিয়ামক হলো জলবায়ু। অনুকূল জলবায়ু শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল ও তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক।

খ. অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণসমূহ

নিম্নলিখিত অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণে কোনো কোনো স্থানে লৌহ ও ইস্পাতশিল্প গড়ে ওঠে। যেমন-

১. মূলধন: লৌহ ও ইস্পাত শিল্প একটি বৃহদাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাই এ শিল্পের জন্য ভূমি ক্রয়, অট্টালিকা নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল ক্রয়, শ্রমিকদের ব্যবস্থান নির্মাণ, বেতন প্রদান ইত্যাদি বাবদ প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।

২. শ্রমিক: লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন।

৩. বাজার: বাজারের চাহিদার ওপরও লৌহ ও ইস্পাতশিল্প গড়ে ওঠে।

৪. পরিবহণ ব্যবস্থা: সুষ্ঠু ও উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা লৌহ ও ইস্পাতশিল্প গড়ে ওঠতে সহায়তা করে।

মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেলের উৎপাদন ও বন্টন আলোচনা কর।

৫. উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা: উন্নত কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার ওপর লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের উন্নতি বহুলাংশে নির্ভরশীল।

৬. সুলভ বিদ্যুৎ সংযোগ: উচ্চমানের ইস্পাত উৎপাদনের জন্য বৈদ্যুতিক চুল্লী ব্যবহৃত হয়।

৭. রপ্তানি সুবিধা: লৌহপিন্ড এবং ইস্পাত রপ্তানির সাফল্যের উপর ভিত্তি করে ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশে এ শিল্পের যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে।

গ. রাজনৈতিক কারণসমূহ

রাজনৈতিক কারণসমূহও লৌহ ও ইস্পাতশিল্প গড়ে ওঠার জন্য বিশেষ সহায়ক। যেমন-

১. সরকারের শিল্পনীতি: সরকারের শিল্পনীতির ওপর অনেক সময় লৌহ ও ইস্পাতশিল্প গড়ে ওঠে। যেমন- রাশিয়ায় শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ নীতির দরুন দূরপ্রাচ্যেও লৌহ ও ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠেছে।

২. সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা: লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। যেমন- জাপানের লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের উন্নতি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার ফলেই সম্ভব হয়েছে।

৩. সামরিক উদ্দেশ্য: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, প্রভৃতি দেশে সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুতের পরিমাণ বিপুলহারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ফলে সেসব এলাকায় অতি দ্রুত লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের বিকাশ ঘটে।

উপসংহার

উল্লেখিত প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এবং বাজনৈতিক কারণসমূহের মিলিত প্রভাবে কিংবা যেকোনো একটির বিশেষ প্রভাবেও লৌহ এবং ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠে।

Related Posts