Home » অর্থকরী ফসল কাকে বলে? বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল কি কি?
অর্থকরী ফসল কাকে বলে, বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল কি কি,

অর্থকরী ফসল কাকে বলে? বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল কি কি?

by Susmi
0 comment

বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশে কমবেশি সব ধরনের ফসল জন্যে। এগুলোর মধ্যে কিছু ফসল আছে, যা দেশের চাহিদা মেটাতেই শেষ হয়ে যায়। আবার কিছু ফসল আছে, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। রপ্তানিযোগ্য ফসলকে অর্থকরী ফসল বলা হয়।

অর্থকরী ফসল

যেসব ফসল সরাসরি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে চাষ করা হয়, সেসব ফসলকে অর্থকরী ফসল বলে। এসব ফসল বিক্রির মাধ্যমে কৃষকদের হাতে নগদ টাকা আসে। আবার আর্থিক ও বাণিজ্যিক মূল্য বিবেচনা করে শুধু বিক্রির উদ্দেশ্যে কৃষকগণ এসব ফসল চাষ করে বলে এদের বাণিজ্যিক ফসলও বলা হয়। পাট, চা, ইক্ষু ও তামাক বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল।

বাংলাদেশের কৃষির সমস্যা বা অনগ্রসরতার কারণ গুলো গুলো কি কি?

বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল সমূহ

নিম্নে বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো-

পাট

পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী বা বাণিজ্যিক ফসল। এটা বাংলাদেশের সোনালী আঁশ নামে পরিচিত। দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৪.২৯% অর্জিত হয় পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানির মাধ্যমে। বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ। পৃথিবীর মোট উৎপন্ন পাটের প্রায় ২৫% এদেশে উৎপন্ন হয়।

পাটের উৎপাদন: বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান পাট উৎপাদনকারী দেশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পাট উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৮৪ লাখ বেল।

উৎপাদনকারী অঞ্চল: বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কমবেশি পাট জন্মে। ভনন্মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, কুমিল্লা, যশোর, ঢাকা, কুষ্টিয়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, রাজশাহী প্রভৃতি জেলায় সর্বাধিক পাট জন্মে।

পাটের বাণিজ্য: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস পাট। এদেশে উৎপাদিত পাটের প্রায় ৪০% বিদেশে রপ্তানি করা হয়।  ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯১ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়। তার মধ্যে ২০ কোটি ডলারের কাঁচা পাট।। যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ফ্রান্স, জাপান, কানাডা, কোরিয়া প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশের পাটের প্রধান ক্রেতা।

তুলা

তুলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। সম্প্রতি বাংলাদেশে তুলা চাষ শুরু হয়েছে। এদেশে তুলা চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তুলা চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় চাষীদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে

উৎপাদন: ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার বেল আঁশতুলা।

উৎপাদনকারী অঞ্চল: বাংলাদেশের যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, দিনাজপুর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলায় ভুলার চাষ হয়। তন্মেধ্যে যশোর ও কুষ্টিয়া জেলায় সর্বাধিক তুলা জন্মে।

বাণিজ্য: বাংলাদেশ তুলা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই বাংলাদেশকে প্রতিবছর বিদেশ হতে প্রচুর তুলা আমদানি করতে হয়।

চা

বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে চা অন্যতম। বর্তমানে এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী ফসল।

অনুকূল অবস্থা: চা চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত ও উত্তাপের প্রয়োজন। সাধারণত ১৬-২৭ ডিগ্রী সে. উত্তাপ এবং ২০০-২৫০ সেমি বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানে চা ভাল জন্যো। এ কারণে বাংলাদেশের সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চা উৎপন্ন হয়ে থাকে।

উৎপাদন: চা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দশম স্থানের অধিকারী। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড ১০২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে।

উৎপাদনকারী অঞ্চল: বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬৮টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে ১৩৬টি সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার পাহাড়িয়া অঞ্চলে অবস্থিত। অবশিষ্ট চা বাগানগুলো চট্টগ্রামে, পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থিত।

বাণিজ্য: বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম চা রপ্তানিকারক দেশ। এদেশে উৎপাদিত মোট চাষের প্রায় ৬৫% বিদেশে রপ্তানি হয় ।২০২১ সালে এসে রপ্তানি থেকে এসেছে ১৮ কোটি টাকা। যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, রাশিয়া, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী চায়ের প্রধান ক্রেতা।

তামাক

তামাক বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল।

উৎপাদন: বাংলাদেশে সব ধরনের তামাক পাতার চাষ হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৯৭ একর জমিতে এবং উৎপাদনের পরিমাণ ৯১ হাজার ৫৭৩ টন।

উৎপাদনকারী অঞ্চল: বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে কমবেশি তামাকের চাষ। তবে দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া প্রভৃতি জেলা তামাক চাষের জন্য প্রসিদ্ধ।

বাণিজ্য: দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ তামাক রপ্তানি করতে পারে না বরং উৎকৃষ্টজাতের তামাক আমদানি করতে হয়। বার্ষিক আমদানিকৃত সিগারেট ও তামাকের মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।

ইক্ষু

ইক্ষু বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। চিনি উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ইক্ষু ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ইক্ষু থেকে গুড় তৈরি করা হয়। বর্তমানে এদেশে উৎপন্ন ইক্ষুর দ্বারা দেশের বিভিন্ন চিনির কলে বার্ষিক প্রায় ২ লক্ষ ৪৬ হাজার টন চিনি প্রস্তুত হয় এবং ৪ লক্ষ টনের বেশি গুড় তৈরি হয়।

বাংলাদেশের জলবায়ু ও মৃত্তিকা ইক্ষু চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী। এ কারণে এদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই ইক্ষুর চাষ হয়ে থাকে। তবে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোর প্রভৃতি জেলা ইক্ষু চাষে বিশেষ প্রসিদ্ধ।

রেশম

রেশম বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। রেশম তন্তু ভূঁতগাছের গুটি পোকা হতে সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম রেশম উৎপাদনকারী কেন্দ্র রাজশাহীতে অবস্থিত। এছাড়া যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বগুড়া ও ঢাকা প্রভৃতি জেলায় রেশম চাষ হয়। রেশম দ্বারা উন্নতমানের মসৃণ ও মূল্যবান বস্ত্র তৈরি করা হয়। বর্তমানে এদেশে প্রায় ১৬ লক্ষ পাউন্ড রেশম উৎপন্ন হয়। নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ কিছু রেশম বিদেশে রপ্তানি করে।

রবার

রবার একটি অর্থকরী ফসল। রবার চাষের জন্য অধিক বৃষ্টিপাত ও উত্তাপের প্রয়োজন। সাধারণত ২০°-২৭° সে. উত্তাপ এবং বার্ষিক ২০০ সেমি বৃষ্টিপাত রবার চাষের জন্য উপযোগী। সম্প্রতি বাংলাদেশে রবার চাষ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলার পাহাড়িয়া অঞ্চলে রবারের চাষ ভালো হয়। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ হাজার একর জমি রবার চাষের আওতাধীন। রবারের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২ লক্ষ পাউন্ড। বাংলাদেশে রবারের উৎপাদন খুবই কম। ফলে দেশের অর্থনীতিতে এর অবদান খুব কম।

বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর

সুপারি

সুপারি বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ হাজার একর জমিতে বার্ষিক প্রায় ২৫ হাজার টন সুপারি উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের সব জেলাতে কমবেশি সুপারি চাষ হলেও দেশের দক্ষিণাখুলীয় সমুদ্রোপকূলবর্তী জেলাসমূহে সুপারির চাষ বেশি হয়। নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা প্রভৃতি জেলাতে সর্বাধিক সুপারি জন্মে।

পান

পান বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। এদেশে ৩০ হাজার একর জমিতে প্রতিবছর প্রায় ৬৪ হাজার মে. টন পান উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের সিলেট, ঢাকা, বরিশাল, ফরিদপুর, রাজশাহী, নোয়াখালী, কুমিল্লা প্রভৃতি জেলায় প্রচুর পান জন্মে। পান বিদেশে রপ্তানি করে বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।

উপসংহার

বাংলাদেশে অর্থকরী ফসল হতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়ে থাকে। উক্ত ফসলগুলোর চাহিদা বৃদ্ধি করার জন্য ফসলগুলোর মান রক্ষা করা প্রয়োজন এবং যে অর্থকরী ফসলের চাহিদা বিদেশে বেশি তার উৎপাদন বাড়ালে জাতীয় অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।

Related Posts