Home » শ্রমের মর্যাদা রচনা | রচনা শ্রমের মর্যাদা | শ্রমের মর্যাদা অনুচ্ছেদ
শ্রমের মর্যাদা রচনা

শ্রমের মর্যাদা রচনা | রচনা শ্রমের মর্যাদা | শ্রমের মর্যাদা অনুচ্ছেদ

by Susmi
0 comment
শ্রমের মর্যাদা রচনা বা রচনা শ্রমের মর্যাদা অথবা শ্রমের মর্যাদা অনুচ্ছেদ সম্পর্কে বিভিন্ন পরীক্ষায় এসে থাকে। আজকের আর্টিকেলে গুরুত্বপূর্ণ এই রচনাটি তুলে ধরা হয়েছে। আশাকরি ভালো লাগবে।

শ্রমের মর্যাদা

সূচনা

কর্মই জীবন। সৃষ্টির সমস্ত প্রাণীকেই নিজ নিজ কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে হয়। ছোট্ট পিঁপড়া থেকে শুরু করে বিশাল হাতি পর্যন্ত সবাইকেই পরিশ্রম করে টিকে থাকতে হয়। পরিশ্রমই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে নিজেকে আলাদা করেছে। পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের ভাগ্য বদলেছে এবং বহু বছরের শ্রম ও সাধনা দ্বারা পৃথিবীকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। বলা যায়, মানুষ এবং সভ্যতার এত বড় অগ্রগতির মূলে রয়েছে পরিশ্রমের অবদান।

শ্রম কী

শ্রমের আভিধানিক অর্থ বোঝায় মেহনত বা দৈহিক খাটুনি। সাধারণভাবে যেকোনো কাজকেই শ্রম বলা যায়। পরিশ্রম হচ্ছে এ পৃথিবীতে টিকে থাকার সংগ্রামের প্রধান হাতিয়ার। পরিশ্রমের দ্বারাই মানুষ গড়তে পেরেছে বর্তমান বিশ্ব ও আধুনিক সভ্যতার বিজয়-স্তম্ভ।

শ্রমের শ্রেণিবিভাগ

শ্রম দুই প্রধানত দুই প্রকার। যথা- মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম। শিক্ষক, ডাক্তার, বৈজ্ঞানিক, সাংবাদিক, অফিসের কর্মচারী শ্রেণির মানুষ যে ধরনের শ্রম দিয়ে থাকেন সেটিকে বলে মানসিক শ্রম। আবার কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, জেলে, মজুর শ্রেণির মানুষের শ্রম হচ্ছে শারীরিক শ্রম। পেশা বা কাজের ধরন অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের পরিশ্রম বিভিন্ন ধরনের হয়। তবে শ্রম শারীরিক বা মানসিক যা-ই হোক না কেন সবারই মিলিত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা।

শ্রমের প্রয়োজনীয়তা

মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যবিধাতা। কারণ, তার এই ভাগ্য নির্মিত হয় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। তাই মানবজীবনে পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আর কর্মবিমুখ অলস মানুষ কোনোদিন উন্নতি লাভ করতে পারে না। পরিশ্রম ছাড়া জীবনের উন্নতি আকাশ-কুসুম কল্পনার সমান। জীবনে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করতে হলে নিরলস পরিশ্রম দরকার। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাই বাক্তিগত কিংবা জাতীয় পর্যায় সকল ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য মানুষকে পরিশ্রমী হতে হবে। একমাত্র পরিশ্রমই মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে।

শ্রমের মর্যাদা

মানুষের জন্ম স্রষ্টার অধীন, কিন্তু কর্ম মানুষের অধীন। জীবন-ধারণের তাগিদে মানুষ নানা কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করে। যেমন- কৃষক ফসল ফলায়, তাঁতি কাপড় বোনে, জেলে মাছ ধরে, শিক্ষক ছাত্র পড়ান, ডাক্তার চিকিৎসা করেন, বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন। এঁরা প্রত্যেকেই মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। আর কোনো কাজই ছোট নয়। আর্থ-সামাজিক পদমর্যাদায় হয়তো সবাই সমান নয়। কিন্তু এদের প্রত্যেকেরই মেধা, মনন, ঘাম ও শ্রম সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তাই সকল মানুষের শ্রমের প্রতি আমাদের সমান মর্যাদা ও শ্রদ্ধা থাকা উচিত। উন্নত বিশ্বে কোনো কাজকেই তুচ্ছ বা ছোট বলে দেখা হয় না। সমাজের প্রতিটি লোক নিজের কাজকে গুরুত্ব দিয়ে করার চেষ্টা করে। তাই চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা প্রভৃতির মতো দেশ আজ এত উন্নতির চরম শিখরে। আমাদের দেশে শারীরিক শ্রমকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হয় না। তার ফলে আজো সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা দেশের অধিবাসী হয়েও অধিকাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে।

পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি

সৌভাগ্য আকাশ থেকে পড়ে না। জীবনে সৌভাগ্য অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনা। সব মানুষের মধ্যেই সুপ্ত প্রতিভা আছে। পরিশ্রমের দ্বারা সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হয়। যে মানুষ কর্মকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে, জীবনসংগ্রামে তারই জয় হয়েছে। কর্মের প্রতি নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি জীবনে সফল সৈনিক হতে পারে। কর্মহীন ব্যক্তি সমাজের বোঝাস্বরূপ। অন্যদিকে পরিশ্রমই মানবজীবনের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। অতএব, আমাদের জীবনে উন্নতি করতে হলে, জীবনে সুখী হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

উপসংহার

পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রক নয়, সভ্যতা বিকাশেরও সহায়ক। মানব-সভ্যতার উন্নতি- অগ্রগতিতে শ্রমের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের নাগরিক। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন ও সাধনা আমাদের সবার। তাই আমাদের শ্রমবিমুখ হলে চলবে না। শ্রমের বিজয়-রথে চড়ে একদিন আমরাও উন্নত সভ্যতার সিংহদ্বারে পৌঁছাতে হবে।

Related Posts