সমাজের বৈশিষ্ট্য সমূহ
সমাজ বলতে এমন একটি সংগঠনকে বুঝায়, যেখানে মানুষ কতকগুলো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একত্রে বসবাস করে। সমাজ হচ্ছে একটি মানব সংগঠন যা মানুষের সঠিক প্রয়োজন মেটানোর তাগিদেই সৃষ্টি হয়েছে। তাই সমাজের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে সমাজের বৈশিষ্ট্য গুলো তুলে ধরা হলো-
১. ব্যক্তির সমষ্টি: ব্যক্তি হলো সমাজের প্রাণ। মানুষ একা থাকতে পারে না, তাই একা কোনো সমাজ সৃষ্টি করা হয় না।
২. পারস্পরিক সম্পর্ক: সমাজস্থ মানুষ একে অপরের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ। সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিগণের মধ্যে পাম্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা আবশ্যক।
৩. সামাজিক শৃঙ্খলা: সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তিগণ খামখেয়ালীপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে না। তাই সমাজবদ্ধ মানুষকে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হয়।
৪. অভিন্ন উদ্দেশ্য: সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট। হলো অভিন্ন উদেশ্য। অভিন্ন উদ্দেশ্য অর্জনের জন্যই সমাজের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
৫. সহানুভূতিশীলতা: সমাজে বসবাসকারী মানুষকে সহানুভূতিশীল হতে হবে। সহানুভূতি না থাকলে সমাজ সৃষ্টি হতে পারে নয়। তাই সমাজে বসবাস করতে হলে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে।
৬. পারস্পরিক সহযোগিতা: সমাজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো পারস্পরিক সহযোগিতা। নিজেদের ও সমাজের অন্যান্যদের চাহিদা পূরণের জন্য একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করতে হয়। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই আদর্শ সমাজ গড়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: সমাজ কি বা কাকে বলে? সমাজের সংজ্ঞা দাও
৭. সামাজিক মূল্যবোধ: সামাজিক মূল্যবোধ সমাজের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেকটি সমাজেই সামাজিক মূল্যবোধ দ্বারা সৃষ্টি এবং সমাজ সদস্যরা সামাজিক মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়।
৮. মমত্ববোধ: মমত্ববোধ সমাজের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য মানুষ একে অন্যের প্রতি স্নেহ, প্রেমপ্রীতি, ভালোবাসা ও করুণা প্রদর্শন করে থাকে। এভাবেই সমাজের সংহেতিবোধের সৃষ্টি হয়।
৯. ঐক্যবদ্ধতা: একই এলাকায় বাস করতে যেয়ে সদস্যদের মধ্যে একটা সাধারণ মনোভাব গড়ে ওঠে। আর তারই সাথে গড়ে ওঠে সদস্যদের একটা দায়িত্ববোধ। দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন হয় ঐক্যবদ্ধতা।
১০. সমাজ সর্বজনীন: সময়ের বিচারে সমাজ হলো প্রাচীনতম সংস্থা। অনুরূপভাবে এর ব্যাপকতা বিশ্ব জুড়ে, বস্তুত সমাজ হলো সর্বজনীন। বলা যায় যে, “সমাজ মানবজাতির মতোই সর্বপ্রাচীন।”
১১. সমাজ সর্বব্যাপক: পৃথিবীর প্রাণিজগতের সকল প্রজাতির মধ্যেই সমাজব্যবস্থার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। তাই কেবল মানবজাতির মধ্যেই সমাজব্যবস্থা সীমাবদ্ধ নয়-পশুপাখির মধ্যেও সমাজব্যবস্থা দেখা যায়।
১২. সমাজে পারস্পরিক সচেতনতা বিদ্যমান: মানুষের সম্পর্কসমূহের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো পারস্পরিক সচেতনতা। মানুষের সামাজিক সম্পর্কের বড় বৈশিষ্ট্য হলো পারস্পরিক সচেতনতা। তাই মানবসমাজে এর উপস্থিতি ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।
১৩. চলমানতা: সমাজ সদা পরিবর্তনশীল। স্থানকালের প্রেক্ষাপটে সমাজ প্রচলিত পরিস্থিতির সঙ্গে পরিবর্তিত আকার লাভ করে।
১৪. ধারাবাহিকতা: যেদিন থেকে সমাজের চলার পথের সূচনা ঘটেছিল সেদিন থেকে সমাজের কোথায়ও ছেদ পড়ে নি। অবিরাম ধারাবাহিকতায় সমাজের গতি উর্ধ্বমুখী হয়েছে মাত্র। সমাজের এই গতিপ্রকৃতিকে কেউ সরলরৈখিক বলে দাবি করেন, কেউবা এই গতিকে চক্রাকার হিসেবে মনে করেন।
পরিশেষে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানে সর্বাধিক, ব্যাপক ও গ্রহণযোগ্য প্রত্যয় হলো সমাজ। সমাজ হলো সর্বজনীন ধারণা। কারণ সমাজেই মানুষ জল্লাহণ করে ও মৃত্যুবরণ করে থাকে। সমাজবদ্ধতার মূলভিত্তি হলো মানুষের সুসংবদ্ধতা বা দলবদ্ধতা।