Home » স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা (আপডেটেড তথ্যসহ)
রচনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু, স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা, পদ্মা সেতু রচনা, স্বপ্নের পদ্মা সেতু,

স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা (আপডেটেড তথ্যসহ)

by Susmi
1 comment

বর্তমান সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। তাই এটি নিয়ে দেশের জনগণের উৎসাহ ও উদ্দীপনার শেষ নেই। সেজন্য পরীক্ষার প্রশ্নে পর্যন্ত উঠে এসেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে রচনা লেখার জন্যে। নিচে রচনাটি তুলে ধরা হলো। তোমরা এটাকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনা, অনুচ্ছেদ, প্রতিবেদন, ভাষণ ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করতে পারবে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু

ভূমিকা

সাধারণত স্বপ্ন স্বপ্নেই থেকে যায়। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা বা বাস্তবায়িত হওয়া খুব কঠিন কাজ। কেননা স্বপ্ন তো কল্পনা। কিন্তু কিছু কিছু স্বপ্ন বা কল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়। তার জন্য দরকার হয় দৃঢ় প্রত্যয়, উদ্যোগ, শ্রমনিষ্ঠা, একাগ্রতা ও সাধনা। মানুষের নানা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনও বাস্তবায়িত হয়েছে এভাবেই। অনেক আশা, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় প্রত্যয়ের ফসল আজকের স্বপ্নের পদ্মা সেতু । এটি প্রমাণিত করেছে যে, বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাস ও সভ্যতার বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত সন্তান। এটি এদেশের মানুষের উদ্যম ও কর্মস্পৃহার সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে সারাবিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের রূপরেখা

পদ্মা সেতু প্রকল্প বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সেতু প্রকল্প। নিম্নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের রূপরেখা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

প্রকল্পের নাম— পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।

বাহক – যানবাহন ও ট্রেন।

ক্রস– পদ্মা নদী ।

স্থান– লৌহজং, মুন্সীগঞ্জের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর।

নির্মাণ শুরু— ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪।

নকশাAECOM

উপাদান— কংক্রিট, স্টিল।

মোট দৈর্ঘ্য – ৬,১৫০ মিটার (২০,১৮০ ফুট)

প্রস্থ – ১৮.১০ মিটার (৫৯.৪ ফুট)

নির্মাণকারী— চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

নির্মাণকাজ শেষ ও উদ্বোধন – ২৫ জুন, ২০২২, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধক।

নির্মাণকাজের বিন্যাস

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজ সাতটি ভাগে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েঠে। এগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো :

ক. মূল সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পালন করে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। কার্যাদেশ পেয়েছে ২৬ নভেম্বর, ২০১৪। চুক্তি অনুযায়ী ১২,১৩৩.৩৯ কোটি টাকায় ৪৮ মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার কথা ছিল। মূল সেতুর নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন নতুন কৌশল ও প্রযুক্তি।

খ. নদীশাসনের কাজ করেছে সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড, চায়না। চুক্তিমূল্য ৮,৭০৭.৮১ কোটি টাকা ।

গ. ১২৯০ কোটি টাকায় যৌথভাবে মাওয়া ও জাজিরায় সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ করেছে বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়াভিত্তিক এইচ.সি.এম. (জেভি)।

ঘ. ভূমিগ্রহণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য মোট ১৪০৮.৫৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে জমির মোট অতিরিক্ত বদলিমূল্য প্রদান করা হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৫০০.৭১ কোটি টাকা।

ঙ. পরিবেশ উন্নয়নে ২০১২ সাল থেকে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং অদ্যাবধি মোট ৫৫,১৫০টি বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।

পদ্মার দুই পাড়ের সাইটে (রিসোর্ট এরিয়া) আরও লক্ষাধিক বৃক্ষ রোপণের প্রক্রিয়া চলছে।

চ. মূল সেতু ও নদীশাসন কাজের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে কোরিয়ান এক্সপ্রেস ওয়ে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৮৩ কোটি টাকা।

ঘ. সংযোগ ও সার্ভিস এলাকার পরামর্শকের কাজ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন ১৩৩ কোটি টাকায়।

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এক বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে।

সেতু প্রকল্প এলাকায় কর্মচাঞল্য

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কার্যক্রমে বহু মানুষের সম্পৃক্ততায় কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করেছে বহুসংখ্যক প্রকৌশলী, হাজার হাজার শ্রমিক, পরামর্শক ও বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা। প্রথম দিকে ২০০ বিদেশিসহ প্রায় দুই হাজার লোকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছিল। প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হওয়ার পর প্রায় দুই হাজার বিদেশিসহ প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ২০ হাজার লোক বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা এ সেতু ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত করে দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলা এবং ভবিষ্যতে রেলপথে যুক্ত হবে অধিকাংশ জেলা। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে ১.২ শতাংশ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ অতীতের দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভোগ ও ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি পাবে। সড়ক বা রেলপথে যাতায়াত হবে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ। তাছাড়া মংলা ও পায়রা বন্দরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে কর্মসংস্থানেরও যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হবে।

পদ্মা সেতুর নির্মাণচিত্র

চীন থেকে ভারী ভারী যন্ত্রপাতি এনে নির্মাণ করা হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু । জার্মানি থেকে আনা হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হ্যামার। পাইলিং শুরু হওয়ার পর মানুষের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করে। একে একে বসানো হয় ৪১টি স্প্যান। তারপর দ্বিতল সেতুর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো শেষ হয় ২০২১ সালের ২০ জুন। আর সড়কপথের স্ল্যাব বসানো শেষ হয় ২৩ আগস্ট। এর মধ্য দিয়ে ৬.১৫ কি.মি. পদ্মা সেতুর পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রকাশ পেল ।

২০১৮ সালেই সেতুর দুই প্রান্তের সঙ্গে সড়ক, টোলপ্লাজা এবং নির্মাণ অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩ তম পিলারে ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পুরো পদ্মা সেতু। ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট সর্বশেষ সড়ক স্ল্যাব বসানো হয়। এর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ।

২০২২ সালের ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হয় দেশবাসীর জন্যে।

উপসংহার

স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ নানা কারণেই একটি লক্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্বশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং সচল অর্থনীতির সফল চাবিকাঠি পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের মাধ্যমে এদেশ আরও একধাপ এগিয়ে গেলো। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়ালো বাংলাদেশ।

অন্যান্য রচনা:

বাংলাদেশের উৎসব রচনা (১১০০ শব্দ) | SSC | HSC

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা (১০০০ শব্দ) | SSC | HSC

জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞানী রচনা (৫০০ শব্দ)।

Related Posts

1 comment

Comments are closed.