হিসাববিজ্ঞান ও নিরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরীক্ষায় এসে থাকে। তাছাড়াও এই দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে জানা থাকাটা প্রয়োজন। কারণ, এই দুটি বিষয় বাস্তবিক জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে হিসাববিজ্ঞান ও নিরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য নিয়ে। তার আগে নিরীক্ষা ও হিসাববিজ্ঞান সম্পর্কে সামান্য ধারণা নিয়ে নিই।
কোন প্রতিষ্ঠানের হিসাব বহি এবং চূড়ান্ত হিসাবের শুদ্ধতা ও যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য প্রমাণপত্রের সাহায্যে যোগ্যতাসম্পন্ন তৃতীয় ব্যক্তি দ্বারা যে পরীক্ষা কার্য চালানো হয় তাকে নিরীক্ষা বলে।
পক্ষান্তরে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঘটনা ও লেনদেনসমূহকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ করে এদের সামগ্রিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয় এবং পর্যালোচনা করে এর তথ্য ব্যবহারকারীদের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়ার পদ্ধতিকে হিসাববিজ্ঞান বলা হয়।
হিসাববিজ্ঞান ও নিরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য
নিম্নে হিসাববিজ্ঞান ও নিরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য সমূহ তুলে ধরা হলো-
পার্থক্যের বিষয় | নিরীক্ষা | হিসাববিজ্ঞান |
১। উদ্দেশ্য | প্রণীত হিসাবের যথার্থতা ও সত্যতা নিরূপণ করা নিরীক্ষার উদ্দেশ্য। | লিপিবদ্ধ লেনদেন হতে কারবারের ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয়ে চূড়ান্ত হিসাব প্রণয়ন এর উদ্দেশ্য। |
২। কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তির নাম | এর কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তিকে নিরীক্ষক বলা হয়। | এর কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তিকে হিসাবরক্ষক বলা হয়। |
৩। কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তির যোগ্যতা | এর কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তিকে হিসাববিজ্ঞানে অভিজ্ঞ ও চাটার্ড একাউন্টেন্ট হতে হবে। | এর কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তিকে শুধু হিসাববিজ্ঞানে অভিজ্ঞ হতে হবে। |
৪। কার্যের সময় | এর কার্য হিসাবরক্ষণের পরে সম্পাদিত হয়। | এর কাজ নিরীক্ষার পূর্বে সম্পাদিত হয়। |
৫। সম্পর্ক | নিরীক্ষক ও মালিকের মধ্যে অছির সম্পর্ক বিদ্যমান। | হিসাবরক্ষক ও মালিকের মধ্যে কর্মচারী মালিক সম্পর্ক বিদ্যমান। |
৬। নির্ভরশীলতা | এটি হিসাবরক্ষণের উপর নির্ভরশীল। | এটি নিরীক্ষার উপর নির্ভরশীল নয়। |
৭। প্রতিবেদন পেশ | এ কার্য সম্পাদনের পর প্রতিবেদন পেশ করতে হয়। | এ কার্য সম্পাদনের পর প্রতিবেদন পেশ করতে হয় না। |
আরও পড়ুন:
নিরীক্ষা কি? নিরীক্ষার উদ্দেশ্য কি?
নিরীক্ষার বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর
৮. অপরিহার্যতা | বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ছাড়া এটা অপরিহার্য নয়। | সকল প্রকার প্রতিষ্ঠানে এটা অপরিহার্য। |
৯। দায় | নিরীক্ষকের দায় থাকে প্রধানত তার মক্কেল অর্থাৎ নিয়োগকর্তার নিকট। | হিসাবরক্ষকের দায় থাকে প্রধানত কারবারের পরিচালন কর্তৃপক্ষের নিকট। |
১০। নিয়োগ | নিরীক্ষক প্রতি বৎসর বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর মক্কেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিযুক্ত হন। | একাজে নিযুক্ত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মচারী। |
১১। নিরপেক্ষতা | এ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হয়। | হিসাবরক্ষণের জন্য নিরপেক্ষতা কোন অপরিহার্য বিষয় নয়। |
উপরোক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, যদিও নিরীক্ষা ও হিসাববিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে তথাপি এরা উভয়ই প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পরিচালনায় সাহায্য করে থাকে। কারণ হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে কারবারের লেনদেন লিপিবদ্ধ ও আর্থিক বিবরণ প্রস্তুত করা হয়। আর নিরীক্ষার মাধ্যমে উক্ত হিসাবের পরীক্ষা ও সমালোচনা করা হয়। এজন্য নিরীক্ষাকে হিসাবরক্ষণের অলংকার বলা হয়।