আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা Class 5, 6, 7 সহ এসএসসি এবং বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় এসে থাকে। কখনো কখনো রচনা না দিয়ে অনুচ্ছেদ আকারেও লিখতে বলা হয়। তখনও এই রচনাটি কাজে লাগবে। কাজেই এই রচনাটি শিখলে তুমি অনেক ক্ষেত্রেই এটিকে কাজে লাগাতে পারবে। চলো, আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা বা অনুচ্ছেদটি শিখে নিই।
আমার জীবনের লক্ষ্য
ভূমিকা:
মহাকালের তুলনায় মানবজীবন খুবই ছোট। এই ছোট মানবজীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তোলার জন্য দরকার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন নৌকার মতো। হালবিহীন জীবন সময়ের ঘূর্ণাবর্তে পড়ে দিশেহারা হয়ে যায়। তাই জীবনের শুরুতে একটা লক্ষ্য স্থির করে নেওয়া উচিত। লক্ষ্য ঠিক রেখে শ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও একাগ্রতা নিয়ে অগ্রসর হলে জীবনের সে লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব
লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা:
আমি খুব ছোটবেলা থেকেই জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভেবেছি। তখন আমার বয়স ছিল কম। মন ছিল চঞ্চল। চারদিকে তাকিয়ে যা দেখতাম, তাতেই রোমাঞ্চিত হতাম। আকাশে গর্জন করে বিমান উড়ে যেতে দেখে ভাবতাম, আমি পাইলট হব। স্কুলের বইতে বিজ্ঞানী নিউটন, আলভা এডিসন বা গ্যালিলিওর চমকপ্রদ আবিষ্কারের কাহিনী পড়ে ভাবতাম, আমি একদিন বিজ্ঞানী হব। রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুলের কবিতা পড়ে ভেবেছি, আমি একদিন তাঁদের মতো জগৎবিখ্যাত লেখক হব। একটু বড় হওয়ার পর যখন জ্ঞান-বুদ্ধি একটু বেড়েছে, তখন বুঝতে পেরেছি, ইচ্ছে করলেই যা-কিছু হওয়া যায় না। তাই আমি অনেক ভেবেচিন্তে আমার জীবনের লক্ষ্য স্থির করেছি- বড় হয়ে আমি একজন ডাক্তার হব। আমার এ লক্ষ্য নির্ধারণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মানবসেবা।
আরও পড়ুন:
নৌকা ভ্রমণ অনুচ্ছেদ | নৌকা ভ্রমণ রচনা
একটি শীতের সকাল রচনা || একটি শীতের সকাল অনুচ্ছেদ
শরৎকাল রচনা || শরৎকাল অনুচ্ছেদ || শরৎকালের দৃশ্য
ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিদ্যা শেখার কারণ
আমাদের দেশে চিকিৎসাসেবা এখন সীমিত ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। দেশের বিপুল জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম। গ্রামের কৃষক ও সাধারণ মানুষ এখন ভালো চিকিৎসাসেবা পায় না। বড় বড় অনেক চিকিৎসকের মধ্যে এখন ব্যবসায়িক মানসিকতা ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থা বদলানো দরকার। এ জন্য চাই নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসক। তাই আমি ভালো ডাক্তার হতে চাই।
জীবনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলা
আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এখনই তৈরি হচ্ছি। অঙ্ক ও বিজ্ঞানের প্রতি আমার বরাবরই আকর্ষণ বেশি। স্কুলের নির্ধারিত পড়া ছাড়াও অবসর পেলে আমি বিজ্ঞানের বই পড়ি, অঙ্ক কষি। প্রকৃতির রহস্যে আমি বিস্মিত হই। নানা আবিষ্কারের কাহিনী পড়ে আমি খুব মজা পাই। তাই নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগই বেছে নিয়েছি। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে কলেজে গিয়েও আমি বিজ্ঞান পড়ব। তখন জীববিদ্যা আমার অন্যতম বিষয় থাকবে। আশা করি, নিয়মিত লেখাপড়া করতে পারলে মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ পাব। মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে পারব বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি চিকিৎসা-বিজ্ঞানের যে-কোনো একটি শাখায় বিশেষজ্ঞ হওয়ার আশা পোষণ করি ।
জনসেবা ও কর্মজীবন
একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে আমি কর্মজীবন শুরু করতে চাই। সরকারি চাকরি গ্রহণ না করে স্বাধীনভাবে রোগী দেখব। এ জন্য আমি গ্রামের অর্থাৎ উপজেলা পর্যায়ের স্থানকে বেছে নেব। অধিক অর্থোপার্জনের জন্য শহরই উপযুক্ত স্থান, কিন্তু আমার অর্থের প্রতি কোনো লোভ নেই। শহরের ভালো ডাক্তার গ্রামে থাকতে চায় না। ফলে জটিল রোগের জন্য গ্রামের মানুষদের শহরে আসতে হয়। অথচ গরিব গ্রামের লোকদের সেই আর্থিক সংগতি থাকে না। আর্থিক অসুবিধার কারণে কত লোক বিনা-চিকিৎসায় মারা যায়। আমি গ্রামের সেইসব হতদরিদ্র জনগণের সেবা করতে চাই। তাদের জন্য বিনা- ফিতে চিকিৎসা সেবার সুযোগ থাকবে। ধনীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফি আদায় করব। আমার ইচ্ছা, গ্রামের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার একটি পদ্ধতিগত মডেল তৈরি করা। যাতে চিকিৎসাসেবাবঞ্চিত গ্রামের মানুষরা উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা পায়।
উপসংহার
ডাক্তারি শুধু একটি পেশা নয়, একই সঙ্গে মানবসেবার মহৎ সুযোগও আছে এ পেশায়। উকিল, ইঞ্জিনিয়ার, অর্থনীতিবিদ, ম্যাজিস্ট্রেট – এসব বর্ণাঢ্য পেশার চাইতে ডাক্তারি পেশা সম্পূর্ণ আলাদা। ডাক্তারি পেশায় অর্থোপার্জন হয় আবার মানবসেবার প্রত্যক্ষ সুযোগও এ পেশাতে রয়েছে। তাই আমি সবদিক বিবেচনা করে একজন ডাক্তারই হতে চাই। এটাই আমার জীবনের লক্ষ্য।