গ্রন্থাগার অনুচ্ছেদ অথবা জাতীয় গ্রন্থাগার রচনা অথবা তোমার বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সম্পর্কে প্রতিবেদন অথবা তোমার বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সম্পর্কে প্রতিবেদন ইত্যাদি সম্পর্কে পরীক্ষায় লিখতে বলা হলে এই লেখাটি তোমাদের খুব কাজে লাগবে। তাই দেরি না করে এখনি এই লেখাটি শিখে নাও। চাইলে এখান থেকে ধারণা নিয়ে নিজেরাও নোট তৈরি করতে পারো। আমি এখানে পয়েন্ট আকারে দিয়েছি। রচনা বাদে অন্যান্য গুলো লেখার ক্ষেত্রে তোমরা পয়েন্টগুলো বাদ দিও। আশাকরি তোমরা তা জানো, কিভাবে অনুচ্ছেদ লিখতে হয় বা কিভাবে প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়।
গ্রন্থাগার অনুচ্ছেদ বা রচনা
ভূমিকা
গ্রন্থাগার হচ্ছে নানাধরনের বইয়ের সংগ্রহশালা। এখানে বইপত্র সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও আদান-প্রদানের ব্যবস্থা থাকে। গ্রন্থাগারে সঞ্চিত থাকে মানুষের যুগযুগান্তরের চিন্তা ও জ্ঞানের অমূল্য সম্পদ। গ্রন্থাগারের সঞ্চিত সম্পদ একদিকে বহন করে কালের সাক্ষ্য, অন্যদিকে মুছে দেয় অতীত আর বর্তমানের সীমারেখা।
গ্রন্থাগারের উদ্ভব
গ্রন্থাগারের ইতিহাস সুপ্রাচীন। বই উদ্ভাবনের অনেক আগেই গ্রন্থাগারের জন্ম। প্রাচীনকালে বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ মৃতফলকে লিখে রাখা হতো। আড়াই হাজার বছরেরও আগে অ্যাসিরিয়ার রাজা আশুরবানিপাল মৃতফলকের গ্রন্থাগার করেছিলেন। তাতে প্রায় ৩০ হাজার মৃত্যুলক ছিল । প্রাচীনকালের সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থাগার হচ্ছে আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার। সাধারণ পাঠাগার প্রথম গড়ে ওঠে রোমে। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে রোমে ২৫টিরও বেশি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। বাদশাহ হারুন- অর-রশিদের পাঠাগারের বেশ নাম ছিল। এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে কনফুসিয়াস ও বুদ্ধের ধর্মাদর্শে প্রভাবিত সমাজ গ্রন্থ ও গ্রন্থাগারকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে এসেছে। মুসলিম বিশ্বে কর্দোভা, দামেস্ক ও বাগদাদেও বেশকিছু গ্রন্থাগার ছিল। গ্রন্থাগার অনুচ্ছেদ বা তোমার বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সম্পর্কে প্রতিবেদন
আরও পড়ুন:
সংবাদপত্র রচনা || সংবাদপত্র অনুচ্ছেদ || সংবাদপত্র রচনা Class 7
কম্পিউটার অনুচ্ছেদ || কম্পিউটার রচনা
আমার জীবনের লক্ষ্য অনুচ্ছেদ || আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা Class 5, 6, 7
বিশ্বের বিখ্যাত কয়েকটি গ্রন্থাগার
বর্তমানে পৃথিবীর বিখ্যাত গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে ব্রিটেনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ফ্রান্সের বিবলিওধিক ন্যাশনাল লাইব্রেরি, মস্কোর লেনিন লাইব্রেরি, আমেরিকার লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে ১৯৫৩ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি ।
গ্রন্থাগারের শ্রেণিবিভাগ
গ্রন্থাগার ব্যক্তিগত হতে পারে, হতে পারে রাষ্ট্রীয়। সাধারণ গ্রন্থাগার সবার জন্যে উন্মুক্ত। পাঠকদের রুচি ও চাহিদার ভিন্নতা অনুযায়ী বিচিত্র গ্রন্থের সমাবেশ ঘটে সাধারণ পাঠাগারে। এখানে গ্রন্থের সংখ্যাও হয় প্রচুর। অন্যদিকে ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারে ব্যক্তির অভিরুচিই প্রধান। এর কারণ, বিশেষ ধরনের বইয়ের প্রতি সংগ্রাহকের আগ্রহ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ছাপাখানা আবিষ্কার হলে বই ছাপানোর কাজ সহজতর হয়। তখন থেকে পারিবারিক গ্রন্থাগার গড়ে উঠতে থাকে। গ্রন্থাগার বেসরকারি উদ্যোগে অর্থাৎ ক্লাব বা গোষ্ঠীর উদ্যোগেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও গ্রন্থাগার থাকে। অনেক অফিস-আদালতেও নিজস্ব গ্রন্থাগার রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রকৃতি অনুসারে গ্রন্থাগারের নামেও ভিন্নতা দেখা দেয়। যেমন: জাতীয় গ্রন্থাগার, সাধারণ গ্রন্থাগার, বিদ্যালয় গ্রন্থাগার, গণগ্রন্থাগার, ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার ইত্যাদি।
ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা
গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কখনো বিশেষ প্রয়োজনে, কখনোবা শুধুই মনের খোরাক জোগাতে মানুষ ছুটে যায় গ্রন্থাগারে। একঘেয়ে, ক্লান্ত জীবনে বই এনে দিতে পারে সজীব প্রাণস্পন্দন। গ্রন্থাগারের বিচিত্র সংরক্ষণ থেকে পাঠক সহজেই খুঁজে নিতে পারেন পছন্দের বইটি। ছাত্ররা প্রধানত গ্রন্থাগার ব্যবহার করে পাঠ্যবিষয়ের বই পেতে কিংবা কোনো বিষয়ের উত্তর খুঁজতে। গবেষক গ্রন্থাগারে আসেন নানা তথ্যের সন্ধানে। শখের পড়ুয়ারা গ্রন্থাগারে আসেন খেয়ালখুশি মাফিক বই পড়ে আনন্দ পেতে। ভালো বই ভালো মানুষ গড়তে বিশেষ অবদান রাখে। বই হতে পারে মানুষের নিঃসঙ্গতা কাটানোর বিশেষ বন্ধু। নৈতিক অধঃপতন থেকে মানুষকে টেনে তুলে আনতে পারে ভালো বই, ভালো গ্রন্থাগার। বই ছাড়া প্রকৃত মনুষ্যত্ব লাভ এক দুরূহ ব্যাপার। একটি জাতিকে উন্নত, শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমান হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। যে জাতির সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার নেই, সে জাতির সমৃদ্ধ ইতিহাসও নেই। গ্রন্থাগার অনুচ্ছেদ অথবা কলেজ গ্রন্থাগার সম্পর্কে প্রতিবেদন
আধুনিক গ্রন্থাগার
আধুনিককালে গ্রন্থাগার বলতে কেবল বই-এর সংগ্রহ বোঝায় না। তা মুদ্রিত, চিত্রসংবলিত, ধারণকৃত, ইলেকট্রনিক কৌশলে সংরক্ষিত সবধরনের যোগাযোগ মাধ্যমের সংগ্রহশালাকে বোঝায়। তাই গ্রন্থাগারে এখন বই ছাড়াও ফিল্ম, ভিডিও স্ট্রিপ, অডিও ক্যাসেট, ভিডিও ক্যাসেট, মাইক্রোফিল্ম ইত্যাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ শুরু হয়েছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বায়নের ফলে ঘরে বসেই আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত সব গ্রন্থাগারের বই, পত্রিকা ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারি।
গ্রন্থাগারের কাজ
প্রত্যেক গ্রন্থাগারে দক্ষ শিক্ষিত ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োজিত থাকেন। এঁদের কাজ গ্রন্থাগার ব্যবহারকারীদের সহায়তা করা। গ্রন্থাগারের কর্মীরা প্রধানত যেসব কাজ সম্পাদন করে থাকেন সেগুলি হলো : বই নির্বাচন ও ক্রয়, বই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় (আক্ষরিক ও বিষয়ভিত্তিক) সাজানো, গ্রন্থাগার থেকে বই ইস্যু করার ব্যবস্থা, সুনির্দিষ্ট আগ্রহের ক্ষেত্রে পাঠককে পরামর্শ দান প্রভৃতি।
বাংলাদেশে গ্রন্থাগার
আমাদের দেশে সরকারি গ্রন্থাগার রয়েছে ৬৮টি, বেসরকারি গ্রন্থাগারের সংখ্যা প্রায় ৯০০। সরকারের বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত গ্রন্থাগারগুলো উল্লেখযোগ্য কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচি ও পুরস্কার প্রদান, গণ-উন্নয়ন পাঠাগারের পরিচালনায় ২৭টি গ্রন্থাগারসহ অন্যান্য গ্রন্থাগার পাঠাগার আন্দোলনে অবদান রেখে চলেছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার প্রকল্পও চালু করেছে।
উপসংহার
বর্তমান বিশ্বে গ্রন্থাগার শিক্ষাপ্রসারের অপরিহার্য অঙ্গ। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে গ্রন্থাগার অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারে। গ্রামের স্বল্পশিক্ষিতরা প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি পরবর্তী উচ্চশিক্ষার জ্ঞান আহরণ করতে পারে গ্রন্থাগারে এসে। তাই গ্রামে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা ও এর প্রসার ঘটানো উচিত। প্রতিটি স্কুল-কলেজে উন্নতমানের গ্রন্থাগার গড়ে তোলা দরকার। স্কুলে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা গেলে পাড়ায় পাড়ায় গ্রন্থাগার স্থাপন করা সহজ হবে। এতে সামাজিক অবক্ষয় রোধের পথ অনেকখানি প্রসারিত হবে।
তো কেমন লাগলো লেখাটি? এবার নিশ্চই গ্রন্থাগার অনুচ্ছেদ বা এ সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন পরীক্ষায় আসলে চোখ বন্ধ করে লিখে দিতে পারবে! এরকম আরও বিভিন্ন বিষয়ে লেখা পেতে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাও।