Home » দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা | রচনা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা | রচনা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

by Susmi
0 comment

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা বা রচনা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান এ সম্পর্কে প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় এসে থাকে। আজকের লেখায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তুলে ধরবো যাতে শিক্ষার্থী বন্ধুরা উপকৃত হতে পারে।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

সূচনা

বর্তমান যুগকে বলা হয় আধুনিক বিজ্ঞানের যুগ।  নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই বিজ্ঞান আমাদের কাছে অপরিহার্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবন বিজ্ঞান ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। এখন যেকোনো ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষই বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। সকালে ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত যাবতীয় কাজকর্মের মধ্যে বিজ্ঞানের অবদান লক্ষণীয়। তাই বলা যায়, বিজ্ঞানই এখন মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের নিয়ন্ত্রক।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

মানুষের একটি মুহূর্তও বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে কল্পনা করা যায় না। এখন প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদক্ষেপে আধুনিক মানুষ বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে জীবন-ধারণ করছে। এই যে আমি এই রচনাটি বসে লিখছি – আমার হাতের – কলম ও কালি, লেখার কাগজ, এমনকি বসার জায়গাটিতে পর্যন্ত বিজ্ঞানের প্রভাব রয়েছে। আমাদের পথে- ঘাটে, অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজে সব জায়গায়ই বিজ্ঞানের অবদান অসীম। শুধু তাই নয়, আমাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সমস্ত আধুনিক উপকরণ বিজ্ঞানেরই আশীর্বাদ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি কাজেই আমরা বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। বলা যায়, বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের জীবন অচল।

শহুরে জীবনে বিজ্ঞান

এখন আসি শহুরে জীবনে বিজ্ঞান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ শহরের মানুষ বিজ্ঞানের উপর কতটা নির্ভরশীল। বলতে গেলে, শহুরে জীবনে মানুষ আর বিজ্ঞান অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শহরে যে এলার্ম ঘড়ির শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙে, ঘুম থেকে উঠে যে টুথপেস্ট আর টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করি এসব কিছুই বিজ্ঞানের দান। এরপর আসা যাক সংবাদপত্রে । তারপর গ্যাস অথবা হিটার কিংবা স্টোভে তাড়াতাড়ি রান্না করে খাওয়া। রিক্সা, অটোরিক্সা, বাস, ট্রেন বা মোটরসাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে পৌঁছানো সবই বিজ্ঞানের দান। সিঁড়ির বদলে লিফটে উঠে অফিসকক্ষে যাওয়া, টেলিফোন, টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির সাহায্যে দূর-দূরান্তে খবর পাঠানো এসব কিছু বিজ্ঞান ছাড়া কল্পনাও করা যায় না।

কম্পিউটারে কাজের বিষয় লিখে রাখা, ক্লান্ত দেহটাকে আরাম দেওয়ার জন্য এসি কিংবা ইলেকট্রিক পাখার নিচে বসা – এই ভাবেই সারাদিন বিজ্ঞানের সাহায্যে আমরা জীবন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দিনের অবসন্নতা দূর করতে মিউজিক প্লেয়ার কিংবা টিভি চালিয়ে মনটাকে সতেজ রাখতে চেষ্টা, সেটাও বিজ্ঞানের অবদান। ছেলে-মেয়েরা কম্পিউটারে তাদের নোট রাখে; কখনো কখনো ভিডিও গেমস্ খেলে। এমনিভাবে জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই বিজ্ঞানের অবদান অনুভব করি। এককথায়, শহুরে জীবন পুরোটাই বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। শহুরে বিরাট বিরাট দালানকৌঠায় যে এত এত মানুষ বাস করে, তাও সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের বদৌলতে।

গ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞান

শহুরের তুলনায় গ্রামীণ জীবনে বিজ্ঞানের ছোঁয়া তুলনামূলক কম হলেও অস্বীকার করার জো নেই। দিনকে দিন বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীলতা তো বেড়েই চলেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই গ্রামীণ আর শহুরে জীবনের মধ্যে পার্থক্য কমে আসছে একমাত্র বিজ্ঞানের অবদানে। যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদানের জন্য মানুষ আজ দূরকে করেছে নিকট প্রতিবেশী। বাস, রিক্সা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল সবই এখন গ্রামীণ জীবনের অংশ। ফলে বিজ্ঞান শহরজীবনকে অতিক্রম করে পৌঁছে গেছে গ্রামেও।

আরও পড়ুন:   মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর রচনা | রচনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

বর্তমানে গ্রামীণ জীবনেও বিজ্ঞানের উপর নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, টিভি, রেডিও, মোবাইল ফোন, টর্চ, স্লো, সাবান, পাউডার, আয়না-চিরুনি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক দ্রব্য, ট্রাক্টর ইত্যাদি এখন গ্রামীণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে। শহরের মানুষ যেমন নিজেদের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে বিজ্ঞানকে নিত্যসঙ্গী করেছে, তেমনি গ্রামের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষের জীবনেও ইলেকট্রিক হিটার, রান্নার গ্যাস, প্রেসার কুকার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাবের অপকারিতা

বিজ্ঞান শুধুমাত্র যে উপকার বয়ে আনে তা নয়। কিছু ক্ষেত্রে কিছু কিছু অপকারিতা তৈরি হয় এর প্রভাবে। যেমন- দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা মানুষের অনেক ক্ষতি করছে। যন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর করতে গিয়ে মানুষ পরিশ্রম বিমুখ হয়ে উঠছে। এখন মানুষ শারীরিক পরিশ্রমের চাইতে মানসিক পরিশ্রম বেশি করছে। ফলে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষের জীবনে কৃত্রিমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের স্নেহ, মায়া, মমতার মতো সদ্গুণগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ছে। বিজ্ঞান-নির্ভর যন্ত্রশক্তির ওপর অত্যধিক নির্ভর করতে গিয়ে মানুষ যান্ত্রিক হয়ে উঠছে।

উপসংহার

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান আশীর্বাদস্বরুপ। সকাল থেকে সন্ধ্যা, আবার সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত যা কিছু আমাদের প্রয়োজনীয় তার সবই বিজ্ঞানের অবদান। বিজ্ঞান আজ আমাদের নিত্য সহচর। বিজ্ঞান আমাদের জীবন-যাপনকে করেছে স্বাচ্ছন্দ্যময়। তবে দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব শুধু যে কল্যাণ করছে তা নয়, অনেক ক্ষতিও করছে। আমরা একে কিভাবে ব্যবহার করছি তার উপরই নির্ভর করছে এটি আমাদের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর। তাই বিজ্ঞানের অপব্যবহার না করে কিভাবে একে ব্যবহার করে মানব কল্যাণ করা যায় সে বিষয়ে আমাদের সবার সচেতন হতে হবে।

আরও পড়ুন:   ট্রেনে ভ্রমণ রচনা | একটি ট্রেন ভ্রমণ | রেল ভ্রমণ

Related Posts