গ্রাম এলাকার সমস্যার সমাধান এবং উন্নয়নের জন্য যেমন ইউনিয়ন পরিষদ কাজ করে তেমনি শহর। এলাকার জনগণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান এবং উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য পৌরসভা গঠিত হয়। পৌরসভা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা যা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩১৩টি পৌরসভা রয়েছে। নিচে পৌরসভার কাজ এবং গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
পৌরসভার গঠন
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এবং পৌরসভা আইন অনুযায়ী ১ জন মেয়র, কয়েকজন কাউন্সিলর এবং কয়েকজন মহিলা কাউন্সিলর নিয়ে পৌরসভা গঠিত হয়। মেয়র, কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর সকলেই জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন।
স্থানীয় শাসন কাকে বলে ও স্থানীয় শাসনের গুরুত্ব |
সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির দ্বারা প্রত্যেক পৌরসভার জন্য যে নির্ধারিত সংখ্যক ওয়ার্ড করা হয় প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে ১ জন করে কাউন্সিলর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। নির্ধারিত সংখ্যক কাউন্সিলরের এক-তৃতীয়াংশ মহিলা কাউন্সিলর (সংরক্ষিত আসনে) জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। আর সমগ্র পৌরসভার ভোটারদের ভোটের মাধ্যমে একজন মেয়র নির্বাচিত হন। পৌরসভার কার্যকাল ৫ বছর।
পৌরসভার কাজ কি কি?
পৌরসভা পৌরবাসীর কল্যাণে বহুমুখী কার্য সম্পাদন করে। নিচে পৌরসভার কাজ গুলো কি কি তা তুলে ধরা হলো-
১. জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজ
পৌরসভা নিজ নিজ পৌর এলাকায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্দেশ্যে যে সকল কাজ করে তাহলো-
ক. পৌরবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা।
খ. ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা।
গ. পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।
ঘ. সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ঙ. মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করা।
চ. স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল, মাতৃসদন, শিশুমঙ্গল কেন্দ্র নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
২. শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করা
পৌর এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনের মাধ্যমেও শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
৩. উন্নয়নমূলক কাজ
পৌরসভা উন্নয়নমূলক নিম্নোক্ত কাজ করে-
ক. জনসাধারণের জন্য খোলা মাঠ, উদ্যান, পার্ক, খেলার মাঠ নির্মাণ ও সংরক্ষণ করা।
খ. রাস্তাঘাট নির্মাণ, মেরামত ও সংরক্ষণ করা।
গ. রাস্তাঘাট, ড্রেন পরিষ্কার রাখা এবং মৃত জন্তুর দেহ অপসারণ করা।
ঘ. বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
ঙ. সাধারণ মিলনায়তন সংরক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করা।
চ. জাতীয় দিবসসমূহ উদ্যাপন করা।
ছ. পাঠাগার ও ক্লাব স্থাপন করা।
জ. বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি দুর্যোগে দুর্গতদের সেবার ব্যবস্থা করা।
ঝ. কুটির শিল্পের উন্নতি সাধন এবং সমবায় আন্দোলন জোরদার করা।
ঞ. এতিম, দুঃস্থ, বিধবা, বয়স্কদের সাহায্য করা।
ট. ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধের ব্যবস্থা করা।
ঠ. পৌরবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।
ড. প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা।
ঢ. নারী, শিশু, দুঃস্থ সকলের জন্য কল্যাণমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা।
গ. জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইন কার্যকর করা।
৪. শিক্ষামূলক কাজ
পৌর এলাকার শিক্ষার উন্নয়নের জন্য পৌরসভা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান বইপুস্তক সরবরাহের মাধ্যমে সরকারের শিক্ষা কর্মসূচিকে সফল করার জন্য প্রয়াস চালায়।
৫. সংস্কৃতি ও বিনোদনমূলক কাজ
পৌরসভা শহরবাসীর বিনোদনের জন্য পার্ক, উদ্যান, মিলনায়তন, জাদুঘর, রেডিও, টেলিভিশন সরবরাহ, ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজ করে।
৬. জননিরাপত্তা বিধান
পৌর এলাকার জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য নৈশ প্রহরী নিয়োগ, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ, কবরস্থান, শাশান নির্মাণ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পৌরসভা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বলতে কি বুঝায়? স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন কেন প্রয়োজন? |
৭. সামাজিক বনায়ন
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং সামাজিক বনায়নের লক্ষ্যে পৌরসভা ব্যাপকভিত্তিতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। শহরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য রাস্তার দু পাশে বৃক্ষরোপণ, উদ্যান তৈরি ও সংরক্ষণ করে।
৮. বিচারিক কাজ
পৌর এলাকার জনগণের ছোট ছোট বিবাদের মীমাংসার জন্য পৌরসভা সালিসি আদালত হিসেবে কাজ করে। পৌর মেয়র সালিসি আদালতের প্রধান। এছাড়া পৌর মেয়র বা যে কোনো কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিচারও পৌরসভা করে।