Home » বাংলাদেশের বন্যা রচনা (১০০% কমন) সকল ক্লাশের জন্য
বাংলাদেশের বন্যা রচনা, বাংলাদেশের বন্য, রচনা বাংলাদেশের বন্যা,

বাংলাদেশের বন্যা রচনা (১০০% কমন) সকল ক্লাশের জন্য

by Susmi
1 comment

বাংলাদেশের বন্যা

ভূমিকা

ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও জনসংখ্যা বিস্ফোরণ যেমন বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য, ঠিক তেমনি প্রতিবছর বন্যাকবলিত হওয়াও বাংলাদেশের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো কখনো অত্যধিক বৃষ্টিপাতের ফলে জলস্ফীতি দেখা দেয়, নদ নদীতেও প্লাবন আসে। বর্ষা আর প্লাবনের এই অস্বাভাবিক অবস্থাই বন্যা । প্রতিবছর খালবিল, নদীনালা প্লাবিত হয়ে গ্রামের পর গ্রাম ডুবে যায়। এদেশে প্রতিবছর বন্যার ফলে কোনো না কোনো অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থার চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়- দুঃখ দুর্গতিতে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ সমস্যা দূর করতে না পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

১০০১ মুসলিম আবিষ্কার (মুসলিম সভ্যতার অনন্য গৌরবগাথা): সেলিম টি এস আল-হাসসানি - 1001 Muslim Abishkar: Salim T.S. Al-Hassani

TK. 1,200 TK. 840

বন্যার স্বরূপ

বাংলাদেশে প্রায় বছরই বন্যা দেখা দেয়। বন্যার রূপও বড় ভয়ঙ্কর। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। গাছপালা ঘরবাড়ির চিহ্ন দেখা যায় না। অত্যধিক বৃষ্টিপাতের ফলে জলস্ফীতি দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে নদনদীতেও প্লাবন আসে। বর্ষা আর প্লাবনের এই অস্বাভাবিক অবস্থাই বন্যা। পানিতে ভেসে যায় ঘরের চালা, পশুর মৃতদেহ আর মানুষের গলিত শবদেহ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বন্যা দেখা দেয়, যার ফলে ভয়াবহ পরিণতি ঘটিয়ে মানবজীবনের চরম দুর্গতি সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে প্রতিবছর বন্যার ফলে কোনো না কোনো অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থার চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়- দুঃখ দুর্গতিতে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

অন্যান্য রচনা:

বাংলাদেশের নদনদী রচনা 

রূপসী বাংলাদেশ রচনা (৮০০ শব্দ)

শীতের সকাল রচনা

বন্যার খতিয়ান

বাংলাদেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে প্রতিবছর বন্যা দেখা দেয়। ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনেক ভয়ঙ্কর বন্যা হয়ে গেছে বাংলাদেশের বুকে। ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৭, ১৯৫৯, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালের বন্যার ধ্বংসলীলা ছিল অত্যন্ত ব্যাপক। বিশেষ করে ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহতম বন্যা। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৩টি জেলার ৩৫১টি উপজেলা এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ২৭৫০ জন লোক প্রাণ হারায় এবং নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় পাঁচ কোটি লোক। ১৯৯৮ সালের বন্যায় চব্বিশ হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় এবং আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পঁচিশ লাখ ঘর বাড়ি। সোয়া লাখ গবাদি পশুর প্রাণহানি ঘটে। সেই বন্যায় মোট ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

বন্যার কারণসমূহ

বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ। এ দেশটি নদী অববাহিকা অঞ্চলে অবস্থিত। এর দক্ষিণ প্রান্তে আছে বিশাল বঙ্গোপসাগর। উত্তর থেকে এর ভূমি কম বেশি ঢালু হয়ে নেমে গেছে দক্ষিণ দিকে। বিশাল এবং সুদীর্ঘ তিনটি নদী গ্যা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত হলেও তাদের পানি প্রবাহের চূড়ান্ত এবং সর্বশেষ আধার হচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদী মেঘনা, যমুনা ও পদ্মা- সবগুলোরই উৎপত্তিস্থল ভারত। মূলত এ তিন নদীর পানি প্রবাহের পরিমাণের হ্রাস বৃদ্ধির ওপরই বাংলাদেশের বন্যা নির্ভরশীল। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত ও হিমালয়ের বরফগলা পানির আধিক্য বাংলাদেশে বন্যা সৃষ্টির অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশের ভূমির উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢালুর পরিমাণ বেশি নয় এবং বাংলাদেশ গড়ে সমুদ্র তটের তুলনায় মাত্র ৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। তাই এখানকার নদীগুলোর পলি বহন ক্ষমতা খুবই কম। ফলে প্রতিবছর নদীবক্ষে পলি জমাট হয়ে নদীর গভীরতা কমে যায়। ক্রমবর্ধমান মানুষ সমস্ত জায়গা ভরাট করে তাতে তৈরি করেছে শহর নগর ও নতুন নতুন বাড়িঘর। ফলে জলপ্রবাহের অনেক পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রকৃতিও এর প্রতিশোধ নিচ্ছে বন্যার সৃষ্টি করে। যে বন্যা ছিল স্বাভাবিক, সে বন্যা এখন হয়ে পড়েছে অস্বাভাবিক, নিষ্ঠুর ও নিয়ন্ত্রণাতীত।

বন্যায় সৃষ্ট অসুবিধাসমূহ

বন্যা যে বাংলাদেশের মানুষের কত ভয়াবহ অসুবিধা সৃষ্টি করে তা কেবল ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। ভুক্তভোগী ছাড়া বন্যার করুণ রূপ অনুভব করা কঠিন বিষয়। বন্যা যখন তার স্বাভাবিক মাত্রা অতিক্রম করে যায় তখন তার প্রতিক্রিয়া হয় খুবই মারাত্মক। জমির ফসল, ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। অনাহারে মানুষ ও গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে এবং বন্যা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে পড়ে মহামারী, রোগব্যাধি। ছান্দসিক কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালি সম্পর্কে লিখেছেন, “বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি।” আজ আর সে বাঘ নেই। তার বদলে আছে বন্যা। বাঘের চেয়ে সে কম ভয়ঙ্কর নয়।

বন্যার সুফল

বাংলাদেশে বন্যার ক্ষতিকর দিকটা বেশি হলেও এর কিছু সুফলও আছে। বন্যার পানির স্রোতে প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি এসে জমিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং জমি উর্বর হয়। ফলে বন্যা পরবর্তীকালে জমিতে প্রচুর ফসল ফলে। তাছাড়া সারা বছর ধরে যে সমস্ত ময়লা আবর্জনা জমা হয়, বন্যা সেগুলো ধুয়ে মুছে নিয়ে যায়। তাতে দেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়। বন্যার আরও একটা উপকারিতা হচ্ছে, এ সময়ে নদীনালা, খালবিল, হাওড়বাঁওড় ও পুকুরডোবায় মাছ এসে পরিপূর্ণ হয়।

বন্যা সমস্যার সমাধান

বাংলাদেশে বন্যা সমস্যা বিশ্লেষণে যেসব মৌলিক কারণ নির্ণীত হয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভর নয়। অবশ্য একথাও ঠিক যে, বন্যা সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়। তবে আংশিক প্রতিকার বা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। যেমন-

১. পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে ছড়িয়ে দেওয়া: যেসব স্থানে বন্যার পানি এক থেকে তিন ফুটের মধ্যে অবস্থান করে সেসব স্থানে ঘরবাড়ি, বসতি স্থাপন না করে সেখানে প্রতিবছর বন্যার স্বাভাবিক প্রবাহকে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।

২. পানি নিষ্কাশন পথের উন্নয়ন: বর্ষা মৌসুমের বাড়তি পানি যেসব নদীনালা, খালবিল, শাখানদী ইত্যাদির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় সেগুলোর নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ, এভাবে বর্ষার অতিরিক্ত পানিকে চারদিকে ছড়িয়ে প্রবাহিত করে বন্যা সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যেতে পারে।

৩. সাধারণ বাঁধ নির্মাণ: নদীর উপচানো পানি যাতে তীরবর্তী এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যে স্থানবিশেষে মাটি, পাথর, সিমেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে এ ধরনের বাঁধ নির্মাণ করা যায়। এভাবেও বন্যাকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৪ . নাব্যতা বৃদ্ধিকরণ: প্রাকৃতিক কারণে আমাদের দেশের অধিকাংশ নদ নদী ভরাট হয়ে নাব্যতা হারাতে বসেছে। ফলে বন্যার পানি নদীপথে সাগরে যেতে পারছে না। প্রয়োজনীয় খাল খনন কর্মসূচি সম্পন্ন করা গেলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। আর তাহলে বন্যার প্রকোপ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।

উপসংহার

বন্যার কতকগুলো কারণ নিতান্তই নৈসর্গিক। এগুলো পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বন্যার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অবশ্য দুঃসাধ্য ব্যাপার নয়। বন্যার প্রধান কারণ প্রবল পানি সমৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থার অভাব। এ যুগ বিজ্ঞানের যুগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়ে এখন আর বসে থাকলে চলে না। বিজ্ঞান বুদ্ধির প্রয়োগের মাধ্যমে যেকোনো দুর্যোগ এখন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

Related Posts

1 comment

বসন্তকাল রচনা ক্লাস 6, 7, 8 (১০০% কমন) December 8, 2023 - 7:56 pm

[…] বাংলাদেশের বন্যা রচনা […]

Comments are closed.