সমাজ বিবর্তনের চরম পর্যায় বা শেষ ধাপ হচ্ছে শিল্প সমাজ, যাকে আমরা আধুনিক সমাজ বলে থাকি। শিল্প সমাজ মানব জীবনে এক নতুন দিগন্ত রচনা করেছে। ১৮ শতাব্দীতে গ্রেট ব্রিটেনে শিল্প সমাজের সৃষ্টি হয়। উদ্যান সমাজ থেকে শুরু করে কৃষি সমাজ পর্যন্ত প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন শক্তির প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যার উন্নয়নের ফলশ্রুতিই হচ্ছে শিল্প সমাজ। শিল্প উৎপাদনের পেছনে কাজ করেছে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, মানুষ এবং প্রাণীর ব্যবহৃত শক্তির পরিবর্তন ঘটিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল। কয়লা পুড়িয়ে বাষ্পীয় শক্তি, বিদ্যুৎ এবং পরবর্তীতে আণবিক শক্তি যা ব্যবহৃত হচ্ছে কলকারখানায় আর তারই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে অধিক উৎপাদন। মানুষ পূর্বে যা হাতে করতো বা অন্য প্রাণীর সাহায্য নিয়ে জীবনযাপনের উপযোগী উৎপাদন ব্যবস্থা চালু করেছিল, সেগুলো এখন রূপান্তরিত হয়েছে প্রযুক্তিতে।
আরও পড়ুন: সমাজ কত প্রকার ও কি কি?
অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে, আমেরিকায় ও পরে অন্যত্র উৎপাদন ব্যবস্থায় যে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটল এর ফলে সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থায় আমূল পরিবর্তন দেখা দিল। প্রখ্যাত ইংরেজি ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবি এ আমূল পরিবর্তনকে শিল্পবিপ্লব নামে আখ্যায়িত করেন। ১৭৬৯ সালে জেমস ওয়াট (James Watt) বাষ্পীয় শক্তি আবিষ্কার করেন। বাষ্পীয় শক্তি আবিষ্কারের পর যন্ত্র যুগের দ্রুত বিকাশ হতে লাগলো। এতে যেমন বৃদ্ধি পেল বিবিধ শিল্পজাত দ্রব্যের উৎপাদন, তেমনি বৃদ্ধি হলো আমদানি ও রপ্তানি দ্রব্যের পরিমাণ। শিল্পজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে বণিক শ্রেণি সমাজে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে বসলো। ফলে, সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো পুঁজিপতিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে লাগলো। বৃহৎ শিল্পের মালিকানা লাভের সাথে সাথে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ তাদের অধিকারে চলে গেল। সমাজে এল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যান্ত্রিক উৎপাদন এবং এখানেই শ্রম শিল্পবিপ্লবের সৃষ্টি হয়।
শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে যে সমাজ গড়ে ওঠেছে তাই শিল্প সমাজ। সমাজ বিবর্তনের সর্বশেষ স্তর হচ্ছে শিল্প সমাজ। এ সমাজের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে শিল্পভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা। বিশেষ করে যান্ত্রিক ও স্বয়ংক্রিয় শিল্প, কলকারখানা মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে ব্যাপক উৎপাদন করে। শিল্পসমাজ প্রযুক্তিগত দিক থেকে কৃষিসমাজ থেকে উন্নততর। অষ্টাদশ শতাব্দি পর্যন্ত কৃষি যুগের একাধিপত্য বিরাজমান ছিল। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দির গোড়া থেকেই উৎপাদনের শিল্পের অভূতপূর্ব সাফল্য এবং ক্রমবিকাশ শিল্প সমাজকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মার্কসীয় এবং অমার্কসীয় উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই শিল্প সমাজে মানুষের প্রয়োজনীয় সকল বস্তু উৎপাদান, বিতরণ ও ভোগের বিষয়টি প্রায় সম্পূর্ণ ও প্রত্যক্ষভাবে শিল্পোৎপাদনের উপর নির্ভরশীল।