অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কাকে বলে
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির আরেক নাম অনালী গ্রন্থি। যেসব গ্রন্থির ক্ষরণ কোন নালীর ভিতর দিয়ে না গিয়ে সরাসরি রক্তস্রোতের সাথে মিশে যায়, সেসব গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন যেসব কলা বা গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়, সেসব গ্রন্থিকে বলা হয় অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। অর্থাৎ প্রাণিদেহে যেসব নালীবিহীন গ্রন্থি থেকে হরমোন নামক জৈব জটিল রাসায়নিক তরল পদার্থ উৎপন্ন হয়ে সরাসরি রক্তে মিশে যায় এবং দেহের স্বাভাবিক নানাবিধ শারীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে, হরমোন নিঃস্বরণকারী সেসব গ্রন্থিগুলোকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (Endocrine Gland) বলে। একে অনালী বা নালীহীন গ্রন্থিও বলা হয়।
গ্রন্থি কি | গ্রন্থি কত প্রকার ও কি কি? |
অনালী গ্রন্থি সম্পর্কে C. T. Morgan বলেছেন, “The ductless glands put their secretions directly into the blood became they are circulated in the blood, secretions of ductless glands have a more profound effect on the body as a whole and no nervous activity in particular.”
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলো দেহের বিভিন্ন অংশে উপস্থিত রয়েছে। গ্রন্থিগুলো থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরের গড়ন, বৃদ্ধি ও অন্যান্য বহু প্রয়োজনীয় ক্রিয়া সাধন করে থাকে। এদের অভাবে মানুষ ও প্রাণীর দৈহিক বিকাশ ও আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
E. R. Hilgard এর মতে, “The endocrine glands by way of the hormones secreted into the blood stream are important for aspects of behaviour concerned with emotion, motivation and personality.”
সুতরাং অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি আচরণের জৈবিক ভিত্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই গ্রন্থির অভাব পূরণের জন্য ইনজেকশন বা অন্য কোন উপায়ে নির্দিষ্ট হরমোনের অভাব পূরণ করতে হয়। মানবদেহে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিসমূহ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- পিটুইটারি গ্রন্থি, থাইরয়েড গ্রন্থি, প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি, থাইমাস গ্রন্থি, অ্যাজিনাল গ্রন্থি, থাইমাস গ্রন্থি, যৌন গ্রন্থি বা গোমাড, প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় প্রভৃতি।
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থির পার্থক্য
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থি দুটিই মানবদেহের গ্রন্থি। উভয়ের মধ্যে কতিপয় দিকে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থির পার্থক্য ছক আকারে দেখানো হলো:
বহিঃক্ষরা গ্রন্থি | অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি |
১. যেসব গ্রন্থির ক্ষরণ পরিবহনের জন্য নিজস্ব নালী থাকে এবং উৎপত্তিস্থলের অদূরেই বহন করে তাদের বহিঃক্ষরা গ্রন্থি বলে। | ১. অন্যদিকে, যেসব গ্রন্থির ক্ষরণ কোন নালীর ভিতর দিয়ে না গিয়ে সরাসরি রক্তস্রোতের সাথে মিশে যায় সেসব গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলে। |
২. বহিঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত বস্তু বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- দুধ, ঘাম, এনজাইম প্রভৃতি। | ২. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত বস্তুর নাম হরমোন। |
৩. বহিঃক্ষরা গ্রন্থিসমূহ হচ্ছে ঘর্মগ্রন্থি, অশ্রুগ্রন্থি, স্তনগ্রন্থি, লালাগ্রন্থি, যকৃত, পরিপাকগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয়, মূত্রগ্রন্থি প্রভৃতি। | ৩. অন্যদিকে, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিসমূহ হচ্ছে পিটুইটারি গ্রন্থি, প্যারাথাইরয়েড, থাইরয়েড, এড্রিনাল, যৌনগ্রন্থি, থাইমাস, প্যানোক্রিয়াস, পিনিয়াল গ্রন্থি প্রভৃতি। |
৪. ক্ষরিত বস্তু সরাসরি প্রবাহিত হয় না। | ৪. অপরপক্ষে, ক্ষরিত বস্তু সরাসরি ক্ষরিত হয়। |
৫. বহিঃক্ষরা গ্রন্থিসমূহ থেকে নিঃসৃত রসের কাজ সাধারণত হরমোন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। | ৫. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরের উপর পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলে। |
৬. এর কাজ অল্পক্ষণ স্থায়ী হয়। | ৬. এর কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী। |
নিউরন কি | নিউরন এর কাজ ও প্রকারভেদ |