Home » জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাজারজাতকরণের ভূমিকা আলোচনা কর
জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাজারজাতকরণের ভূমিকা,

জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাজারজাতকরণের ভূমিকা আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

বাজারজাতকরণ কীভাবে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে তা নিম্নে আলোচিত হলো:

(১) অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা (Maintaining economic stability)

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সুস্থ অর্থনৈতিক বিকাশের ধারা নিশ্চিত করে। গ্রাহকদের প্রয়োজন ও পছন্দ উৎপাদককে অবহিত করে এবং ভোক্তাদেরকে পণ্য সংক্রান্ত সংবাদ জানিয়ে মার্কেটিং অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটা ভারসাম্য রক্ষা করে। এভাবে উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়ের প্রয়োজন মিটিয়ে মার্কেটিং একটি দেশের অর্থনৈতিক জীবন স্থিতিশীল রাখে। অর্থনৈতিক স্থিতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত দেশের জনগণ উচ্চ জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে পারে।

(২) চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমতাবিধান (Balancing between demand and supply)

বিপণনে নিযুক্ত ব্যক্তিরা গ্রাহকদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকে বলে তারা গ্রাহকদের চাহিদার প্রকৃতি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারে এবং তদনুযায়ী উৎপাদকগণকে তথ্য সরবরাহ করে। উৎপাদকগণ সেই তথ্যের ভিত্তিতে চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য উৎপাদনে আত্মনিয়োগ করতে পারে। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে এই ভারসাম্য উৎপাদনে মিতব্যয়িতা আনতে সহায়তা করে। ফলে উৎপাদক হ্রাসকৃত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। ভোক্তারাও কম মূল্যে অধিক পরিমাণে পণ্য ভোগ করে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।

(৩) বৃহদায়তন উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান (Encouraging large-scale production)

বৃহদায়তন উৎপাদন মার্কেটিং-এর উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। মার্কেটিং ব্যবস্থা দক্ষ না হলে বেশি পরিমাণে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করা সম্ভব হয় না। আবার পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হলে পণ্যের মূল্য হ্রাস করা অসম্ভব। তাই দক্ষ মার্কেটিং ব্যবস্থা ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে বৃহদায়তন উৎপাদনের পথ প্রশস্ত করে, পণ্যের মূল্য হ্রাস করে এবং ভোক্তাদের জীবন ধারণের মান উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করার রাস্তা সুগম করে।

(৪) বহু সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান (Employing large number of people)

মার্কেটিং অগণিত লোকের জীবিকার ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন প্রকার মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান, মধ্যস্থকারবারি, পরিবহন, সংরক্ষণাগার ইত্যাদিতে বহু লোকের কর্মসংস্থান হয়। লোকজন বেকার থাকলে তাদের আয় থাকে না। আয় না থাকলে তারা পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারে না। ফলে ভোগ ও উৎপাদন উভয় ক্ষেত্রে প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়। মার্কেটিং বিভিন্নভাবে বহু সংখ্যক লোকের আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়ে ভোক্তা হিসেবে তাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। এরা এদের উপার্জিত আয় পণ্যদ্রব্য ক্রয়ের জন্যে ব্যবহার করে জীবন ধারণের মান বৃদ্ধিতে সচেষ্ট থাকে।

(৫) সংরক্ষণ সুবিধার প্রসার (Expansion of storing facilities)

মার্কেটিং সংরক্ষণ সুবিধা সৃষ্টি করেও এর প্রসার ঘটায়। সংরক্ষণাগার থাকার দরুন পণ্যদ্রব্য বহুদিন যাবৎ ধরে রাখা যায়। এতে মূল্যে স্থিতিশিলতা বাজায় থাকে যা জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতদ্ব্যতীত, হিমাগারের উন্নয়নের ফলে পচনশীল দ্রব্য সারা বছরব্যাপী ব্যবহার করা যায়। এ জাতীয় দ্রব্য ভোগের ক্ষেত্রে আজকাল আর তেমন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় না। মৌসুমি পণ্য সংরক্ষণ করে এবং হিমায়িত পচনশীল পণ্য অক্ষত অবস্থায় দূর দূরান্তের ভোক্তাদের হাতে পৌছিয়ে দিয়ে মার্কেটিং জীবন ধারণের মান বৃদ্ধিতে অহরহ সহায়তা করছে।

(৬) স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি (Creating place utilities)

একস্থান থেকে আরেক স্থানে পণ্য পরিবহন করে মার্কেটিং স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করে এবং জনসাধারণের নিকট পণ্যসামগ্রী সুলভ করে তোলে। পরিবহন ও অন্যান্য মার্কেটিং কার্যাবলি না থাকলে দেশের এক প্রান্তের লোকজন অন্য প্রান্তে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ভোগ করতে পারত না। মার্কেটিং ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পণ্যদ্রব্য সুলভ থাকার ফলে জনগণ তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।

(৭) আন্তর্জাতিক বাজারের পরিধি সম্প্রসারণ (Broadening international marketing)

আজকাল পণ্য উৎপাদনে দেশে বিদেশে বিশেষায়নের উদ্ভব হয়েছে। সব দেশই এখন সেসব পণ্যই উৎপাদন করে যেগুলো তারা সহজে ও সুবিধাজনক উপায়ে উৎপাদন করতে পারে। উদ্বৃত্ত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে তারা অন্যান্য সামগ্রী (যা নিজে উৎপাদন করে না) বিদেশ থেকে আমদানি করে প্রয়োজন মেটায়। উৎপাদনে এরূপ বিশেষায়নের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটছে। বর্তমানে সব দেশই বিদেশি উন্নতমানের পণ্য আমদানি করে প্রয়োজনমতো ভোগ করতে পারে। আবার পণ্য রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা সম্ভব যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা জীবন ধারণের মান উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, মার্কেটিং জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আর বর্ধিত মাথাপিছু আয় জীবন ধারণের মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মার্কেটিং পণ্যসামগ্রী প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করে, ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি করে, সুবিধাজনক স্থানে পণ্য সহজলভ্য করে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রেখে জনগণের আরাম আয়েশে উৎকর্ষতা আনায়ন করে। তাই মার্কেটিংকে নিঃসন্দেহে আমরা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সহায়ক আখ্যা দিতে পারি।

মার্কেটিং এর বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর

Related Posts