Home » নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রকারভেদ আলোচনা কর
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রকারভেদ

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রকারভেদ আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

এর আগের লেখায় আমরা নিরীক্ষা প্রতিবেদন সম্পর্কে জেনেছি। আজকের লেখায় জানবো নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রকারভেদ। চলুন দেরি না করে জেনে আসি।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রকারভেদ

নিরীক্ষা কাজ সমাপ্ত হলে নিরীক্ষককে প্রতিষ্ঠানের মালিক বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট তার মতামত সম্মলিত একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়। নিরীক্ষার কাজ সম্পাদন করার সময় নিরীক্ষক যেভাবে তথ্য পাবেন ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন তার প্রতিবেদনও সেরূপ হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন মূলতঃ চার প্রকার। যেমন-
(১) শর্তহীন নিরীক্ষা প্রতিবেদন;
(২) শর্ত সাপেক্ষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন;
(৩) অক্ষমতাজ্ঞাপক নিরীক্ষা প্রতিবেদন;
(৪) প্রতিকূল নিরীক্ষা প্রতিবেদন।
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার প্রতিবেদন সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ

শর্তহীন নিরীক্ষা প্রতিবেদন

প্রতিষ্ঠানের আয় বিবরণী বা লাভ-ক্ষতি হিসাব এবং উদ্বর্তপত্রে স্পষ্ট চিত্র প্রকাশিত হয়েছে কিনা- এ সম্পর্কে নিরীক্ষককে তার প্রতিবেদনে মতামত প্রকাশ করতে হয়। যে সকল ক্ষেত্রে নিরীক্ষক কোন বিরুপ মন্তব্য না করে বা কোন প্রকার শর্ত আরোপ না করে প্রতিবেদনে তাঁর মতামত প্রদান করেন সে প্রতিবেদনকে শর্তহীন প্রতিবেদন বলে। নিরীক্ষক যখন সন্তুষ্ট হন যে সঠিক ও নির্ভুলভাবে প্রতিষ্ঠানের হিসাব প্রস্তুত করা হয়েছে এবং উদ্বর্তপত্রে কারবারের প্রকৃত অবস্থা সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তখন তিনি এরূপ শর্তহীন প্রতিবেদন প্রদান করেন।

শর্তসাপেক্ষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন

প্রতিষ্ঠানের উন্নতপত্র এবং লাভ-ক্ষতি হিসাব বা আয় বিবরণী সম্পর্কে নিরীক্ষক তাঁর মন্তব্য প্রদান করে এবং কোন শর্ত আরোপ করে যে প্রতিবেদন পেশ করেন তাকে শর্তসাপেক্ষ প্রতিবেদন বলে। নিরীক্ষক যখন প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিরীক্ষা করে সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট না হন অথবা দেখেন যে, প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী হিসাব প্রস্তুত করা হয়নি অথবা বিশ্বাস করেন যে, উদ্বর্তপত্রে কারবারের প্রকৃত অবস্থা প্রতিফলিত হয়নি, তখন তিনি যে সমস্ত কারণে সন্তুষ্ট হতে পারেননি সে সমস্ত কারণ উল্লেখপূর্বক এ প্রতিবেদন প্রদান করেন।
কোম্পানি আইনের বিধান অনুযায়ী নিরীক্ষককে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে তার প্রতিবেদনে মতামত ব্যক্ত করতে হয়। হিসাব সম্পর্কে কোন আপত্তির কথা মালিককে বা পরিচালকমন্ডলীকে জানানো সত্ত্বেও তারা যদি সে ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন বা করতে সম্মত না হন তাহলে নিরীক্ষক অবশ্যই শর্তসাপেক্ষ প্রতিবেদন পেশ করবেন। নিরীক্ষক যেক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষ প্রতিবেদন দাখিল করবেন সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হল-
(১) প্রতিবেদনটি যে কারণে শর্তসাপেক্ষ হবে, সেই কারণটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে যাতে সমস্ত সদস্য সেটি সহজেই বুঝতে পারে।
(২) প্রতিবেদনটি অবশ্যই বিষয়বস্তুমুখী ও সংক্ষিপ্ত হতে হবে।
(৩) প্রতিবেদনটি এমনভাবে ধ্যর্থহীন ভাষায় লিখতে হবে যাতে সেটি যে শর্তসাপেক্ষ তা বুঝতে কারও যেন অসুবিধা না হয়।

অক্ষমতাজ্ঞাপন নিরীক্ষা প্রতিবেদন

হিসাবে প্রকাশিত তথ্যাদি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ এবং নিরীক্ষকের মধ্যে মত পার্থক্য থাকলে এবং এ সম্পর্কিত কোন দায়িত্ব নিরীক্ষক গ্রহণ না করে মতামত পানে অক্ষমতা জ্ঞাপন করে যে প্রতিবেদন পেশ করেন তাকে মতামতদানে অক্ষমতা জ্ঞাপক প্রতিবেদন বলা হয়। নিরীক্ষক কি কারণে প্রতিবেদনে মতমত দিতে অক্ষম হলেন তা উল্লেখ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংবাদ ও তথ্য বা ব্যাখ্যা না পেলে বা কোন সম্পত্তির অস্তিত্ব নিরুপণ ও মূল্যায়ন পরীক্ষা নিরীক্ষকের পক্ষে সম্ভব না হলে এসব কারণ উল্লেখ করে নিরীক্ষক প্রতিবেদনে লিখবেন যে, হিসাবাদিতে কারবারের যথার্থ ও সঙ্গত আর্থিক অবস্থা প্রকাশিত হয়েছে কি না সে সম্পর্কে তিনি মতামত প্রদানে অক্ষম ।

প্রতিকূল নিরীক্ষা প্রতিবেদন

প্রতিষ্ঠানের হিসাবাদিতে সত্য ও যথার্থ অবস্থা প্রকাশিত হয়নি এরূপ মতামত প্রদান করে নিরীক্ষক যে প্রতিবেদন পেশ করেন তাকে প্রতিকূল প্রতিবেদন বলে। এ প্রকার প্রতিবেদন প্রস্তুত করবার পূর্বে নিরীক্ষককে নিশ্চিত হতে হবে যে, তিনি তার মতামত প্রদান করবার জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য পেশ করতে পারবেন। যেমন, প্রতিষ্ঠানের দেনাদারদের একটি বৃহৎ অংশ দীর্ঘদিন যাবৎ অনাদায়ী পড়ে থাকলে এবং এর জন্য কোন ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, নিরীক্ষক এই কারণ উল্লেখ করে প্রতিকূল প্রতিবেদন পেশ করেন।

Related Posts