Home » বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা
বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা

বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা

by Susmi
0 comment

বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা বা বর্ষাকাল রচনা পরীক্ষায় আসলে তোমরা এই রচনাটি লিখতে পারবে। তো দেরি না করে ঝটপট এটা নোট করে নাও।

বর্ষায় বাংলাদেশ

ভূমিকা

বর্ষা বাংলাদেশের আনন্দ-বেদনার এক ঋতু। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দহন শেষে বর্ষা আসে প্রকৃতির আশীর্বাদ হয়ে। একটানা বর্ষণের পর পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন জেগে ওঠে। বাংলার নিসর্গলোক সজীব হয়ে ওঠে। বর্ষার আগমনে তাই বাংলার প্রকৃতির রূপও পালটে যায়। বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে গ্রীষ্মের বিবর্ণ প্রকৃতি হয়ে ওঠে কোমল আর সঙ্গীর। এ সময় আকাশে সারাক্ষণ চলে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা। এমন দিনে কোনো কাজে মন বসে না। বর্ষাঋতুকে নিয়ে কবি লিখেছেন –

“ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে
জল সিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ রভসে
ঘন-গৌরবে নবযৌবনা বরষা
শ্যাম-গম্ভীর সরসা।”

বাংলার প্রকৃতিতে বর্ষাকাল

ঋতুর গণনা হিসেবে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। কিন্তু বর্ষার বৃষ্টি শুরু হয়। বৈশাখ থেকে, চলে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত। সেই হিসেবে বর্ষা বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঋতু। অনেক সময় দেখা যায় শরৎকালকে স্পর্শ করেও বৃষ্টির কোনো বিরাম নেই। বর্ষার আগমনে ভূষিত পৃথিবী সিক্ত-শীতল হয়ে যায়। মানুষ, জীবজন্তু, গাছপালা, পশুপাখি সব যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। নদীনালা, খালবিল, মাঠঘাট পানিতে ভরপুর হয়ে যায়। ফোর্টে ক্লেয়া, কদম ফুল। বর্ষা বাংলাদেশের মানুষের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। গাছপালা নতুন পত্রপল্লবে ভরে যায়, উর্বর হয়ে ওঠে ফসলের খেত। সুখী গৃহবাসী মানুষের কাছে বর্ষার এই ভরভরন্ত দৃশ্য খুবই আনন্দের। ছোট ছেলেমেয়েরা কলার ভেলা বা কেয়াপাতার নৌকা ভাসিয়ে আনন্দ করে। বৃদ্ধরা ঘরে বসে পান-তামাক খায়। কেউবা খোশ গল্পে মেতে ওঠে।

বর্ষাঋতু সাধারণ দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য খুবই দুঃখের। কারণ, অনেক সময় টানা বর্ষণে খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে পারে না। তাদের আয়-রোজগার বন্ধ থাকে, ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে ভেসে যায়। ফলে তাদের দুঃখ-কষ্টের সীমা থাকে না। অতিবৃষ্টির ফলে নদীভাঙনে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। কৃষকের ফসলের জমি ভেসে যায়, খেতের ফসল নষ্ট হয়। বানভাসি মানুষের এসব অবর্ণনীয় কষ্ট দেখলে মনে হয়, বর্ষা এসব মানুষের জীবনে দুর্যোগ ও দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে।

বর্ষার রূপ

বর্ষা শুধুমাত্র দুর্ভোগ নিয়ে আসে না। বর্ষায় বাংলাদেশের প্রকৃতির রূপ অন্যরকম হয়ে যায়। আকাশে ঘনকালো মেঘের আনাগোনা চলতে থাকে। কখনো-বা আকাশ অন্ধকার করে বৃষ্টি নামে। দু’তিন দিন হয়তো সূর্যের দেখাই মেলে না। কখনো কখনো শোনা যায় মেঘের গর্জন। একটানা বৃষ্টিতে কোথাও হঠাৎ বাজ পড়ার শব্দে কেঁপে ওঠে ছেলে-বুড়ো। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-

‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে । ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।’

বর্ষায় পল্লির রূপ

বর্ষায় পল্লির মাঠ-ঘাট বৃষ্টির পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়। নদীর দুকূল ছাপিয়ে বর্ষার পানি গ্রামে প্রবেশ করে। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে যায়। নৌকা ছাড়া অনেক জায়গায় চলাফেরা করা যায় না। তখন গ্রামগুলোকে মনে হয় নদীর বুকে জেগে ওঠা এক-একটা দ্বীপ। বর্ষায় পল্লির দৃশ্য সত্যি অপূর্ব।

বর্ষার অবদান

বর্ষাকালে আমাদের দেশে কেয়া, কামিনী, কদম, জুঁই, টগর, বেলি, চাপা প্রভৃতি ফুলের সুগন্ধে চারপাশ সুরভিত হয়ে ওঠে। অর্থকরী ফসল পাট তখন কৃষকের ঘরে আসে। আউশ ধানের মৌসুম তখন । পেয়ারা, কলা, চালকুমড়া, ঝিঙা, করল্লা, ঢেঁড়স, বরবটি ইত্যাদি ফল ও তরকারি বর্ষানই অবদান। বর্ষাকালে আমরা প্রচুর মাছ পেয়ে থাকি। এ সময় নৌকাযোগে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত খুব সহজ হয়।

উপসংহার

বর্ষাঋতুর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের একটা নিবিড় আত্মীয়তার যোগ আছে। সে যোগ কেবল ব্যবহারিক নয়, অন্তরেরও। বর্ষায় বাংলার মানুষের অন্তরও সিক্ত-স্লিপ হয়ে ওঠে। প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য মানুষের মনেও গভীর প্রভাব ফেলে যায়।

তো বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা কেমন লেগেছে তোমাদের কাছে। যদি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবে এবং নিয়মিত এই সাইটে এসে পড়তে পারবে।

আরও পড়তে পারবে  

গ্রীষ্মের দুপুর অনুচ্ছেদ || গ্রীষ্মের দুপুর রচনা

রচনা স্বদেশপ্রেম || স্বদেশপ্রেম রচনা

Related Posts