Home » মিশরীয় সভ্যতার অবদান বা গুরুত্ব আলোচনা কর।
মিশরীয় সভ্যতার অবদান বা গুরুত্ব

মিশরীয় সভ্যতার অবদান বা গুরুত্ব আলোচনা কর।

by Susmi
0 comment

মিশরীয় সভ্যতার অবদান

মানব সভ্যতাকে আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রাচীন মিশরীয়দের অবদান অনস্বীকার্য। নিম্নে মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অবদান বা গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

১. সামাজিক ক্ষেত্রে

মিশরীয় সভ্যতার ক্ষমতা, ধর্ম, আমলা, কৃষক, শ্রমজীবী ও দাসদের উপর ভিত্তি করে সামাজিক শ্রেণি গড়ে ওঠে। মিশরীয় সভ্যতায় সমাজের শিরোমণি ছিল রাজপরিবার।। তার নিচে ছিল পুরোহিত এবং সামন্ত নৃপতি। তাদের নিচে ছিল লিপিকার, বণিক, কারিগর ও কৃষক এবং সর্বনিম্নে ছিল ভূমিদাস এবং শ্রমজীবী শ্রেণী। ভূমিদাস ছিল সমাজে পরাধীন শ্রেণি এবং অন্যান্য শ্রেণি ছিল স্বাধীন। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ছিল আকাশ-পাতাল ব্যবধান। দাসশ্রেণীকে সকলেই ঘৃণা করত এবং তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হতো।

২. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে

প্রাচীন মিশরের রাজাকে ফারাও বলা হতো। রাজা নিজেকে দেবতার বংশ বলে দাবি করতেন। এবং রাজার ক্ষমতা ছিল নিরঙ্কুশ। মিশরের বিখ্যাত রাজাদের মধ্যে প্রথম বাটমোস, তৃতীয় বাটমোস, দ্বিতীয় রামসেস ও তৃতীয় রামসেসের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মন্দির ও পুরোহিত সম্প্রদায়ের যথেষ্ট ধন-সম্পদ ছিল। ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তিও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্রীয় কাঠামো ছিল একনায়কতান্ত্রিক, যাকে পুরোহিততন্ত্র বললেও ভুল হবে না।

আরও পড়ুন:   প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা বর্ণনা কর।

৩. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে

প্রাচীন মিশরীয় অর্থনীতির প্রধান উৎস ছিল কৃষি। সেখানে সামন্ত পদ্ধতিতে উৎপাদন হতো। অর্থাৎ, দাসরা কৃষিকাজ করত এবং মনিবগণ উৎপাদিত ফসল ভোগ করত। এমনকি মনিবগণ দাসদের উপর অমানবিক অত্যাচারও করত। নীলনদের বন্যার ফলে মিশরের ভূমি বেশ উর্বর ছিল। তাই সেখানে প্রচুর পরিমাণে গম, যব, জোয়ার, পিঁয়াজ, শাকসবজি ইত্যাদি উৎপন্ন হতো। মিশরে রাজা বা শাসক ছিলেন জমির মালিকগণ। তবে তাদের শস্য মাড়াই কৌশল ও বর্তমানে আমাদের দেশের শস্য মাড়াই কৌশল প্রায় একই রকম।

 

৪. ধর্মীয় ক্ষেত্রে

মিশরীয়দের সামাজিক জীবন ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। তারা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী ছিল। তাই তারা মৃতদেহকে মমি করে রাখত। তাদের ধর্মীয় জীবনে বৈচিত্রা লক্ষ করা যায়। তারা সমাধি মন্দিরে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, অস্ত্রশস্ত্র, অলংকার, মণি-মুক্তা, নানা ধরনের খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করত। মিশরীয়দের মধ্যে টোটেম বিশ্বাস বিদ্যমান ছিল। তারা কোনো গাছপালা বা পশুপাখির নামে নিজের গোত্রের পরিচয় দিত। প্রথমদিকে তাদের মধ্যে মূর্তিপূজার প্রচলন থাকলেও অষ্টাদশ রাজবংশের ফারাও চতুর্থ আমেন একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান।

৫. স্থাপত্য শিল্প

মিশরীয় সভ্যতার স্থাপত্য

স্থাপত্য শিল্পকর্ম বিস্তারে মিশরীয় সভ্যতার অবদান ছিল অসামান্য। মিশরীয় সভ্যতায় স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের যে চরম বিকাশ ঘটে তার নিদর্শন হলো প্রাচীন মিশরের পিরামিড ও মন্দির। সুবিশাল আকৃতিবিশিষ্ট একেকটি মন্দির ছিল সুদৃশ্য কারুকার্যখচিত। কারনাকের মন্দিরের দৈর্ঘ্য ছিল ১,৩০০ ফুট। তাছাড়া তারা কাঠের আসবাবপত্র এবং ধাতব বস্তুর। জিনিস তৈরিতেও পারদর্শী ছিল।

৬. ক্ষুদ্র শিল্প

মিশরীয়রা তাদের ব্যবহৃত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসপত্রে অতি চমৎকারভাবে শিল্পনৈপুণ্য ফুটিয়ে তুলত। মৃৎপাত্র, আসবাবপত্র, কম্বল, পর্দা, কুশন প্রভৃতি তারা বাহারি রকমের নকশা ও চিত্রের সাহায্যে অতি আকর্ষণীয় করে তুলত। কারিগর কর্তৃক চমৎকার ডিজাইনের রত্নপাত্র, সুগন্ধি রাখার পাত্র, কৌটা ও রূপার দ্রব্যাদির প্রমাণ পাওয়া যায়। তারা মূল্যবান অলংকার, আংটি, নেকলেস, মুকুট, বাজুবন্ধ প্রভৃতি অত্যন্ত চমৎকার শৈল্পিক নিপুণতায় তৈরি করতে পারত।

৭. ব্যবসায়-বাণিজ্য

প্রাচীন মিশরীয়দের আয়ের উৎস ছিল ব্যবসায়-বাণিজ্য। এ সময়ে গ্রিস, নুবিয়া, সিরিয়া, ফিনিশিয়া, ইজিয়ান দ্বীপ, সুদান ইত্যাদির সাথে মিশরের বাণিজ্য চলত। মিশরীয়রা গম, লিনেন কাপড়, মৃতপাত্র, চামড়া ও প্যাপিরাস রপ্তানি করত। রৌপ্য, হাতির দাঁত, আবলুস কাঠ ইত্যাদি আমদানি করত। নৃবিজ্ঞানী ওয়ালবাচ্চ ও টেইলরের মতে, “এ সময় মিশরীয় ব্যবসায়ীদের বুককিপিং ও অ্যাকাউন্টিং সম্পর্কে জ্ঞান ছিল এবং বিনিময় প্রথার মাধ্যমে সকল প্রকার লেনদেন চলত।” ব্যবসায় বাণিজ্যের জন্য মূলত তারা তিনটি পথ ব্যবহার করত। যথা:

(ক) ভূমধ্যসাগর থেকে উত্তর দিকে,

(খ) নুবিয়া ও লোহিত সাগর থেকে দক্ষিণ দিকে এবং

(গ) লোহিত সাগর থেকে পূর্ব দিকে।

৮. লিখন পদ্ধতি

কিউনিফরম নামের উন্নতমানের লিখন পদ্ধতিতে তারা ডান থেকে বামদিকে লিখত। তারা কাদামাটির প্লেটে খাগের কলম দিয়ে কৌণিক রেখা ফুটিয়ে তুলত। কিউনিফরম লিপির প্রধান গুণ হচ্ছে, এ বিশেষ চিহ্নগুলো রোদে শুকালে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ চিত্রলিপি এক পর্যায়ে শব্দলিপিতে রূপান্তরিত হয়। তারা ৩৫০টি বর্ণের ব্যবহার জানত। মিশরীয়রা গুণ, ভাগ, ভাগের বর্গমূল ও ঘনমূলের হিসাব করতে পারত। তাদের লিখন পদ্ধতি মিশরসহ নিকটপ্রাচ্যে বেশ বিস্তার লাভ করে। মিশরীয়দের লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে ডেভিস বলেন, “মিশরীয়রাই প্রথম লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করে।”

৯. সাহিত্য

প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে সাহিত্য চর্চার ব্যাপক বিকাশ ঘটে। তারা মানব সভ্যতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়। ইতিহাস, ধর্মতত্ত্ব, গণিতশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাদের গবেষণা ও ব্যুৎপত্তি অর্জনের সমধিক নজির রয়েছে। প্রাচীন মিশরীয়দের সাহিত্যের উপজীব্য হিসেবে ছিল- ক. ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, খ. পৌরাণিক কাহিনি, রূপকথা, জাদুবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়। এছাড়া তাদের ধর্মভিত্তিক সাহিত্য চর্চারও নিদর্শন রয়েছে।

১০. মমি

রসায়নশাস্ত্রে প্রাচীন মিশরীয়রা বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিল। পরকালে বিশ্বাসী মিশরীয়রা মৃতদেহকে মর্মী করে রাখত। তারা মৃতদেহকে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে রাখার চেষ্টা করত। কারণ তাদের বিশ্বাস, যে আত্মা দেহ থেকে বিদায় নিয়েছে, পরকালে ঐ আত্মা এই দেহেই আবার অবস্থান করবে। এই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে প্রাচীন মিশরীয়রা মৃতদেহকে পচনক্রিয়া থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক পদ্ধতিতে মমি করত। নতুন রাজ্যের রাজধানী থিবসে ‘শবনগরী’ নামে পরিচিত উঁচু চুনা পাহাড়ে দু’হাজার বছর ধরে সত্তর পুরুষ পর্যন্ত মিশরীয়দের মমিকৃত দেহ স্থান পেয়েছে।

১১. দর্শনশাস্ত্র

প্রাচীন মিশরীয়রা দর্শনশাস্ত্রে যথেষ্ট কৃতিত্ব অর্জন করে। তাদের দর্শনের মূলভিত্তি ছিল রাজনীতি ও নৈতিক আচরণ। এ সময়ে মিশরে জড়বাদী মতবাদের উর্ধ্বে অতীন্দ্রিয় চিন্তাধারার উন্মেষ হয়। এর ফলে পরকালে মিশরীয়রা অবিনশ্বর ও চিরন্তন পৃথিবী, ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। মিশরীয়রা এ ধরনের নৈতিকতাভিত্তিক দর্শনের উদ্ভাবন করে খ্রিস্টপূর্ব ২,৫০০ অব্দে। পঞ্চম রাজবংশের আমলে ফারাওয়ের প্রধান স্ত্রী ফাহোটেপ তার ‘ম্যাক্সিমস’ (Maxims) গ্রন্থে মন্দের বিচার ও পরিণতি সম্বন্ধে বিশদ বিবরণ দেন।

১২. বিজ্ঞান

মিশরীয়রা জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি অর্জন করে। তারা গণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাশাস্ত্রে বেশ পারদর্শী ছিল। তারা পিরামিড ও মন্দির নির্মাণের জন্য প্রকৌশলবিদ্যা অর্জন করেছিল। প্রথমে তারা চান্দ্রমাসের হিসাবে বছর গণনা করত, কিন্তু পরে সৌরমাস হিসেবে বছর গণনা শুরু করে। তারা সূর্যের আলোর ছায়া দেখে সময় নির্ধারণের জন্য ছায়াঘড়ি বা সূর্যঘড়ি ব্যবহার করত।

আরও পড়ুন:   মিশরীয় সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর।

১৩. পিরামিড নির্মাণ

মিশরীয় সভ্যতার সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে পিরামিড নির্মাণ। তারা নিজেদের কীর্তিকে চিরকাল ধরে রাখার জন্য মৃতদেহকে মমি করে রাখত। অনন্য স্থাপত্যকীর্তি খুফুর পিরামিড তৈরিতে এক লক্ষ লোকের ২০ বছর সময় লেগেছিল। মিশরের পিরামিডগুলো আজও তাদের সভ্যতার চিহ্ন বহন করে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বের অনেক লোক পিরামিড দেখার জন্য আজও মিশর ভ্রমণ করে।

১৪. জ্যোতির্বিদ্যা

প্রাচীন মিশরে জ্যোতির্বিদ্যা বিশেষ সমাদৃত ছিল। মূলত কৃষির প্রয়োজনে গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে প্রাচীন মিশরীয়রা জ্যোতির্বিদ্যার ধারণা লাভ করে। কৃষিক্ষেত্র রক্ষা ও ধর্মীয় পবিত্র দিন বের করার জন্য প্রাচীন মিশরীয়রা চান্দ্র পঞ্জিকা উদ্ভাবন করেছিল। সৌরমণ্ডলের জ্যোতিষ্কগুলো চিহ্নিত করে তারা গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৪২৪১ অব্দে প্রাক-রাজবংশীয় যুগে মিশরীয়রা লুব্ধক নক্ষত্রের আবির্ভাবকাল পর্যবেক্ষণ করে ৩৬৫ দিনে সৌর পঞ্জিকা প্রবর্তন করে। এ পঞ্জিকায় ১২ মাসে এক বছর এবং ৩০ দিনে এক মাস ধরা হয়। সৌর বর্ষপঞ্জিকা তৈরি করা ছাড়াও প্রাচীন মিশরীয়রা বিভিন্ন বিন্দুর নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয়, ধ্রুবতারার সাহায্যে দিক নির্ণয় এবং নক্ষত্র মানচিত্র রচনায় পারদর্শিতা অর্জন করে। প্রাচীন মিশরীয়রা সূর্যঘড়ি, ছায়াঘড়ি এমনকি জলঘড়িও আবিষ্কার করে। খ্রিস্টপূর্ব ১,৪০০ অব্দে নির্মিত একটি ছায়াঘড়ি কারনাকের মন্দিরে পাওয়া যায়।

১৫. গণিতশাস্ত্র

গণিতশাস্ত্রে প্রাচীন মিশরীয়রা অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করে। সম্ভবত প্রাচীন মিশরীয়দের বাস্তব প্রয়োজনের তাগিদেই বিজ্ঞানের এ শাখার উৎপত্তি ও বিকাশ সাধিত হয়। তারাই প্রথম গণিতশাস্ত্রের দু’টি অপরিহার্য শাখা পাটিগণিত ও জ্যামিতির প্রচলন করে। পাটিগণিতের ক্ষেত্রে তারা যোগ, বিয়োগ ও ভাগ পদ্ধতি আয়ত্ত করে। তবে তারা গুণিতকের ব্যবহার না জানলেও তাদের গুণের পদ্ধতি ছিল একটু আলাদা ধরনের। মিশরীয়দের গণি শাস্ত্র দশমিকের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তারা এক, দশ, শত, সহস্র প্রভৃতি সংখ্যার সাথে পরিচিত থাকলেও ‘শূন্য’ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। তবে ভগ্নাংশ সম্বন্ধে তাদের কিছু জ্ঞান ছিল।

১৬. চিকিৎসাবিজ্ঞান

মিশরীয় সভ্যতার পূর্বে চিকিৎসাবিজ্ঞান ছিল টোটকা, জাদুবিদ্যা, লৌকিক চিকিৎসা প্রভৃতি কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। প্রাচীন মিশরীয়রা চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রভৃত অগ্রগতি লাভ করে। খ্রিস্টপূর্ব ১,৭০০ অব্দের প্রাপ্ত একটি উৎস থেকে জানা যায়, সে সময় মিশরীয়রা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাবিদ্যায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করে। তৃতীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ফারাও জোসারের উজির ইসহোটেপ ছিলেন একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। চতুর্থ রাজবংশের আমলে একটি সমাধি ক্ষেত্রে প্রাপ্ত চোয়ালের হাড়ে মিশরীয়দের দন্ত চিকিৎসায় দক্ষতার পরিচয় পাওয়া গেছে। বর্ত রাজবংশের একজন চিকিৎসক একাধারে দন্ত বিশেষজ্ঞ, চক্ষু চিকিৎসক এবং পাকস্থলীর অস্ত্রের চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন। এ সময় থেকেই চক্ষুরোগ, দাঁতের রোগ, পেটের পীড়া, শল্যবিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে মিশরীয় চিকিৎসকগণ অনেক মূল্যবান ওষুধ আবিষ্কার করেন। মিশরীয় চিকিৎসকগণ হৃৎপিণ্ড ও নাড়ির স্পন্দন নির্ণয় করতে পারতেন। এছাড়া মিশরীয় চিকিৎসকগণ হাড় ভেঙে গেলে শল্য চিকিৎসা দ্বারা জোড়া লাগাতে পারতেন।

১৭. পারিবারিক ও বৈবাহিক ক্ষেত্রে

বিবাহনির্ভর পরিবার ছিল মিশর সমাজের ক্ষুদ্রতম একক। যুগল বিবাহভিত্তিক পারিবারিক জীবনে মিশরীয়দের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ কমই হতো। মিশরের রাজপরিবারের মধ্যে সম্পত্তি রক্ষা এবং রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য আপন ভাইবোনের মধ্যে বিবাহের কথাও জানা যায়। যদিও মিশরীয় সমাজে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের কোনো বাধা ছিল না, তবু এক বিবাহই অধিক প্রচলিত ছিল। তবে উপপত্নী রাখার প্রথাও বিদ্যমান ছিল।

১৮. নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা

প্রাচীন মিশরে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার না থাকলেও সমাজে নারীদের মর্যাদা স্বীকৃত ছিল। সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, যেমন- ব্যবসায়, শিল্প, সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারত। মিশরে স্ত্রীরা স্বাধীন সত্তা নিয়ে বসবাস করত। স্ত্রী উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষমতা ছিল। তাই রাজার মৃত্যুর পর রাণী ক্ষমতা গ্রহণ করতেন এবং পরে উপযুক্ত ছেলের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতেন।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অবদান সত্যিই অনস্বীকার্য। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সভ্যতা এবং নব নব আবিষ্কারে মিশর ছিল বিশ্ব সভ্যতায় অগ্রগামী। তবে মিশরীয় সভ্যতার পিছনে রয়েছে নীলনদের অপরিসীম অবদান। নীলনদের অববাহিকায় কৃষিব্যবস্থা চরম উন্নতি লাভ করেছিল বলেই প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে এতটা অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।

Related Posts