মৌখিক যোগাযোগ কি ?
মানুষের কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনায় যে মতবিনিময় বা তথ্যের আদান প্রদান সংঘটিত হয় তাকে মৌখিক যোগাযোগ বলে। এরূপ যোগাযোগকে মুখোমখি (Face to face) যোগাযোগ বা one to one যোগাযোগও বলা হয়। এক্ষেত্রে ভাষাগত শব্দ লিখিতভাবে ব্যবহৃত না হয়ে মৌখিকভাবে ব্যবহৃত হয়। মৌখিক যোগাযোগের তথ্য, ভাব, মতামত, সংবাদ, অনুভূতি যোগাযোগকারী ও যোগাযোগ গ্রহীতার মধ্যে সরাসরি আদান-প্রদান হয়ে থাকে। এ ধরনের যোগাযোগ সাধারণত উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে সরাসরি আলাপ-আলোচনা ও কথোপকথনের মাধ্যমে সংগঠিত হয়। তবে বর্তমানকালে বেতার, টেলিফোন, টেলিভিশন ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করেও এ ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব।
কাজেই আমরা বলতে পারি যে, তথ্য, সংবাদ, মতামত, মনোভাব, অনুভূতি সরাসরি অথবা বেতার, টেলিফোন, টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে দু’পক্ষের মধ্যে আদান-প্রদান হলে তাকে মৌখিক যোগাযোগ বলা হয়। এরূপ যোগাযোগে সাধারণত সংবাদ গ্রহীতার তাৎক্ষণিক প্রত্যুত্তর পাওয়া সম্ভব হয়। ফলে অবস্থা বুঝে পুনরায় যোগাযোগ করা যায়। যে কারণে দ্রুত লক্ষার্জন সম্ভব হয়। এ জন্য ব্যবসায় সংক্রান্ত যোগাযোগের অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৌখিক যোগাযোগের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।
মৌখিক যোগাযোগের উপায় বা কৌশল
নিচে মৌখিক যোগাযোগের কতিপয় প্রধান প্রধান কৌশলের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-
১. কথোপকথন
কতিপয় ব্যক্তির মধ্যে যখন কোনো বিষয়ে অনুনুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনা সংঘটিত হয় তখন তাকে কথোপকথন বলে। এ ক্ষেত্রে সংবাদ গ্রাহক বা শ্রোতারাও বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারে। কথোপকথনে বক্তার মেজাজ-মর্জি বুঝে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। এতে সামাজিক বন্ধনও সুদৃঢ় হয়।
২. টেলিফোন
আধুনিককালে টেলিফোন মৌখিক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। আধুনিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ক্ষেত্রে টেলিফোন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, টেলিফোন ছাড়া কোনো ভালো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এ জন্য একে যোগাযোগের ‘বিস্তৃত দিগন্ত’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
আরও পড়ুন: ব্যবসায়িক যোগাযোগ কি? ব্যবসায়িক যোগাযোগের গুরুত্ব আলোচনা কর
৩. সাক্ষাৎকার
পূর্বনির্ধারিত কোনো উদ্দেশ্যে বক্তা যদি শ্রোতার সাথে আলাপ আলোচনা করে তখন তাকে সাক্ষাৎকার বলে। এক্ষেত্রে প্রথমে বক্তা শ্রোতাকে কোনো বিষয় সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করে এবং তারপর শ্রোতা তার প্রত্যুত্তর প্রদান করে। সাক্ষাৎকার বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে; যেমন- ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, অভিযোগ সাক্ষাৎকার, দলীয় সাক্ষাৎকার , শৃঙ্খলাবোধ সাক্ষাৎকার, বোর্ড সাক্ষাৎকার ইত্যাদি।
৪. দলগত আলোচনা
দলগত আলোচনাও মৌখিক যোগাযোগের কৌশল হিসেবে উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা সভা, মতবিনিময় সভা বা পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরূপ সভার মাধ্যমে মানব সম্পর্ক, ধারণা যাচাই, ধারণা সৃষ্টি, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে ভাল ফল লাভ করা যায়।
৫. আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কোর্স
আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কোর্স পদ্ধতিতে যোগাযোগকারী সরাসরি হাতে-কলমে যোাগাযোগ গ্রহীতাদের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা দান করে এরূপ যোগাযোগ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদান করা হয়। এ পদ্ধতিতে কার্যকর ও ফলপ্রসূ যোগাযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব।
৬. পরামর্শ
এ পদ্ধতিতে শ্রমিক-কর্মচারী অথবা ব্যবস্থাপক পরিচালকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়। পরামর্শক্রমে তারা প্রত্যেকে দক্ষতা সহকারে কার্য সম্পাদন করে থাকে। বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ পরামর্শদাতা নিয়োগ করা হয় এবং তার ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
৭. বেতার ও টেলিভিশন
বেতার ও টেলিভিশন মৌখিক যোগাযোগের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। এ ক্ষেত্রে যোগাযোগকারী একতরফা পদ্ধতিতে তথ্যাদি জনগণের উদ্দেশ্যে প্রচার করে থাকে। তবে এরূপ যোগাযোগের মানব-সম্পর্কের উন্নয়ন সাধিত হয়।
৮. অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ
অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তম মৌখিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। এ ক্ষেত্রে হাঁটতে-চলতে অথবা চায়ের টেবিলে বসে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব এবং অধীনস্থ কর্মচারীদের সুবিধা-অসুবিধা, সমস্যা, পারিবারিক অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে খবরাখবর নেয়া যায়। এরূপ যোগাযোগে মানব-সম্পর্কের উন্নয়ন সাধিত হয়।
৯. সম্মেলন
সম্মেলনও মৌখিক যোগাযোগের বিশেষ কৌশল হিসেবে পরিচিত। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদানের নিমিত্ত নির্দিষ্ট সময়ান্তে সম্মেলন আহ্বান করা হয় এবং সরাসরি মতবিনিময় সম্ভব হয়।
১০. পুরষ্কার বিতরণী সভা
বিশেষ উপঢৌকন অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও মৌখিক যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব। কারণ এরূপ অনুষ্ঠানে কর্মচারীদের পুরষ্কার প্রদানের নিমিত্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ ধরনের যোগাযোগে নির্বাহীদের প্রতি কর্মচারীদের আনুগত্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।