Home » ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য কি কি? অথবা ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি আলোচনা কর।
ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য কি কি

ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য কি কি? অথবা ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি আলোচনা কর।

by Susmi
0 comment

প্রিয় পাঠক, আমরা এর আগে ব্যবস্থাপনা কি ও ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি এবং ব্যবস্থাপনার তিনটি স্তর সম্পর্কে জেনেছি। আজকে জানবো ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি সম্পর্কে। চলুন তবে কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?

ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি

পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানবিক ও বস্তুগত উপকরণসমূহের কার্যকর ব্যবহারকল্পে গৃহীত প্রচেষ্টাই হলো ব্যবস্থাপনা। আর ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

১. একটি পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান

ব্যবস্থাপনা হচ্ছে একটি পৃথক এবং পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান। বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে নির্বাহীগণকে এ জ্ঞান অর্জন করতে হয়। ব্যবস্থাপনার জ্ঞান নির্বাহীগণকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে সহায়তা করে।

২. সামাজিক প্রক্রিয়া

ব্যবস্থাপনা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। কেননা ব্যবস্থাপনা কতিপয় মানবীয় কার্যাবলির সাথে সংশ্লিষ্ট। এসব মানবীয় কার্যাবলির সুষ্ঠু সম্পাদনের উপর প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন নির্ভরশীল। কর্মীদের সুষ্ঠু পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা তার উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন করতে পারে। যে প্রক্রিয়ায় কর্মীদের পরিচালনা করা হয় তা সামাজিক প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত।

৩. কতিপয় কাজের সমষ্টি

ব্যবস্থাপনা হলো কতিপয় কাজের সমষ্টি। এ সকল কাজ হলো পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা ও নেতৃত্বদান, সমন্বয় সাধন, প্রেষণা এবং নিয়ন্ত্রণ। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীগণকে উক্ত বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। উপরিউক্ত কার্যাবলির সুষ্ঠু সম্পাদনের উপর প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য নির্ভরশীল।

৪. একটি স্বতন্ত্র দক্ষতা

ব্যবস্থাপনা হচ্ছে একটি স্বতন্ত্র দক্ষতা। উৎপাদন, নির্মাণ ও প্রস্তুতকরণ, হিসাবরক্ষণ প্রভৃতি কার্যদক্ষতার ন্যায় ব্যবস্থাপনাও একটি স্বতন্ত্র দক্ষতা। প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, “Management is a skill separate from technical knowledge and experience.” অর্থাৎ, কারিগরি জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা থেকে ভিন্ন দক্ষতা হলো ব্যবস্থাপনা।

৫. নেতৃত্বমূলক কার্য

ব্যবস্থাপনা হচ্ছে কোনো প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের নেতৃত্বমূলক কার্যমাত্র। নির্বাহীগণ উপযুক্ত কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে অধস্তন কর্মীদের লক্ষ্যপথে পরিচালিত করে থাকেন। তাঁরা অধস্তন কর্মীদের কার্যসম্পাদনে প্ররোচিত করেন এবং এভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন।

৬. সার্বজনীন ব্যবহার

ব্যবস্থাপনার ব্যবহার সার্বজনীন। ব্যবস্থাপনার অগ্রণী চিন্তাবিদ হেনরি ফেয়লের দৃষ্টিতে যে কোনো সংগঠনে ব্যবস্থাপনার জ্ঞান প্রয়োগ করা সম্ভবপর। ছোট, বড়, মাঝারি যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে এর ব্যবহার আবশ্যকীয়। অন্যান্য সংগঠনেরও এর উপযোগিতা বিদ্যমান।

৭. এটি বিজ্ঞান এবং কলা

ব্যবস্থাপনা একদিকে যেমন একটি বিজ্ঞান, অপরদিকে তেমনি একটি কলা। ব্যবস্থাপকীয় কার্যসম্পাদনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, আবার কলাকৌশলও প্রয়োগ করা হয়। বিজ্ঞান ও কলার সমন্বিত ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন করতে সক্ষম হয়।

৮. কতিপয় সম্পদ ব্যবহারের সাথে সংশ্লিষ্ট

ব্যবস্থাপনা কতিপয় সম্পদ ব্যবহারের সাথে সংশ্লিষ্ট। মানবসম্পদ, কাঁচামাল, পুঁজি, যন্ত্রপাতি, পদ্ধতি ও প্রযুক্তি, বাজার ইত্যাদি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের উপর ব্যবস্থাপনার সাফল্য নির্ভরশীল। যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সকল প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগাতে পারে না সে প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস অনিবার্য।

৯. মূল্যবান অর্থনৈতিক সম্পদ

ব্যবস্থাপনাকে মূল্যবান অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। দক্ষ ব্যবস্থাপনা ব্যবসায়ের উন্নতির সোপান। অন্যদিকে অদক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার প্রধান কারণ। এ কারণে সুদক্ষ ব্যবস্থাপনাকে মূল্যবান সম্পদ হিসাবে অভিহিত করা হয়।

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য তথা প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ব্যবস্থাপনা অদৃশ্য শক্তি হিসেবে যে কোনো সংগঠনে বিদ্যমান থাকে। এটি উদ্দেশ্যমুখী। উদ্দেশ্য অর্জিত হয়েছে কিনা তা বিচার করে এর কার্যকারিতা পরিমাপ করা যায়।

Related Posts