Home » রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য

রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য

বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে রোমান সভ্যতা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ছিল। স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার মধ্যে রোমান সভ্যতা বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য অতুলনীয় ও স্মরণীয় হয়ে আছে। নিচে রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা করা হলো-

১. রাজনৈতিক অবস্থা

রোমের রাজনীতির বিবর্তনের ধারায় প্রাথমিক পর্যায়ে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজতন্ত্রে রাজাকে সহযোগিতা করার জন্য দুটি কার্যকরী পরিষদ ছিল। যথা- (i) জনগণের পরিষদ (The popular Assembly) ও (ii) সিনেট বা বয়োজ্যৈষ্ঠদের সভা (Senate on the council of Elders).

  • জনগণের পরিষদ বা অ্যাসেম্বলি: প্রাপ্তবয়স্ক অস্ত্রমুক্ত পুরুষ নাগরিকরা এ পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রকৃত প্রকাশে অ্যাসেম্বলির তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ছিল না। রাজা কর্তৃক উপস্থাপিত আইন বিষয়ক কোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এসেম্বলী ভেটো প্রদান করতে পারত। তবে অ্যাসেম্বলি ভেটো প্রদান করলেও উপস্থিত আইনের কোনো পরিবর্তন করতে পারত না। অ্যাসেম্বলি মূলত আইন অনুমোদনকারী সভা ছিল। এগুলো ছাড়া আইন ও ফার্মের মূল্যায়ন, সম্পত্তি ও বাজেটের নিয়ন্ত্রণ এবং পরাষ্ট্র বিষয়ক ক্ষমতা ছিল অ্যাসেম্বলির।
  • সিনেট বা বয়োজ্যৈষ্ঠদের সভা: গোত্র প্রধান অভিজাত শ্রেণিরাই সিনেট অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। রাজা বা সম্রাটের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুজন শাসক সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত হতে, যাদেরকে বলা হতো ‘কন্সাল’। সিনেট ছিল রোমের ক্ষমতার মূল আধার। তিনশত গোত্র প্রধান ছাড়াও সাবেক কন্সালগণ ও সরকারি অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা সিনেটের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সিনেট কর্তৃক নিয়োগকৃত কন্সালদ্বয় সমান ক্ষমতাসম্পন্ন ছিলেন। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে কন্সালদ্বয়ের একজন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হতে হয়। একে বলা হয় ডিক্টেটর।

২. অর্থনৈতিক অবস্থা

রোমের অর্থনৈতিক অবস্থার মূল শক্তি ছিল কৃষি। অধিকাংশ জমি অভিজাতদের দখলে ছিল। তারা দাসদেরকে খামারে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করত। ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল সহায়ক অর্থনৈতিক শক্তি। এখানেও দাসের ব্যবহার ছিল।

আরও দেখুন:   গ্রিক সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর

৩. দাস প্রথা

সভ্যতার ইতিহাসে রোমান সভ্যতায় দাস প্রথা একটি কালজয়ী ঘটনা। সমৃদ্ধি, সম্পদ, শৌর্য-বীর্য, সাম্রাজ্য জয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে পৃথিবীর গুরু স্থানীয় রোমান সভ্যতার ইতিহাসের শুরু খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকে ইতালি উপদ্বীপের একটি ছোট গ্রাম হিসেবে যে সভ্যতার যাত্রা হয়েছিল, সে সভ্যতাই হচ্ছে Classical Roman Civilization।

প্রাচীন রোমের ইতিবৃত্ত সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণের অভাব থাকলেও কিংবদন্তির কোনো অভাব নেই। কিংবদন্তি রয়েছে যে, রোম নগরীর প্রতিষ্ঠাতা হলেন রাজপুত্র রেমিউলাস ও যেমুস নামক ভ্রাতৃদ্বয়। গ্রিক সভ্যতার ভিত্তি দুর্বল হয়ে গেলে রোমানরা মেসিডোনিয়া ও গ্রিস দখল করে নেয়। তারা অধিকৃত গ্রিকদেরকে দাসে পরিণত করে এবং দাস শ্রমের উপর ভিত্তি করে রোমকে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত করে। রোমের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নেপথ্যে মূলত শক্তি যোগায় দাসশ্রেণি।

প্রাচীন সকল সভ্যতায়ই দাসপ্রথা প্রচলিত থাকলেও রোমের ক্ষেত্রে তা ছিল কিছুটা ভিন্নতর। যে দাসদের শ্রমে ও ঘামে রোমের অর্থনীতির চাকা সচল ছিল সে দাসদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। সমাজের সবচেয়ে নীচু স্তরে যাদের অবস্থান ছিল তাদেরকে দাসরূপে চিহ্নিত করা হতো। চাষাবাদসহ উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে দাসরা ছিল প্রধান হাতিয়ার। হব হাউস এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, “প্রাচীন রোমে দাসদের ব্যবহার করা হতো উৎপাদনের হাতিয়ার হিসেবে।”

৪. সামাজিক শ্রেণি

রোমান সমাজ দুটি ঐতিহ্যবাহী শ্রেণি ছিল। যথা- (i) প্যাট্রিসিয়ান ও (ii) প্লেবিয়ান। প্যাট্রিসিয়ানরা সিনেটসহ জনগুরুত্ব পদে নিয়োজিত ছিল এবং এরা রোমের অধিকাংশ ভূসম্পত্তির মালিক ছিল। প্যাট্রিসিয়ারা অভিজাত শ্রেণি হিসেবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী ছিল।

৫. পরিবার ব্যবস্থা

পরিবার ব্যবস্থা রোমান সভ্যতার সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিস্বরূপ বিবেচনা করা হয়। পিতামাতা, পুত্র-কন্যা ও ক্রীতদাস সবাইকে নিয়েই রোমান পরিবার গঠিত হতো। পরিবারের প্রধান ছিল পিতা এবং পিতার ক্ষমতা ছিল একচ্ছত্র ও সীমাহীন। পিতা ইচ্ছা করলে ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিতে পারতেন এবং পুত্রকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে পারতেন। অবাধ্য সন্তানকে হত্যা করতে পারতেন। রোমান আইনেও পিতা কর্তা- বিধাতা হিসেবে স্বীকৃত ছিল।

৬. বিবাহ ব্যবস্থা

বিবাহ হলো পরিবারের ভিত্তি। রোমান সমাজে তিন ধরনের বিয়ে প্রচলিত ছিল। যথা- (i) ব্যবহার সিদ্ধ বিয়ে (ii) বিক্রয় বিয়ে ও (iii) আনুষ্ঠানিক ও আচারসিদ্ধ বিয়ে। যে বিয়েতে দম্পতি এক বছর একত্রে বসবাস করে, এক বছর পরে তারা স্বামীর স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেতো তাকে ব্যবহারসিদ্ধ বিয়ে বলা হয়। যে বিয়েতে বরকে কনের পিতার কাছ থেকে বধূ ক্রয় করতে হয়, তাকে বিক্রয় বিয়ে বলা হয়। যে বিয়েতে বিশেষ আচার পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং বিশেষ এক ধরনের কেক একত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে আহার করে বিবাহ সম্পন্ন হয় তাকে আনুষ্ঠানিক ও আচারসিদ্ধ বিয়ে বলা হয়। এ বিয়ে সাধারণত প্যাট্রিসিয়ান শ্রেণিভুক্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

৭. নারীর মর্যাদা

আইনগত বিধি-নিষেধ দ্বারা রোমান নারীদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হতো। রোমান আইনের চোখে নারীর স্বাধীন সত্তা ছিল না,, সে সর্বদা পুরুষের অভিভাবকত্ব বিনা বাক্যে মেনে নিতে হতো, রোমান আইনজীবী Gaius উল্লেখ করেছেন, “এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক রমনীর একজন অভিভাবক প্রয়োজন। কারণ নারী দুর্বল চিত্তের হয়।” রোম সাম্রাজ্য বিস্তারের সাথে সাথে রোমান নারীর আস্থার অগ্রগতি হয়েছিল। মেয়েরা দোকানপাট, কলকারখানায় চাকরি গ্রহণ করে এবং নারীরা আইনজীবী ও ভোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারত। এ শ্রেণির মহিলারা রাজনীতিতেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারত।

৮. ধর্মীয় অবস্থা

রোমানরা ছিল অত্যন্ত ধর্মভীরু। তারা প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তিকে দেব-দেবী রূপে কল্পনা করে পূজা অর্চনা করত। প্রত্যেক রোম গৃহ ছিল ধর্ম ও দেব-দেবীর আখড়া। প্রত্যেক গৃহে একজন তত্ত্বাবধায়ক দেবতা ছিল, যাকে জৈনাস’ বলে আখ্যায়িত করে অত্যন্ত ভক্তি করা হতো। পরিবারের বন্ধুকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য দেবতা ছিল। এমনকি দরজার ছিটকানী দেবার দেবতাও ছিল। এ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য দেবতাগুলো হলো- ভেষ্টা ছিল আগুনের দেবতা, জুপিটার ছিল আকাশ দেবতা, ভেনাস প্রেমের দেবতা, নেপচুন সাগরের দেবতা, সার্টান ছিল ফসলের দেবতা এবং জুনো ছিল গর্ভবর্তী হওয়ার দেবী। পণ্ডিত ভারো উল্লেখ করেছেন, রোমানদের বিশ হাজার দেব-দেবী ছিল।” তারা অলিম্পিয়া দেবতার পূজা করতো। তারা গ্রেতাত্মায় ও পুনর্জজন্মে বিশ্বাসী ছিল।

৯. আইন প্রণয়ন

বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে রোমানদের আইন প্রণয়ন ছিল সবচেয়ে গৌরবজনক বৈশিষ্ট্য। যুক্তি ও প্রথার সমন্বয়েই তৈরি হয়েছে রোমান আইন। প্রাচীন যুগে মৌখিক আইন দ্বারাই রোমানরা সমস্যা সমাধান করতো। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দে ১২টি ব্রোঞ্জপাতে রোমান আইন সংকলিত হয়েছিল। রোমান আইনটি তিনটি শাখায় বিকাশ লাভ করেছিল। এ সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো:

বেসামরিক আইন (Jvs Civile): আইন লিখিত ও অলিখিত উভয়ভাবেই ছিল। এই আইনটির অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো সিনেটের মর্যাদা, প্রিন্স পদের ডিগ্রিসমূহ ও উচ্চ রাজ কর্মচারীদের নির্দেশাবলি।

জনগণের আইন (Jvs Gention): রাজনীতিবিদ সিসেরো হলেন এই আইনের জনক। এই আইন জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সকল রোমান নাগরিক যারা জাতীয় চেতনার প্রতি অমনোযোগী ছিল তাদের উপর প্রয়োগ করা হতো। এই আইনের ফলে দাস প্রথাকে স্বীকৃতি প্রদান, ক্রয়-বিক্রয়ের নীতি নির্ধারণ, চুক্তি ও অংশীদারিত্ব এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হতো।

প্রাকৃতিক আইন (Jvs Natural): এ আইনের মূলবক্তব্য হচ্ছে “প্রকৃতিগতভাবেই সকল মানুষ সমান এবং জন্মগতভাবে লাভ করা মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করার ক্ষমতা সরকারের নেই।” এ আইনের প্রবক্তা সিসেরোর মতে, প্রাকৃতিক আইনই হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন।” এ আইনে বিধবা ও এতিমদের অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা ‘ছিল। কোনো দাসকে হত্যা করলে দাস-মালিক আইনের চোখে খুনি বলে বিবেচিত হতো। রোমান এ আইনটি দাসদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল।

১০. কৃষি ও বাণিজ্য

রোম সাম্রাজ্যের অধিকারীরা মূলত কৃষিজীবী। কৃষিই তাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ছিল। রোমান সমাজে কৃষি ও বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল দাস শ্রমের উপর ভিত্তি করে। কৃষক ভূমি থেকে উৎখান্ড হলে, তার স্থান দখল করত ক্রীতদাস। অধিকাংশ ভূমি ছিল অভিজাত শ্রেণির দখলে। শুধু চাষাবাদের জন্য দাস রাখা হতো। শুধু চাষাবাদ নয়, উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে দাসরা উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতো।

আরও দেখুন:   রোমান সভ্যতার অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর

১১. দর্শন

গ্রিক দর্শনের বিভিন্ন মতবাদ রোমানদের উচ্চ শ্রেণিকে বহুলাংশে প্রভাবিত করেছিল। এপিকিউরিয়ান মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন লুক্রেটাস। তাঁর মতে, “বিশ্ব ও প্রকৃতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষকে অতিপ্রাকৃত শক্তির ভয় থেকে মুক্ত করা। কেননা এটিই আত্মার মঙ্গলের পথে প্রধান বাধা।” বিখ্যাত সিনেটর ও সুবক্তা সিসেরো ছিলেন স্টয়িক মতবাদের প্রধান প্রবক্তা। তাঁর মতে, সদগুণই মানুষের সুখের মূল উৎস। একজন আদর্শ মানুষ সুখ ও দুঃখের ঊর্ধ্বে থেকে শুধুমাত্র যুক্তির দ্বারা পরিচালিত হবে। এগুলো ছাড়াও টলেমির দর্শনশাস্ত্র ছিল চিরস্মরণীয়।

১২. বিজ্ঞান

রোমানরা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তেমন পরিদর্শীতা দেখাতে পারে নি। রোমানরা বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রতি ছিল অধিক আগ্রহী। নগর পরিকল্পনা, ওষুধ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সড়ক নির্মাণ, কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার এবং বর্ষপঞ্জির সংস্করণ ক্ষেত্রে সকলের সেরা ছিল রোমানরা। পিনি ছিলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানী পিনির তিন খণ্ডে বিশ্বকোষ রচনা করেছিলেন। টলেমি ছিলেন ত্রিকোণমিতির পন্ডিত। তাঁর মতে, পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট চক্র রয়েছে। রোমান বিজ্ঞানীরা সৌর তরঙ্গকে ৩৬৫ দিনে গণনা করেন এবং প্রতি চার বছর পর পর ১ দিন যোগ করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে পরিচিত গ্যালন ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং অপর খ্যাতিমান বিজ্ঞানী রুফাস যকৃত ও নাড়ির স্পন্দনের সঠিক পরিমাপ করেন। তিনি প্রথম পানিকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করার কথা বলেন।

১৩. সাহিত্য

দর্শনের চর্চা থেকেই প্রাচীন রোমে সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অগাস্টাসের সময়েই সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি সাধিত হয়। গীতি কবি হোয়াস, এপিকিউরীয় ও স্টোয়িক দর্শনের যৌথ শিল্পের প্রতিফলন ঘটেছিল তাঁর গীতিকাব্যে। সুবিখ্যাত কবি ভার্জিলের সর্বাপেক্ষা খ্যাতিমান রচনা ‘ইনিড’ রোমানদের ভাবধারাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং তিনি রোমান সাম্রাজ্যবাদকে গৌরবন্বিত করেছিলেন। রোমান যুগের সাহিত্যের অন্যতম অঙ্গ ছিল নাটক। এ যুগের প্রখ্যাত নাট্যকার পুটার্ক প্রায় ১২টি নাটক লেখেন, যা তিনশতকে রোমান আচার-আচরণ ও সংস্কৃতির প্রতি আলোকপাত করেছিলেন। গীতি কাব্যের রচয়িতাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন কেটুলাস, তার কাব্যের মূল উপজীব্য বিষয় ছিল মানবপ্রেম। সিসোরা ছিলেন অন্যতম গদ্য লেখক। তাঁর রচিত ‘On Duty’ ও ‘Tusculan Disputation’ গ্রন্থগুলোর আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল রোমান সাহিত্যে।

রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য পড়ে মূলত রোমান সভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। তাই এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

১৪. স্থাপত্যকলা

শিল্পকলার ক্ষেত্রে রোমানদের বিশেষ কৃতিত্ব হলো রোমান স্থাপত্য। রোমানগণ তাদের মেধার বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়ে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর মন্দির, বিজয় স্তম্ভ, নতুন নতুন প্রাসাদ ও দাসদেরকে ব্যবহার করে অনেক রাস্তাঘাট ও মন্দির নির্মাণ করেছেন। রোমানদের নির্মিত অট্টালিকা ও স্থাপত্যকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিজয় ডঃ, রাজপ্রাসাদ, মন্দির, নদীর বাঁধ, সেতু, মিলনায়তন ও আবাসিক ভবন ইত্যাদি। রোমানদের নিজস্ব স্টাইলে তৈরি স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে প্যাস্থিয়ন মন্দির। প্যান্থিয়ন মন্দিরটি ছিল বৃহৎ গম্বুজ সম্বলিত। গম্বুজের ব্যাস ছিল ১৪৪ ফুট।

১৫. ভাস্কর্য

রোমান ভাস্কর্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এসব ভাস্কর্য বাস্তববাদী ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা। তারা স্মারক স্তম্ভে ও দেয়ালের গায়ে নির্মিত ভাস্কর্যে ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সুন্দর চিত্র নির্মাণ ও অংকন করত। রোসক ভাস্কর্যের চার সাফল্য হচ্ছে পূর্ণাবয়া ও আবক্ষ মূর্তি দ্বারা মনুষ্য প্রতিকৃতি নির্মাণ। অবিকলভাবে মানুষের মুখাবয়ব নির্মাণের পাশাপাশি বোয়ান ভাওয়ান মানুষের মনোজগতের বিষয়াবলিও ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। রোমান ভান্তরায়নে সম্রাটদের গুণগান করতে বাধ্য হতেন। তারা সম্রাটকে দেব, দৈব্য পুরানো বিভিন্ন চরিত্ররূপে নির্মাণ করতেন। খিলান ও বিভিন্নভাবে নির্মাণের সম্রাটের বিজয় মূর্তি ও রোমে বিজয়াভিযানের চিত্র খোদাই করা হতো।

আরও দেখুন:   গ্রিক সভ্যতার অবদান আলোচনা কর

১৬. চিত্রশিল্প

চিত্রশিল্পের মাধ্যমে রোমানদের শিল্পকলার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। রোমানরা বাস্তবমুখী চিত্র অঙ্কনের পারদর্শী ছিল। চিত্রশিল্পের মাধ্যমে প্রধান ছিল মুরাল ও প্রাচীর চিত্র। রোমানদের টেবিল আচ্ছাদনের বস্ত্র, বাসন- কোসন, পর্দা, পানির পাত্র, আসবাবপত্র ও বিভিন্ন ধাতব দ্রব্য ছিল অত্যন্ত রুচিশীল, উন্নত ও শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, স্বমহিমায় উদ্ভাবিত রোমান সভ্যতায় সক্রীয় ও স্ববিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্যেই বিশ্ব ইতিহাসে রোমান সভ্যতা এক অবিস্মরণীয় জায়গা করে নিয়েছে।

অতএব, এই আর্টিকেলে থেকে আপনারা রোমান সভ্যতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারলেন। লেখাটি থেকে উপকৃত হলে অবশ্যই শেয়ার করে অন্যদেরও জানিয়ে দেবেন।

Related Posts