সরকারি নিরীক্ষা
বিভিন্ন সরকারি বিভাগের লেনদেনগুলোর হিসাব পরীক্ষার জন্য সরকারের অধীনে একটি আলাদা হিসাব ও হিসাব নিরীক্ষা বিভাগ আছে, যা সরকারি নিরীক্ষা নামে পরিচিত। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল এই বিভাগ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন। এই বিভাগ শুধু সরকারি হিসাবই পরীক্ষা করে থাকে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের আইন অনুসারে নিরীক্ষার কাজ সম্পাদন করা হয়। তবে সরকারি লেনদেনের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে হওয়ায় সরকারি নিরীক্ষার কাজ ধারাবাহিকভাবে হয়ে থাকে।
যেক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে সরকারি কাগজপত্রের নিরীক্ষার কাজ পরিচালনা করা হয়, তাকে সরকারি নিরীক্ষা বলে। সরকারি নিরীক্ষা গণ-কৈফিয়ত দেওয়ার এক সুনিশ্চিত ও তাৎপর্যপূর্ণ উপায়। এছাড়া আর্থিক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে একে গণ্য করা হয়।
সরকারি হিসাবপত্রের পরীক্ষাকে বিধিবদ্ধ নিরীক্ষাও বলা হয়। বিভিন্ন সরকারি বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের হিসাবপত্র নিরীক্ষার কাজ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অডিট অ্যান্ড এ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টের উপর অর্পিত হয়। অডিটর জেনারেলের নির্দেশনায়, নিয়ন্ত্রণে ও অধীনে এই বিভাগগুলো নিরীক্ষার কাজ পরিচালনা করে। এখানে বহিরাগত নিরপেক্ষ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে দিয়ে হিসাবপত্র পরীক্ষার কাজ চালানো হয় না। তাই অন্যান্য বিধিবদ্ধ নিরীক্ষার সঙ্গে সরকারি নিরীক্ষার মূলগত পার্থক্য দেখা যায়।
সরকারি হিসাবপত্রের নিরীক্ষার কাজ শেষ হলে অডিটর জেনারেল তার রিপোর্ট রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেন। রাষ্ট্রপতি ঐ রিপোর্ট সংসদে উপস্থিত করার নির্দেশ দেন।
সম্পর্কিত আর্টিকেল
নিরীক্ষা কি? নিরীক্ষার উদ্দেশ্য কি?
নিরীক্ষার বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর
নিরীক্ষা কত প্রকার ও কি কি | নিরীক্ষার প্রকারভেদ
সরকারি নিরীক্ষার উদ্দেশ্য
সরকারি নিরীক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১) সরকারি তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ যে পরিমাণ ব্যয় করেছে তাতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে কিনা তা দেখা;
২) যে পরিমাণ তহবিল ব্যয় করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেই পরিমাণ ব্যয় করা হয়েছে কিনা এবং যে অফিসার ব্যয় করেছেন তিনি উপযুক্ত ব্যক্তি কিনা তা দেখা;
৩) যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়েছে তা যে সঠিক ব্যক্তিকে করা হয়েছে এবং সেই ব্যক্তি প্রাপ্তি স্বীকার করেছে এবং দ্বিতীয় বার অর্থ প্রদানের দাবি মেটানো যে সম্ভব নয় তা নথিবদ্ধ করা হয়েছে কিনা;
৪) নির্দিষ্ট ব্যয় সঠিকভাবে হিসাবে শ্রেণীবিন্যাস করে ধার্য করা হয়েছে এবং যদি কোনো ব্যয় কোনো ঠিকাদারের, কর্মীর কিংবা অন্য ব্যক্তির ব্যক্তিগত নামে ডেবিট করা হয়, কিংবা যে কোনো আইন বা নির্দশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় করতে হয় তাহলে তা নির্দিষ্ট হিসাবে লেখা হয়েছে কিনা পরীক্ষা করা;
৫) প্রাপ্তি সংক্রান্ত নিরীক্ষার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ পাওনা আছে তা আদায় হয়েছে, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তা যাচাই করা হয়েছে এবং যা পাওয়া গেছে তা সংশ্লিষ্ট হিসাবের ক্রেডিট দিকে দেখানো হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে;
৬) যে সব স্টোর এবং মজুতদ্রব্যের হিসাব মূল্যের ভিত্তিতে রাখা হয়, সেক্ষেত্রে সেগুলোর দাম ন্যায়সঙ্গত সঠিকতার সঙ্গে মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং মূল্যের প্রাথমিক হার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করে দেখা এবং বাজার দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে পরিমার্জন করা হয়েছে কিনা তা দেখা;
৭) দ্রব্যগুলোকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর গণনা করা হয়েছে এবং হিসাব বই-এ যে জের দেখানো হয়েছে তার সঠিকতা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা করা এবং দ্রব্যগুলোর মোট দাম সাধারণ হিসাবে প্রদর্শিত বকেয়ার পরিমাণের সঙ্গে মিলে গেছে কিনা এবং পরিমাণগত মোট হিসাবও মিলে গেছে কিনা তা দেখা;
৮) আর্থিক যথার্থতার মান হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে স্বীকৃতি সাধারণ নীতিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যয়গুলো নির্বাহ করা হয়েছে; যেমন-
ক) নির্দিষ্ট ব্যয় চাহিদার বেশি হবে না এবং প্রতিটি সরকারি চাকুরে সরকারি তহবিল থেকে নির্বাহ করা ব্যয়ের ক্ষেত্রে তীক্ষ্ণ নজর রাখবেন যেমন একজন সাধারণ ব্যক্তি তার নিজস্ব অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে নজর রাখবেন।
খ) কোনো কর্তৃপক্ষ প্রত্যক্ষভাবে কিংবা পরোক্ষভাবে নিজের সুবিধার জন্য ব্যয় অনুমোদন করার ক্ষমতা ব্যবহার করবেন না।
গ) সরকারি অর্থকে কোনো বিশেষ ব্যক্তির কিংবা সম্প্রদায়ের সুবিধার্থে ব্যবহার করা হবে না যদি না ১) ব্যয়ের পরিমাণ খুবই নগণ্য হয়; ২) আদালতের আদেশ অনুযায়ী যে দাবি মেটানো হয়, কিংবা ৩) কোনো স্বীকৃতি নীতি বা প্রথা অনুযায়ী ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
৯) ভ্রমণ ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা আইন অনুযায়ী অনুমোদন করা হয়েছে এবং এই সব ভাতা এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে যাতে প্রাপকের আয়ের উৎস হিসেবে গণ্য না হয় তা দেখা।