Home » বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর
বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য,

বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও এদেশের কৃষিব্যবস্থা অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ। প্রাচীন চাষ পদ্ধতিই এদেশের কৃষির মূলভিত্তি। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের কৃষির বিশেষ কতগুলো বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।

বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের কৃষির বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচিত হলো-

১. প্রাচীন চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশের কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রাচীন পদ্ধতির চাষাবাদ। এদেশে এখনও সনাতন পদ্ধতিতে গরু ও লাঙল দ্বারা চাষাবাদ করা হয়। ফলে ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা অধিক থাকা সত্ত্বেও একরপ্রতি ফলন অনেক কম হয়। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে তারা কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ শুরু করেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর

২. ভূমিহীন কৃষক

বাংলাদেশে কৃষিকাজে নিয়োজিত জনগণের এক বিরাট অংশ ভূমিহীন কৃষক হওয়ায় কৃষিকাজে খুব একটা অনুপ্রেরণা পায় না।

৩. প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা

বাংলাদেশের কৃষিকাজ অতিমাত্রায় প্রকৃতিনির্ভর। তাই প্রকৃতির খেয়ালখুশির ওপর দেশের কৃষির সাফল্য অথবা ব্যর্থতা নির্ভরশীল। যেমন- বৃষ্টিপাত নিয়মিত ও পরিমিত হলে ফসল ভাল হয় এবং অনিয়মিত হলে ফসল কম বা নষ্ট হয়ে যায়।

৪. ক্ষুদ্র কৃষিভূমি

বাংলাদেশের কৃষিজমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত। ফলে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কৃষিকাজ করা সম্ব হয় না। এটা কৃষি ফলনের স্বল্পতার অন্যতম কারণ।

৫. জীবিকাভিত্তিক চাষাবাদ

বাংলাদেশের কৃষির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো জীবিকাভিত্তিক চাষাবাদ। এদেশের কৃষকরা কেবল পারিবারিক চাহিদা পূরণের জন্যই চাষাবাদ করে থাকে। ফলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ কম হয়।

৬. অধিক পতিত জমি

বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট আবাদযোগ্য কৃষিজমির প্রায় ২৪% অনাবাদি বা পতিত অবস্থায় থাকে। জলাবদ্ধতা, পর্যায়ক্রমিক চাষে কৃষকদের অনীহা, বীজ ও সেচের অভাব প্রভৃতি এর অন্যতম কারণ।

৭. মাথাপিছু জমির পরিমাণ কম

বাংলাদেশে লোকসংখ্যার অনুপাতে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ অত্যন্ত কম। মাথাপিছু আবাদি জমির পরিমাণ মাত্র ০.২৫ একর। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

৮ . দরিদ্র ও স্বাস্থ্যহীন কৃষক

বাংলাদেশের কৃষকরা অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ায় উপযুক্ত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার অভাবে তাদের শারীরিক ও মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটে না।

৯. স্বল্প উৎপাদনক্ষমতা

বাংলাদেশে একর প্রতি শস্য উৎপাদনক্ষমতা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশকের অভাব, আধুনিক যন্ত্রপাতির অব্যবহার, সনাতন চাষ পদ্ধতি, অশিক্ষা, দারিদ্রদ্র্য, মূলধনের অভাব প্রভৃতি কারণে এদেশে কৃষির উৎপাদন কম।

১০. সেচ ব্যবস্থার অভাব

বাংলাদেশের কৃষিতে আধুনিক সেচ ব্যবস্থায় যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই এদেশের কৃষি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।

১১. ভূমির উর্বরতা

বাংলাদেশের কৃষিজমির উর্বরতা অত্যন্ত বেশি। ফলে প্রয়োজনমাফিক সার প্রয়োগ না করেই বারবার ফসল ফলানো হয়।

১২. কৃষিজ পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ

বাংলাদেশে পূর্বে জমিতে একটি ফসল কাটার পর অন্য ফসল লাগানোর পূর্ব পর্যন্ত জমি পতিত রাখত। ইদানিং ধানের সাথে সাথে সরিষা, ডাল, মসুর লাগানো হয়। অনেক জায়গায় একসাথে দুইটি ফসলও করা হয়। ইদানিং বিভিন্ন ধান ক্ষেতে মৎস্য চাষও করা হচ্ছে।

লৌহ ও ইস্পাত শিল্প কাকে বলে? এ শিল্প গড়ে ওঠার কারণ সমূহ কি কি?

১৩. শস্য নিবিড়তা

বাংলাদেশে কৃষিজমিতে নিবিড়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক বছর আগে ছিল ১৯৫ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ৪০০ শতাংশে পৌঁছেছে।

১৪. কৃষিজ পণ্যের প্রকার

এদেশের কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো খাদ্যের প্রয়োজনে অধিক ধানের চাষ, তারপর পাট উৎপাদন। ফলে ধান ও পাট প্রধান কৃষিজ পণ্য।

উপসংহার

বাংলাদেশের কৃষির উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য সমূহে বাংলাদেশের কৃষির অনুন্নত ও অসহায় চিত্রই ফুটে ওঠে। জাতীয় আয়ের সিংহভাগ কৃষি হতে আসে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও কৃষি এখনো পশ্চাৎপদ এবং বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত।

Related Posts