Home » অর্থনৈতিক কার্যাবলি কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?
অর্থনৈতিক কার্যাবলি কাকে বলে, অর্থনৈতিক কার্যাবলি কত প্রকার,

অর্থনৈতিক কার্যাবলি কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি?

by Susmi
0 comment

অর্থনৈতিক কার্যাবলি

জীবিকা নির্বাহের নিমিত্তে মানুষের অর্থ উপার্জনের যাবতীয় কার্যাবলিকে অর্থনৈতিক কার্যাবলি বলে। পৃথিবীর যে সকল দেশ কৃষি কাজের উপর অধিক নির্ভরশীল তারা অর্থনৈতিক ভাবে পশ্চাৎপদ। অন্যদিকে যেসব দেশ শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর যত সমৃদ্ধ তারা অর্থনৈতিক ভাবে তত উন্নত।

অর্থনৈতিক কার্যাবলির সংজ্ঞা

যেসব কাজ অর্থের সাথে সম্পর্কিত সে সব কাজকে অর্থনৈতিক কার্যাবলি বলে। অর্থ বা আর্থিক মূল্যে নিরাপণযোগ্য মানুষের যাবতীয় বার্যাবলিই অর্থনৈতিক কার্যাবলি হিসেবে গণ্য। আর যে সব কাজ অর্থের মাধ্যমে নিরূপণ করা যায় না সে সব কাজ অর্থনৈতিক কার্যাবলি হিসেবে গণ্য হবে না। যেমন- মায়ের ভালোবাসা। নিম্নে কয়েকজন মনীষীর সংজ্ঞা উদ্ধৃত করা হলো-

“প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ, পণ্যসামগ্রীর উৎপাদান ভোগ ও বিপণন পেশাদারি সেবা ও বিনোদনমূলক কর্মকার্ড ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব ধরনের কাজই অর্থনৈতিক কার্যাবলি।”- John W. Alexander.

“পণ্যদ্রব্য ও সেবা উৎপাদন, ভোগ ও বিনিময় সংশ্লিষ্ট কার্যাবলিই হচ্ছে অর্থনৈতিক কার্যাবলি”। – – Prof. Thomas.

ভৌগোলিক পরিবেশ কি? ভৌগোলিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি?

“পণ্যসামগ্রী ও সেবা উৎপাদন, বিনিময় এবং ব্যবহারের সাথে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো মানবীয় আচারণের প্রকাশেই অর্থনৈতিক কার্যাবলি।” –অধ্যাপক সিরাজুল সলাম চৌধুরী।

সুতারং জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে যে সব কার্যাবলি সম্পদান করে থাকে তাদের সমষ্টিকে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি বলে।

অর্থনৈতিক কার্যাবলি কত প্রকার?

অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ বৃত্তি

যে বৃত্তি দ্বারা মানুষ প্রকৃতির নিকট হতে খাদ্য দ্রব্য সংগ্রহ করে এবং শ্রমশিল্প গঠন ও শিল্পের জন্য কাঁচামাল যোগায় তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ বৃত্তি বলে। এর আওতাধীন বৃত্তিগুলো হলো-

ক. কৃষিকার্য: পৃথিবীর প্রধান অর্থনৈতিক কার্যাবলি হলো কৃষিকাজ। মাটিতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করাকেই কৃষিকার্য বলা হয়। ভূমিকর্ষণ, জমিতে সার প্রদান ও পানি সেচ প্রভৃতি ক্রিয়া কৃষিকার্যের অন্তর্গত। যে সকল দেশের মৃত্তিকা ও জলবায়ু কৃষির অনুকূল সেখানে মানুষ প্রধানত কৃষিজীবী।

খ. পশু শিকার: অতি প্রাচীনকাল হতেই পশু শিকার মানুষের একটি বিশেষ উপজীবিকা হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। চরমভাবাপন্ন জলবায়ুর জন্য আলাস্কা, গ্রীনল্যান্ড প্রভৃতি তুন্দ্রা ভূমিতে কৃষিকার্য চলে না বিধায় পশু শিকার এ অধিবাসিদের প্রধান পেশা।

গ. মৎস্য শিকার: সভ্যতা শুরুর আগে থেকেই মৎস্য শিকার মানুষের অন্যতম প্রধান উপজীবিকা। সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের সমুদ্র, বিশেষত জাপান উপকূল, উত্তর সাগর ও নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের নিকটে প্রচুর মৎস্য পাওয়া যায়। জাপানের প্রায় ৩০ লক্ষ লোক মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

ঘ. পশুপালন: যে সকল অঞ্চলে প্রাণী ও জীবের উপযোগী জলবায়ু বিদ্যমান ও চারণোপযোগী তৃণভূমি আছে সেকল অঞ্চলে পশুপালন মানুষের একটি প্রধান উপজীবিকা।

ঙ. খনিজ সম্পদ আহরণ: ভূ-গর্ভ হতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে খনিজ সম্পদ সংগ্রহ করাকে খনিজ সম্পদ আহরণ বলে।’ যে সকল অঞ্চলে খনিজ সম্পদ বিদ্যমান সে সকল অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রধান উপজীবিকা খনিজ সম্পদ উত্তোলন। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বহুলোক খনিজ শিল্পের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

২. শ্রম শিল্প বৃত্তি

বর্তমান কালের মানুষ প্রকৃতি থেকে সংগৃহিত বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত করতে সক্ষম। যেমন-বন, উপকরণ থেকে কাগজমণ্ড, হার্ডবোর্ড, নৌযান, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরনের উৎপন্ন দ্রব্য, গম থেকে রুটি, তুলা থেকে সুতা, কাপড়, গালিচা ইত্যাদি তৈরি করা যায়।

৩. গঠন বৃত্তি

অধিকাংশ সামগ্রী বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে এ সকল সামগ্রীর পাইকারি, খুচরা বিক্রয় ও বৈদেশিক বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্রিয়াকলাপ তৃতীয় পর্যয়ের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত কার্যকলাপের ব্যাপক প্রসার হচ্ছে।

বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি আলোচনা কর

৪. বণিক বৃত্তি

বর্তমান সময়ে বাণিজ্য এবং সেবাধর্মী কার্যকলাপের মাঝে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে যারা সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত যেমন-শিক্ষক, ডাক্তার, নাস, ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

৫. প্রত্যক্ষ সেবা বৃত্তি

অতি উচ্চ পর্যায়ের পেশাদারি বিনোদন, বৈজ্ঞানিক গবেষক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইত্যাদি এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ক্রিয়াকলাপ। পৃথিবীর বিত্তশালী অঞ্চলের অনেক মানুষ এ ধরনের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। যেমন-যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, যুক্তরাজ্য, জাপান ইত্যাদি।

উপসংহার

পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভৌগোলিক পরিবেশের বিভিন্নতার কারণে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলির বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য কোনো না কোনোভাবে অর্থনৈতিক কার্যাবলির সাথে সংশ্লিষ্ট।

Related Posts