Home » যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা | বাংলা রচনা
যুদ্ধ নয় শান্তি চাই ছবি, যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা,

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা | বাংলা রচনা

by Susmi
0 comment

“যুদ্ধ নয় শান্তি চাই” এই স্লোগানটি আজ দিকে দিকে ধ্বনিত হচ্ছে। মানুষ যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক রূপ আর দেখতে চায় না। অনর্থক প্রাণহানি, সম্পদের ক্ষয় সুস্থ মস্তিষ্কের কারোর কাম্য হতে পারে না। তাই আসুন, আমরাও আজকের রচনার মাধ্যমে জোর গলায় বলি, যুদ্ধ নয় শান্তি চাই ।

যুদ্ধ নয় শান্তি চাই রচনা

যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা

যুদ্ধ মানে আমার প্রতি তোমার অবহেলা।

———-নির্মলেন্দু গুণ

ভূমিকা

বর্তমান দুনিয়া পরাক্রমশালী বিভিন্ন রাষ্ট্রের পারমাণবিক মরণযুদ্ধের আয়োজনে ত্রস্ত, শঙ্কিত। তবুও আধুনিক মারণাস্ত্রের ধূমায়িত সমস্যার মধ্যেই শান্তির দীপশিখাটি প্রজ্বলিত। রণদামামার মাঝেও শান্তির বাণী ধ্বনিত হয় যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, মৃত্যু নয় জীবন চাই। শান্তিকামীদের শ্লোগান: Live and let live. একবিংশ শতকের প্রথম পাদে দাঁড়িয়ে বিশ্ব আজ প্রকৃত প্রস্তাবে যুদ্ধ ও শান্তির সন্ধিলগ্নের মুখোমুখি। শান্তি চায় না এমন কথা বিশ্বশান্তির বিরুদ্ধবাদীরাও মুখে আনবে না। তবু বিশ্ব আজ চরম সংকটের ভিতর দিয়ে চলছে। পরাশক্তির অধিকারী দেশগুলোর অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ভাটা পড়ে নি। নিত্যনতুন মারণাস্ত্র নির্মাণের ব্যয়ভার কমাতে কোনো পরাশক্তিই আজ পর্যন্ত আগ্রহ দেখায় নি। তাদের সামরিক শক্তির দম্ভে একের পর এক অঞ্চল উপদ্রুত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায়ও আমরা বলতে চাই – যুদ্ধ নয় শান্তি চাই ।

আরও দেখুন:   দেশ ভ্রমণ রচনা – পরীক্ষায় ১০০% কমন

প্রাচীন যুদ্ধ

প্রাচীন মহাকাব্যগুলো হলো যুদ্ধের কাব্য। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি সভ্যতার অঙ্কুরোদগম হয়েছে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আধুনিক সমাজের সুমহান আদর্শ স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব, মৈত্রী, সমাজবাদ ইত্যাদি বিপ্লবের মধ্য দিয়েই বারবার নিজ মূল্য যাচাই করে নিয়েছে। খুঁজেছে শান্তির পথ।

পারমাণবিক যুদ্ধ

যষ্ঠদশ-সপ্তদশ শতকের ধর্মযুদ্ধ বা উনিশ শতকের জাতীয়তাবাদের যুদ্ধের তুলনায় বিশ শতকের যুদ্ধ অতি নৃশংস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিশ বছর পরেই আবার রক্তাগ্নিশিখা প্রজ্বলিত করে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। জার্মান, জাপান, ইতালি অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির প্রতিরোধ এ যুদ্ধে শান্তিকামী মানুষের গলায় জয়মাল্য পরিয়েছিল, কিন্তু ১৯৪৫ সালের সেই কলঙ্কিত দিন দুটিতেই ‘৬ ও ৯ আগস্ট’ হিরোসিমা-নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ, অগণিত মানুষের বীভৎস চিতাশয্যা রচনা করে। তারপর শুরু হয় পারমাণবিক মারণাস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা।

বিভিন্ন যুদ্ধে বিশ্বের ধ্বংসাত্মক রূপ

হিরোসিমা-নাগাসাকির গণকবরের নির্মমতায় আজ সভ্যতা ম্রিয়মাণ। তবুও আজকের আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী সভ্যতা তার মারণযজ্ঞের হোমানল প্রজ্বলিত করে চলেছে পারমাণবিক বোমা তৈরি করে। যেই বোমার বিস্ফোরণ ক্ষমতা ১২ মিলিয়ন টন টি. এন, টি। ১৯৪৫ সালে যে বোমা বিস্ফোরণ হয় তার ক্ষমতা ছিল ২০ হাজার টন টি,এন,টি। যুদ্ধাস্ত্রের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১০টি আণবিক বোমা বহনকারী MX আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের প্রত্যেকটি বোমা ৬,০০,০০০ টন টি.এন.টি, ক্ষমতা যুক্ত। নির্দিষ্ট নিশানায় আঘাত হানতে পাশি-২, ক্রুজ- ২ ক্ষেপণাস্ত্রের সময় লাগে মাত্র ৪-৬ মিনিট, আধুনিক নিউট্রন বোমার বিস্ফোরণ ১,৪০০ মিটার দূরবর্তী স্থানে বসবাসকারী মানুষকেও মহাশশ্মশানের চিরনিদ্রায় মগ্ন করবে। কয়েক বছর আগের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রতিবছর ৪,০০,০০০ মিলিয়ন ডলার ধ্বংসাত্মক অস্ত্রনির্মাণের জন্যে ব্যয় করা হয়। ৪৫-এর পর বিশ্বযুদ্ধের রণলিপ্সা স্তিমিত হলেও বিচ্ছিন্ন যুদ্ধের রণদামামা শ্রবণে পৃথিবী আজ আতঙ্কিত। মহাযুদ্ধের মহাপ্রান্তরে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি কোরিয়ার যুদ্ধ, বঙ্গোযুদ্ধ, ৬২-র কিউবা সংকট, ভিয়েতনামে মার্কিনের নৃশংসতা, আফগানিস্তানের নৃশংসতা। আরও যুদ্ধ আছে- আরব-ইসরাইল যুদ্ধ। ইরান-ইরাকের যুদ্ধ খেলা। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় সংকটকে কেন্দ্র করে ইরাকের বিরুদ্ধে বহুজাতিক বাহিনীর রণোন্মত্ততা। ২০০৩ সালের শুরুতে ইরাকে চলেছে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর নৃশংস অগ্রাসন। ফিলিস্তিনে চলছে মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরাইলের নিষ্ঠুর বর্বরতা। ইউক্রেনে চলছে রাশিয়া বনাম যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের শক্তি পরীক্ষা।

যুদ্ধ কেনো বাঁধে

জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে লড়াই করতে হয়। যে লড়াই অন্যকে পর্যুদস্ত করার লড়াই নয়, নিজের অস্তিত্বকে সুন্দরভাবে টিকিয়ে রাখার লড়াই। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ হচ্ছে একে অন্যকে পর্যুদস্ত, বিধ্বস্ত করার যুদ্ধ। বর্তমান যুগে মানুষের জীবনের সমাধি রচনার জন্যে মানুষের হিংসা, দ্বেষ ও লোভ-লালসায় একদল মানুষ বীভৎস জিঘাংসায় মেতে ওঠে। মানুষের যা আছে তাতে সে সুখী নয়, সে আরও চায়। সে চায় অন্যকে পদানত করতে। এ লালসা তাকে তার অধিকার সম্প্রসারিত করতে প্রলুব্ধ করে। এ সম্প্রসারণশীলতাই সকল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মূল কারণ। বিশ শতকে যে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তার মূল কারণ এ সম্প্রসারণশীলতা।

যুদ্ধের পরিণাম

যুদ্ধের ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে অগণিত জনপদ, অসংখ্য মানুষ। বিজ্ঞানের ব্যাপক অগ্রগতি মানুষের জীবনে যুদ্ধের মাধ্যমে নিয়ে এসেছে সর্বনাশা ও ভয়াবহ ধ্বংসলীলা। তাই আজকের দিনে যুদ্ধবিগ্রহের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। শক্তির সাধনায় আজকের বিশ্ব দুটি প্রধান রাষ্ট্র আমেরিকা ও রাশিয়ার পৃথক পৃথক জোটে আবদ্ধ হয়ে আছে। নিজের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য এ বৃহৎ শক্তি দুটি অনবরত যুদ্ধ সাজে সজ্জিত হচ্ছে। প্রতিদিন আবিষ্কৃত হচ্ছে নিত্যনতুন মারণাস্ত্র। ফলে সারা বিশ্বে এখন অস্ত্রের ঝনঝনানি। ফিলিস্তিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ; আগ্রাসনী ইসরাইল শক্তির মত্ততায় ন্যায়নীতি বিসর্জন দিচ্ছে। আমেরিকার ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণে অসংখ্য লোক নিহত হয়েছে, নষ্ট হয়েছে অনেক স্থাপত্য শিল্প, গণতন্ত্রের নামে মানবতার চরম অবমূল্যায়ন ঘটেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লক্ষ লোককে শহিদ হতে হয়েছে। সর্বনাশা যুদ্ধের পরিণাম ভয়াবহ আকারে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় নিশ্চিহ্ন হয় বস্তু জনপদ, ফসলের বিরাট মাঠ পুড়ে আবাদের অযোগ্য হয়ে যায়। বোমার কবলে পড়ে অসংখ্য মানুষের জীবনের অবসান ঘটে। কলকারখানা, বাড়িঘর ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতির কোন তুলনা থাকে না। এ সর্বগ্রাসী ধ্বংসলীলা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে না পারলে বিশ্বের সভ্যতার অবসান অনিবার্য।

যুদ্ধের অবসান কেন হয় না

যুদ্ধের ভয়াবহতার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘লীগ অব নেশনস’ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তিকামী মানুষের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ’ বা ‘জাতিসংঘ’। এ জাতিসংঘ শান্তির লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করলেও যুদ্ধমান দেশগুলোর জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না। মনে করা হয়েছিল নিরস্ত্রীকরণ শান্তির পথকে নিশ্চিত করবে। সেজন্যে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রকার চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছে। যেমন– ন্যাটো চুক্তি, ওয়ারশ চুক্তি, অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি, পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তৃতি রোধ চুক্তি ইত্যাদি। ১৯৮৫ সালে জেনেভা নগরীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ও সোভিয়েত নেতা গর্বাচেভের মধ্যে এক শান্তি আলোচনা হয়। সম্প্রতি দুদেশের মধ্যে শান্তির জন্য পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ, নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি আলোচনা চলছেই। কিন্তু তবুও স্থায়ী কোনো শান্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ উভয় দেশই কেউ কারো ক্ষমতা কমাতে রাজি নয়। একজনের প্রস্তাবে অন্যজন সম্মত হয় না; কেউই কারো শ্রেষ্ঠত্ব হারাতে রাজি নয়। যুদ্ধমান অনুন্নত দেশগুলোও এদেরই মুখাপেক্ষী, তাই শান্তির ললিত বাণী দেশে দেশে আকাঙ্ক্ষিত হয়েও ধ্বনিত হতে পারছে না।

যুদ্ধ নয় শান্তি

বিশ্বের বুকে যুদ্ধের ধ্বংসলীলার অবসান ঘটিয়ে সৃষ্টি করতে হবে শান্তির রাজ্য। মানুষের জন্য এ শান্তি অপরিহার্য। তাই শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে সচেতন হতে হবে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টায়। অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো যে বিশাল পরিমান অর্থ ব্যয় করছে তা অবশ্যই রোধ করতে হবে এবং দুঃখী মানুষের কল্যাণের জন্য সে অর্থ কাজে লাগাতে হবে। যুদ্ধের অবসানের জন্য সারা বিশ্বের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বর্ণবিদ্বেষ অবলুপ্ত করতে হবে; জাতিগত ঈর্ষার অস্তিত্ব দূর করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদের চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে। আধিপত্যবাদ আর ঔপনিবেশিকতাবাদের কথা ভুলতে হবে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোকে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য সারা বিশ্বের মানুষকে ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। আর শান্তির কাজে জাতিসংঘের কর্মসূচিকে বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে হবে।

বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ আজ শান্তি চায়। কারণ শান্তিতেই আছে মানবজীবনের পরিপূর্ণ সমৃদ্ধি। শান্তি বিরাজমান থাকলে শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তথন অসম্ভর মনে হবে না। সামাজিক জীবন হবে নির্বিঘ্ন। তাই আমাদের শেষ কথা-যুদ্ধ নয় শান্তি চাই, মৃত্যু নয় জীবন চাই।

উপসংহার

শান্তিই বিশ্বকে সমৃদ্ধিতে ভরে দিতে পারে। যুদ্ধের ফল কখনো শুভ হতে পারে না। শান্তি সকলেরই কাম্য হওয়া উচিত। কিন্তু মানুষ যদি সৎ না হয়, মানুষের মন থেকে যদি হিংস্রতা দূরীভূত না হয় তাহলে শান্তি চিরকাল মানুষের নাগালের বাইরে সোনার হরিণই থাকবে। অন্তরে বিষের ভাণ্ড রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালালে তা প্রহসনেই পরিণত হবে। বিশ্বের সকল জাতি যদি পারস্পরিক স্বাধীনতার প্রতি মর্যাদাশীল হয়, সকলকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবন্ধ করতে পারে, তবেই বিশ্বে বইতে পারে শান্তির সুবাতাস, বিশ্বের কোটি কোটি জনতা আজ সেই শুভ দিনের প্রতীক্ষায় ব্যাকুল।

Related Posts