প্রাচীন প্রস্তর যুগ
প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রথম ভাগকে পুরোপলীয় বা প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলা হয়। মানুষ পাথরের তৈরি হাতিয়ারকে নির্ভর করে জীবন নির্বাহ করতো বলে এ সময়কালকে প্রাচীন প্রস্তর যুগ বা পুরোপলীয় যুগ বলা হয়। গ্রিক শব্দ ‘Plaious’ অর্থ প্রাচীন এবং ‘Lithas’ অর্থ পাথর শব্দ দুটির সমন্বয়ে ইংরেজি Palaeolithic শব্দের উদ্ভব হয়েছে। সুতরাং প্রাচীন পাথর নির্ভর সমাজেকেই প্রাচীন প্রস্তর যুগ বা পুরোপলীয় যুগ বলা হয়। ঐতিহাসিক জন জিউস বলেন, “The first and oldest of the primitive cultures which devised and used stone implements is called the old stone age” অর্থাৎ প্রাচীন প্রস্তর যুগ বা পুরোপলীয় যুগ বলতে ইতিহাসের সেই সময়কালকেই বুঝায় যেখানে সমাজ ও সংস্কৃতি পাথর নির্মিত হাতিয়ারের ব্যবহারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।
আরও পড়ুন: সামাজিক ইতিহাসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
এ যুগ দীর্ঘ সময়ব্যাপী মানব সভ্যতায় স্থায়ী ছিল। এ যুগেই মানুষ প্রথম বসতি স্থাপন করেছে। পুরোপলীয় যুগে যে সকল পাথর ব্যবহার করা হতো বা পাথরের যে সকল অস্ত্রশস্ত্র ও দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হতো যেভাবে পাওয়া যেত সেভাবেই ব্যবহার করা হতো। পুরোপলীয় যুগে মানুষের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, জীবাশ্ম প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে এ যুগের সময়কাল পঞ্চাশ হাজার বছর থেকে শুরু হয়ে পনের হাজার বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল বলে প্রাগৈতিহাসিকগণ মত প্রকাশ করেছেন। ঐতিহাসিকগণ পুরোপলীয় বা প্রাচীন প্রস্তর যুগকে তিনটি উপবিভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা-
১. প্রাথমিক প্রাচীন প্রস্তর যুগ: বিশ থেকে দশ লক্ষ বছর পূর্বে প্রথম হিম যুগের শুরুতে এ যুগের শুরুকাল এবং প্রায় এক লক্ষ বছর পূর্বে তৃতীয় আন্ত হিমযুগ পর্যন্ত এর স্থিতিকাল ছিল। এ যুগের মানুষেরা ছিল অরণ্যচারী ও গুহাবাসী। এরা বনে বনে ঘুরে খাদ্য সংগ্রহ করত। কালক্রমে এরা পাথর ঘষে সুচালো আর তীক্ষ্ণ অস্ত্র ব্যবহার বলে পশু শিকারের কৌশল আবিষ্কার করতে শুরু করে। পৃথিবীর তৃতীয় শীতল যুগে এ সমাজের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
২. মাধ্যমিক প্রাচীন প্রস্তর: আনুমানিক ৭৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার খ্রিস্ট পূর্ব অব্দ পর্যন্ত এ যুগের অস্তিত্ব ছিল বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। এ যুগের মানুষ আগুনের ব্যবহার জানতো। আবরন হিসেবে পশুর চামড়া ব্যবহার করতো। এ সময়ে মানুষ পাথরের তৈরি ঘরবাড়ি তৈরি করা শুরু করে। শিকারের জন্যে পাথরের তৈরি অস্ত্র ও পশুর হাড় দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ব্যবহার্য সামগ্রী তৈরি এ সময়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৩. শেষ প্রাচীন প্রস্তর: ঐতিহাসিকগণের মতে খ্রিস্টপূর্ব ৫০,০০০ অব্দ থেকে ১০,০০০ অব্দ পর্যন্ত এ পর্যায়ের স্থায়িত্বকাল ছিল। এ সময়ে পৃথিবীর ভূভাগ ক্রমশ গরম ও আদ্র হয়ে উঠে। ফলে মানুষ পশু ও মৎস শিকারে অধিক আগ্রহী হয়ে পড়ে। কালক্রমে মানুষ এ সময়ে নতুন নতুন আবিষ্কার, উদ্ভাবন ও সমাজবদ্ধ হয়ে মানুষ সভ্যতাকে গতিশীল করে তুলেছিল। হাঁড় নির্মিত হারপুন ও সুঁচ আবিষ্কারের ফলে পশু শিকার করা অনেকটাই সহজ হয়ে পড়েছিল।
2 comments
[…] আরও পড়ুন: প্রাচীন প্রস্তর যুগ সম্পর্কে আলোচনা […]
[…] প্রাচীন প্রস্তর যুগ সম্পর্কে আলোচনা […]
Comments are closed.