Home » প্রাচীন যুগ কি? প্রাচীন যুগের বৈশিষ্ট্য সমূহ লেখ।
প্রাচীন যুগ কি, প্রাচীন যুগ কী, প্রাচীন যুগ, প্রাচীন যুগের বৈশিষ্ট্য,

প্রাচীন যুগ কি? প্রাচীন যুগের বৈশিষ্ট্য সমূহ লেখ।

by Susmi
1 comment

প্রাচীন যুগ কি?

প্রায় ঐতিহাসিক যুগের পর পরই যে যুগের সূচনা হয় তাকে প্রাচীন যুগ বলা যায়। আবার অন্যভাবে বলা যায় ঐতিহাসিক যুগের প্রারম্ভকাল থেকে যে যুগের শুরু হয় তাকে প্রাচীন ঐতিহাসিক যুগ নামে অভিহিত করা হয়।

খ্রিস্টের জন্মের প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে মানুষ যখন লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করে, ইতিহাস রচনার জন্য অলিখিত উপাদানের পাশাপাশি লিখিত উপাদান পাওয়া যায় এবং নগর গড়ে তোলার মাধ্যমে নতুনভাবে জীবনযাত্রা শুরু করে তখন থেকে ঐতিহাসিক যুগ ও প্রাচীন যুগ শুরু হয়।

আরও পড়ুন:

প্রাচীন প্রস্তর যুগ সম্পর্কে আলোচনা

প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা

প্রাচীন যুগের বৈশিষ্ট্য সমূহ

নিম্নের আলোচনায় প্রাচীন যুগের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে আলোকপাত করা হলো-

১. পিতৃতান্ত্রিক ও পেশাভিত্তিক সমাজ: প্রাচীন যুগে যে সকল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তার সবগুলোতেই শাসক শ্রেণি হয় পুরুষরা। পুরুষদের দিকনির্দেশনায় সমাজ ও রাষ্ট্রসহ যাবতীয় সবকিছু পরিচালিত হতে থাকে। এ যুগে কর্মের উপর ভিত্তি করে সমাজে নানা শ্রেণির মানুষের উদ্ভব হয়। এভাবে ব্যবসায়ী ও বণিক, কারিগর, শিল্পী, কৃষক, শ্রমিক, দাস প্রভৃতি শ্রেণির উদ্ভব হয়।

সিক্রেটস অব জায়োনিজম : বিশ্বব্যাপী জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্রের ভেতর-বাহির: হেনরি ফোর্ড - Secrets of Jainism : Bishobapee Jayonisht Shorojontrer Vetor-Bahor: Henry Ford

TK. 300 TK. 270

২. লৌহের ব্যবহার: প্রাচীন যুগে মানুষ লৌহের ব্যবহার শিখে। লৌহের ব্যবহার আয়ত্ত করার ফলে কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হয়; দ্রব্যাদি ওজন করার ক্ষেত্রে সুবিধা হয় এবং সাংসারিক দ্রব্যাদি উন্নত ঘাতসহকারে তৈরি করা সম্ভবপর হয়।

৩. খাদ্য: প্রাচীন যুগের বিশেষ দিক হলো এ সময় তারা উন্নত পাত্রে ভালো প্রক্রিয়ায় খাদ্য রান্না করে খেতো। খাদ্যকে মানুষ এ সময় উপাদেয় ও সুস্বাদু দ্রব্যে পরিণত করতে সক্ষম হয়। ভালো করে রান্না করে খাওয়াতে খাদ্যগুলো প্রায়শই রোগ জীবাণু মুক্ত থাকত।

৪. পোশাক পরিচ্ছদ: প্রাচীন যুগে মানুষ বেশ উন্নত এবং বিভিন্ন প্রকার পরিধেয় বস্তু ও অলংকার তৈরি করতে সক্ষম হয়। সুন্দর সভ্যতার অধিকারী প্রাচীন যুগে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষেরা রুচিশীল ও মূল্যবান পোশাক পরিচ্ছদ ব্যবহার করত।

৫. ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞান: প্রাচীন যুগে মানুষ ভাষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নতি সাধন করতে থাকে। ৩৫০ খ্রিস্ট পূর্বঅব্দেই সুমেরীয়রা কিউনিফর্ম (চিত্রলিপি) নামক লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। রোজেটা পাথর থেকে মিশরীয়রা ‘হায়ারোগি- ফিক’ নামক লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল। ফিনিসীয়রা মিশরীয়রা লেখার অনুসরণ করতে গিয়ে ইংরেজি ভাষায় ২২টি বর্ণ উদ্ভাবন করেছিল।

৬. দাস প্রথা: প্রাচীন যুগে সুমেরীয়, এ্যাসিরীয়, মিশরীয়, পারস্য, চৈনিক, গ্রিসীয়, রোমক প্রভৃতি সমাজে দাস প্রথার প্রচলন হয়। সাধারণত যুদ্ধ বন্দীদেরকে দাসে পরিণত করা হতো। তাছাড়া সমাজের একেবারে নিম্নস্তরের লোকদের দাস বলে গণ্য করা হতো এবং দাসদের সন্তানগণও দাস হিসাবে জীবনযাপন করত। আবার অনেক সমাজে ক্রীতদাস প্রথা প্রচলিত ছিল।

৭. কৃষি: প্রাচীন যুগে কৃষি ছিল অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যের অন্যতম দিক। এ যুগে লাঙ্গলের ফলায় লৌহের ব্যবহার শুরু হয় এবং লাঙ্গল টানার জন্য পশুকে ব্যবহার করা হয়। এ পর্যায়ে এসে জমি চাষের কাজ অনেকটা সহজ হয় এবং অধিক ফসল উৎপন্ন হতে থাকে।

৮. পশুপালন: পশুকে কাজে লাগাবার সাথে সাথে প্রাচীন যুগে পশু পালনের গুরুত্ব বেড়ে যায়। পশুকে লাঙ্গল টানা, গাড়ি টানা ও মালপত্র বহনের কাজে লাগানো হয়। তাছাড়া পশুর মাংস উপাদেয় খাবার ও চামড়া প্রয়োজন মতো ব্যবহার করে সভ্যতার উন্নয়ন সাধন করা হয়।

১. শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্য: প্রাচীন যুগে শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। প্রাচীনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহু শিল্প গড়ে উঠেছিল এবং দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল।

১০. মুদ্রা অর্থনীতি: মুদ্রাভিত্তিক অর্থনীতি প্রাচীন যুগের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। সভ্যতার ইতিহাসে এশিয়া মাইনরের লিডিয়গণ সর্বপ্রথম ধাতুর মুদ্রা তৈরি করে। ইলেকট্রাম বা শ্বেত স্বর্ণ নামে পরিচিতি ধাতু দিয়ে তারা মুদ্রা তৈরি করত। প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সম্রাটগণ স্বর্ণ, রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রার প্রচলন করেন।

১১. নগর সভ্যতার সূচনা: প্রাচীন যুগে মানুষ নগর গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এথেন্স, স্পার্টা, রোম প্রভৃতি নগর গড়ে তুলে মানুষ প্রাচীন যুগে সভ্যতাকে ব্যাপকভাবে অগ্রগামী করতে সক্ষম হয়।

১২. রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থা: প্রাচীন যুগে পৃথিবীর বহু স্থানে বহু সংখ্যক পরিপূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে উঠে ও রাষ্ট্রগুলের সুনির্দিষ্ট অবস্থান, নাম ও শাসক শ্রেণী বা শাসনকর্তা ছিল। যেমন- মিশর, সুমের, ব্যবিলন, পারস্য, চীন প্রভৃতি। প্রাচীনকালে মিশরের রাজাদের ফারাও বলা হতো। রাজতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক, অভিজাততান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাই ছিল মূলত প্রাচীন যুগের রাষ্ট্র শাসনের ধরন বা বৈশিষ্ট্য।

১৩. আইন ও বিচার: প্রাচীন যুগে রাষ্ট্র, নগর ও শাসক শ্রেণি গড়ে উঠার পাশাপাশি আইন ও বিচারব্যবস্থার উন্মেষ ঘটতে থাকে। প্রাচীন যুগে খ্রিস্ট পূর্ব তিন হাজার বছর পূর্বে সুমেরীয় সম্রাট ডুঙ্গী বাণিজ্য, ঋণ, চুক্তি, ফৌজদারি অপরাধ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করেন। পরবর্তীকালে ব্যবলনীয় সম্রাট হাম্মুরাবি এ আইনগুলোকে সংকলিত ও উন্নত করে প্রকাশ করেন। প্রাচীনকালে হিব্রু জাতি ও আইনের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

১৪. চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতি: ঐতিহাসিক যুগের শুরুতে মানুষ চিকিৎসা পদ্ধতিতে ক্রমশ সাফল্য অর্জন করতে থাকে। প্রাচীন গ্রিসের Hippocrates রোগের প্রাকৃতিক কারণ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। এছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানী গ্যালেন ধমনীতে রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ভাবন করেন। সোরানাস একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। রুফাস নামক অপর চিকিৎসক সর্বপ্রথম যকৃত ও নাড়ির সঠিক বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন।

১৫. আবাসন ও স্থাপত্যিক অগ্রগতি: আবাসন ও স্থাপত্যিক ক্ষেত্রে প্রাচীন যুগের মানুষরা ব্যাপক চিত্তাকর্ষক উৎকর্ষ সাধন করতে সক্ষম হয়। খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর পূর্বেই সুমেরীয়রা জিগুরাত নামক ধর্ম মন্দির নির্মাণ করে স্থাপত্যিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মিশরীয়রা পিরামিড, সুবিশাল মন্দির (কোর্নাকের মন্দির) এবং ব্যাবিলনীয়রা সৌধ ও রাজ প্রাসাদ নির্মাণ করে খ্যাতিমান হয়েছে। তাছাড়া রোমান, গ্রিক, চীনারাসহ বহুজাতি স্থাপত্যের ক্ষেত্রে অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে প্রাচীন চীনের মহাপ্রাচীর (যার দৈর্ঘ্য ৪০২৫ কি.মি. চওড়া এতো বেশি ছিল যে প্রাচীরের উপর দিয়ে একত্রে পাঁচজন অশ্বারোহী যেতে পারত এবং উচ্চতা ছিল ২২ ফুট) স্থাপত্যের ক্ষেত্রে এক অবিস্মরণীয় কীর্তি।

Related Posts

1 comment

Comments are closed.