Home » বংশগত রোগ কি কি?
বংশগত রোগ কি কি,

বংশগত রোগ কি কি?

by Susmi
0 comment

বংশগহ রোগ সমূহ

প্রজনন ও বংশগত রোগ সমূহ জটিল এবং শরীরে এর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। এ জাতীয় বেশিরভাগ রোগের পরিণাম মৃত্যু। বেঁচে থাকলেও রোগী কষ্ট পায় এবং জীবনকে অস্বাভাবিক করে তোলে। আমাদের সকল রোগই বংশগত নয়। নিম্নে প্রজননগত ও বংশগত রোগসমূহের বিবরণ তুলে ধরা হলো।

১. হাঁপানি

হাঁপানি একটি কষ্টদায়ক রোগ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগ বৃদ্ধি পায়। হাঁপানি একটি অন্যতম বংশগত রোগ হিসেবে বিবেচিত। হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হলে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। তবে এর আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। অনেকে শিশুকালেই এ রোগে আক্রান্ত হয়। আবার অনেকে বড় হয়েও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মা-বাবা বা বংশের কারোর এ রোগ থাকলে তা বংশপরম্পরায় বিস্তার লাভ করে। নবজাতকরা তাদের মা-বাবা থেকে এ রোগ পেতে পারে। আমাদের দেশে অনেক শিশুই এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

এনজাইম কি? এনজাইমের বৈশিষ্ট্য কি কি?

২. এইচআইভি/এইডস

এইচআইভি/এইডস রোগারোগ্য ব্যাধি, একবার হলে আর রক্ষা নেই। এ রোগের পরিণতি মৃত্যু। এটি একটি মারাত্মক জেনেটিক প্রাণঘাতি রোগ হিসেবে বিবেচিত। এ রোগ বংশগতভাবে এসে থাকে। এ রোগ নিরাময় করা সম্ভব নয় প্রতিরোধই এর একমাত্র সমাধান। ১৯৮০ সালের দিকে প্রথম এ রোগের জীবাণু আবিষ্কৃত হয়। এ রোগের সঠিক চিকিৎসা এখনো উদ্ভাবিত হয়নি। এইচআইভি/এইডসকে প্রতিরোধ করার ব্যবস্থাগুলো হলো- নিরাপদ যৌন চর্চা, আক্রান্ত রোগীর রক্ত, লালা, সিরিঞ্জ ব্যবহার না করা, জনসচেতনতা সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা প্রভৃতি।

৩. ক্যান্সার

ক্যান্সারকে বলা হয় মরণব্যাধি। ক্যান্সারে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী মারা যায়। ক্যান্সার নানা ধরনের হয়ে থাকে। যেমন ব্রেন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার প্রভৃতি। রোগটি বংশগত বা জন্মগতভাবেও হয়ে থাকে। রোগটি প্রথমদিকে ধরা পড়লে এবং সঠিক চিকিৎসা হলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ রোগী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায়। এ রোগে মানুষ অনেক কষ্ট পায়। পরিবারের কারো এ সমস্যা দেখা দিলে নবাগতদের এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪. হেপাটাইটিস

হেপাটাইটিস একটি অন্যতম বংশগত রোগ। হেপাটাইটিস বিওসি নামে এ রোগ আমাদের দেশে রয়েছে। মা-বাবার দেহে এ রোগের ভাইরাস থাকলে তা ভূমিষ্ঠ সন্তানের দেহে চলে আসে। রোগটির বয়স বেশি দিন না হলেও সারাবিশ্বে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। হেপাটাইটিস-বি অন্যতম একটি মরণব্যাধি হিসেবে বিবেচিত। এ রোগে আক্রান্ত হলে ব্যক্তির লিভার নষ্ট হয়ে সে মারা যায়। কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া অতি জরুরি। রোগটি প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনতা এবং চিকিৎসা নিতে হবে। হেপাটাইটিস বি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এর নিরাময় সম্ভব।

৫. কুষ্ঠরোগ

কুষ্ঠরোগ বর্তমানে অনেক হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু একসময় আমাদের দেশে এ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরের চামড়া ও পায়ে ঘা হয়। পরিবারে একজনের হলে অন্যদের মধ্যেও কুষ্ঠরোগ ছড়িয়ে পড়ে। রোগটি বংশগত হওয়ার কারণে মা-বাবার কাছ থেকে এ রোগ সন্তানদের মধ্যেও বিস্তার লাভ করে। কুষ্ঠ রোগ নিয়ে জন্মালে শিশুর শরীরে খোসা উঠতে দেখা যায়। দেশের প্রতিটি হাসপাতালে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা করা হয়।

৬. যক্ষা

যক্ষা কোন মরণব্যাধি নয়। তবে এটি একটি বংশগত রোগ। পূর্বে বলা হতো যার হয় যক্ষা তার নেই রক্ষা। কিন্তু এ ধারণা অমূলক ছাড়া আর কিছুই নয়। কোন ব্যক্তির দুই/তিন সপ্তাহ কাশি হলে ব্যক্তির কফ পরীক্ষা করা অতি জরুরি। যক্ষার ভাইরাস পাওয়া গেলে দ্রুত রোগ মুক্তির জন্য চিকিৎসা নিতে হবে। যক্ষার ভাইরাস বাতাসে ছড়ায়। পিতামাতা এ রোগে আক্রান্ত হলে তাদের সন্তানের রোগটি হওয়াই স্বাভাবিক। বর্তমানে প্রতিটি হাসপাতালেই যক্ষা রোগের চিকিৎসা করা হয়।

৭. অটিজম

জন্মগত ও বংশগত রোগ হলো অটিজম। তবে একে অনেকেই বংশগত রোগ বলে স্বীকার করতে চায় না। মা গর্ভবতী থাকাকালে গর্ভবর্তী সন্তানের পিতামাতা কোন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে তার প্রভাব সন্তানের উপর পড়ে। ফলে গর্ভের সন্তানের বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয়। এ অবস্থায় সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অটিজমের চিকিৎসা না থাকলেও তাদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়।

পিটুইটারি গ্রন্থির কাজ কি?

৮. ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ দেহে ইনস্যুলিনের অভাবজনিত কারণে সৃষ্টি হয়। এটি একটি আজীবনের রোগ। এ রোগের লক্ষণগুলো হলো ঘন ঘন প্রস্রাব, অতিরিক্ত তৃষ্ণাবোধ, অত্যধিক ক্ষুধা, শরীরের ওজন হ্রাস চোখে কম দেখা প্রভৃতি। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ওষুধ সেবন, নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতির মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের দেশের পঞ্চাশ লক্ষের মতো ডায়াবেটিস রোগ রয়েছে। বংশগত কারণ ছাড়াও মানসিক দুশ্চিন্তা ও পরিবেশগত কারণে এ রোগ হতে পারে।

উপর্যুক্ত রোগসমূহ জন্মগত ও বংশগত কারণে সৃষ্টি হয় এবং বিস্তৃতি ঘটায়। রোগ যেমন আছে, এর প্রতিকারের জন্য আধুনিক চিকিৎসাও রয়েছে। তবে বংশগত রোগগুলো জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি। কয়েকটি রোগ আবার মরণব্যাধি। জনসচেতনতা এজন্য খুবই জরুরি।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

বংশগত রোগ সম্পর্কে আরো কিছু পশ্ন ও তার উত্তর:

বংশগত রোগ কাকে বলে?

বংশগত রোগ বলতে সেসব রোগকে বুঝায়, যেগুলো পিতামাতার শরীর থেকে সন্তানের দেহে চলে আসে। অন্যভাবে বলা যায়, ব্যক্তি তার উত্তরাধিকার থেকে প্রাপ্ত রোগসমূহ যা জিন এর মাধ্যমে বংশপরম্পরায় বিস্তার লাভ করে তাকে বংশগত বা Genetics রোগ বলে।

ক্যান্সার কি বংশগত রোগ?

ক্যান্সার রোগটি বংশগত বা জন্মগতভাবে হয়ে থাকে।

থাইরয়েড কি বংশগত রোগ?

বিশেষজ্ঞদের মতে থাইরয়েড রোগের প্রায় ৭০ শতাংশ হচ্ছে বংশগত।

Related Posts