বাজারজাতকরণ মিশ্রণের উপাদান সমূহ
নিম্নে বাজারজাতকরণ মিশ্রণের বিভিন্ন উপাদান সমূহ আলোচনা করা হলো:
১. বিজ্ঞাপন (Advertising)
পণ্য বা সেবার বিক্রি বাড়ানোর জন্য গৃহীত বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে বিজ্ঞাপন হলো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। বিজ্ঞাপন প্রচারের একটি অংগ। সত্যিকার অর্থে, বিজ্ঞাপন হলো এক ধরনের মুদ্রিত প্রচার (Printed publicity)। বিজ্ঞাপন কোনো একটি বিশেষ দ্রব্যের প্রতি একই সংগে অগণিত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং পণ্য সম্পর্কে কৌতূহল জাগিয়ে তাদেরকে সম্ভাব্য ক্রেতায় পরিণত করে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রেতা লক্ষ লক্ষ ক্রেতা সৃষ্টি করার সুযোগ পায়। দৈনিক সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বিলবোর্ড, বেতার, টেলিভিশন, শিল্প-বাণিজ্য সংক্রান্ত পত্রিকা বা সাময়িকী, হ্যান্ডবিল, পোস্টার প্রভৃতি বিজ্ঞাপনের বিভিন্ন মাধ্যম। প্রত্যেক কোম্পানিকে নির্ধারণ করতে হবে এসব মাধ্যমের মধ্যে কোন মাধ্যমগুলো তাদের পণ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। তাদেরকে আরও ঠিক করতে হবে, নির্বাচিত মাধ্যমগুলোর মধ্যে কোন্ট কতটুকু পরিমাণে ব্যবহার করা অধিকতর লাভজনক।
বাজারজাতকরণের গুরুত্ব আলোচনা কর |
২. বিক্রয় (Sales)
‘বিক্রয়’ কারবারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। পণ্যসামগ্রী বাজারে বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করাই কারবারের মূল লক্ষ্য। সফল বিক্রয়ের উপর কারবারের সামগ্রিক সফলতা নির্ভরশীল। মার্কেটিং মিশ্রণে তাই ‘বিক্রয়’ কার্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়।
৩. বিক্রয় প্রসার (Sales Promotion)
পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি করার জন্য যেসব প্রচারনামূলক পন্থা অবলম্বন করা হয় সেটিকে ‘বিক্রয় প্রসার’ বলে। বিজ্ঞাপন, প্রচারপত্র, শোরুম প্রদর্শনী, নিওন সাইনের ব্যবহার ইত্যাদি বিক্রয় প্রসারের অন্তর্ভুক্ত। বিক্রয় প্রসারের ধরন, পদ্ধতি ও পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি ও আয়তন ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়। সাধারণত ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিক্রয় প্রসারের পদ্ধতিসমূহ অধিক মাত্রায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শিল্প পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে বাজারজাতকরণ মিশ্রণের এই দিকটির উপর অধিক হারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
৪. গ্রাহক সেবা (Customer Service)
পণ্যের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে গ্রাহক সেবা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কোনো কোনো পণ্যের বেলায় গ্রাহক সেবা মার্কেটিং মিশ্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পণ্যের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত, বিক্রয়োত্তর সেবা, গ্রাহকের বাড়িতে পণ্য পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা, যন্ত্রপাতি জাতীয় পণ্যের ব্যবহার সম্পর্কে গ্রাহক বা তার কর্মচারীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া ইত্যাদি গ্রাহকসেবার অন্তর্ভুক্ত।
৫. গণসংযোগ (Public Relations)
কারবারি জগতে এবং সমাজে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হলে পণ্যের কাটতি বাড়ার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়। তাই কারবারি প্রতিষ্ঠানকে মার্কেটিং মিশ্রণ হিসাবে গণসংযোগের প্রতিও যথেষ্ট যত্নবান হতে হয়। প্রতিষ্ঠানসমূহ গণসংযোগের মাধ্যমে দেশের ভিতরে (এবং বাইরে) নিজনিজ সুনাম বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালায়।
৬. ধারে বিক্রি (Credit Sale)
গ্রাহকের নিকট ধারে পণ্য বিক্রয় করাও এক প্রকার মার্কেটিং মিশ্রণ। অবশ্য কোনো প্রতিষ্ঠান ধারে। পণ্য বিক্রি করবে কিনা বা করলে কি ধরনের গ্রাহকের নিকট বিক্রি করবে তা সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠানের পলিসির উপর নির্ভরশীল।
৭. পরিবহন ও ডেলিভারি (Transportation and Delivery)
পণ্য পরিবহন ব্যয় যত কম হয় এবং যত তাড়াতাড়ি পণ্যসামগ্রী গ্রাহকের নিকট পৌছানো যায় ততই পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি পায়। তাই বাজারজাতকরণ মিশ্রণের এই দিকটির ব্যাপারে বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাজারে প্রতিযোগিতার তীব্রতা বিদ্যমান থাকলে পরিবহন ও পণ্যের ডেলিভারি ব্যবস্থা বিক্রয়ের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
৮. মার্কেটিং গবেষণা (Marketing Research)
পণ্যের মার্কেটিং সম্পর্কে অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত পরিহার করে বিজ্ঞানসম্মম্মত উপায়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মার্কেটিং গবেষণা পরিচালিত হয়। মার্কেটিং গবেষণা তাই বাজারজাতকরণ মিশ্রণের একটি অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত। উপরে বর্ণিত উপাদানগুলো ছাড়াও মার্কেটিং মিশ্রণের আরও অনেক উপাদান রয়েছে। যেমন- মোড়কিকরণ, প্রতিষ্ঠানের পণ্য উন্নয়ন, মূল্য নিরূপণ, বণ্টন প্রণালি নির্বাচন, ব্যক্তিক বিক্রয় ইত্যাদি। বিভিন্ন কারবারির নিজ নিজ সুবিধা ও প্রয়োজন অনুযায়ী বাজারজাতকরণ মিশ্রণের উপাদান ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। মার্কেটিং মিশ্রণের সুসমন্বিত ব্যবহার প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং কর্মসূচিকে দক্ষতর করে তোলে এবং প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাজারজাতকরণের ভূমিকা আলোচনা কর |