বিশ্ব শিশু দিবস রচনা, শিশু দিবস রচনা।
বিশ্ব শিশু দিবস
ভূমিকা
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি,
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
——-সুকান্ত ভট্টাচার্য
শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তারাই আগামী দিনের উজ্জ্বল বার্তা বয়ে আনে। তাদের মধ্যে সুপ্ত হয়ে থাকে আগামী দিনের পৃথিবীর স্বপ্ন- কল্পনার সম্ভাবনার নতুন ইতিহাস। আজ যারা নবজাতক, যারা হাঁটি হাঁটি পা-পা করে পৃথিবীর বুকে নতুন পদচারণা শুরু করছে, তাদের কথা আমাদের বিস্মৃত হলে চলবে না। অনাগত আগামী দিনে তারাই শৈশব-কৈশোরের কিশলয় দশা ঘুচিয়ে পূর্ণ পরিণত হবে যৌবনের শ্যামল গৌরবে। সেদিন তাদের হাতে থাকবে বিশ্ব শাসকদের নিয়ন্ত্রণশক্তি। আজকের নবজাতকদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আগামী দিনের কত শিল্পী, স্রষ্টা, কবি সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী দার্শনিক ও স্বদেশপ্রাণ মহাপুরুষ। তাই সমাজ ও মানুষের কর্তব্য শিশুদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া, তাদের স্বাধীন ও আত্মপ্রকাশের পথ খুলে দেওয়া। একদিন শিশুরাই হবে দেশের কর্ণধার। কবি গোলাম মোস্তফা বলেছেন, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরেই অন্তরে’। কাজেই বিশ্ব শিশু দিবসের গুরুত্ব অনেক।
অন্যান্য রচনা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনা ২০ পয়েন্ট (JSC, SSC, HSC)
আমার প্রিয় শিক্ষক রচনা for class 5
বিশ্ব শিশু দিবস
আন্তর্জাতিক শিশুকল্যাণ ইউনিয়ন ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে ১৯৪৫ সাল থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার ‘বিশ্ব শিশু দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের ভাগ্যাহত কোটি কোটি শিশুর খাদ্য, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও জীবনের নিরাপত্তা বিধান করাই হচ্ছে এ দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে বিগত তেত্রিশ বছর ধরে ঘটা করে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে বটে, কিন্তু বিড়ম্বিত শিশুদের কোনো কল্যাণই সাধিত হচ্ছে না।
শিশুদের অবস্থা
আমাদের দেশে গরিব লোকদের শিশু, নিরক্ষর ধনীদের শিশু, এতিম অসহায় শিশু এবং গরিব বিকলাঙ্গ শিশু-প্রধানত এই চার শ্রেণির শিশু দেখা যায়। অজ্ঞ বিত্তবান লোকের শিশুদের খাওয়া পরার কোনো রকম অভাব না থাকলেও অভিভাবকদের অজ্ঞতার কারণে তারা মূর্খ এবং স্বাস্থ্যহীন হয়ে থাকে। গরিব শিশুরা তাদের পরিবার-পরিজনদের ভরণপোষণের জন্য পরের বাড়িতে কাজে লেগে যায় অল্প বয়স থেকেই। এতিম শিশুরা ভিক্ষাবৃত্তিকে সম্বল করে জীবন কাটায়, আর এদের অনেকই রোগব্যাধির শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বিকলাঙ্গ শিশুরা অনেকের ভিক্ষার পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বলা বাহুল্য, এসব শিশু কীভাবে বিকলাঙ্গ হলো সে খোঁজ কেউ রাখে না। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে যে, অপহরণকারীদের খপ্পরে পড়ে এসব শিশুর অনেকেরই পঙ্গুদশা বরণ করে নিতে হয়েছে। দেখা গেছে যে, শুধু রাজধানীতেই মাসে গড়ে শতাধিক শিশু নিখোঁজ হয়। সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এভাবে কত শিশু যে নিখোঁজ হচ্ছে তার সঠিক হিসাব রাখে কে?
শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ
মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সেরা জীব। আর শিশু দেশ ও মানবজাতির ভবিষ্যৎ। কাজেই শিশু সমাজকে অবহেলিত রাখার অর্থই হচ্ছে দেশ এবং সমগ্র মানবজাতিকে অবহেলা করা, অবজ্ঞা করা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিশুদের জন্য সরকারিভাবে শিশুকল্যাণ তহবিল রয়েছে। এ তহবিলের সাহায্যে লেখাপড়া শিখিয়ে শিশুদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এসব উন্নত দেশে শিশুদের জন্য বেসরকারিভাবেও বহু সংগঠন রয়েছে। তারা অনেক শিশুর লালনপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের দরিদ্র অসহায় ভূথানাঙ্গা শিশুদের প্রতি কেউ নজর দিতে চায় না।
সঠিক পরিকল্পনার অভাব
পৃথিবীর অনুন্নত দেশগুলোর শিশুরা চরমভাবে অবহেলিত। আহার, বাসস্থান ও শিক্ষাদীক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে শিশুদের প্রতি যাতে বিশ্বব্যাপী এক সংবেদনশীল ও সহানুভূতিশীল মানসিকতা গড়ে ওঠে, তার ওপরেই সার্বিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সরকারগুলো বিভিন্ন সময়ে শিশুদের জন্য কিছু কিছু পরিকল্পনা ও সংগঠন তৈরি করলেও তা সঠিক ছিল না বলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তাই শিশুদের অবস্থা যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেছে, কোনো রকম সুফল তারা পায় নি।
ধনবানদের সৎ ইচ্ছার অভাব
আমাদের দেশে বিত্তশালী লোকদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও একেবারে নগণ্য বলা চলে না। এসব লোক নিজেদের আরাম আয়েসের জন্য বাড়ি গাড়ি ক্রয় করছেন অকৃপণভাবে এবং নিজেদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার নামে বিদেশে পাঠিয়ে অজস্র টাকা খরচ করছেন। কিন্তু অসহায় দরিদ্র শিশুদের জন্য তারা একটি টাকাও খরচ করছেন না। ইচ্ছে করলে তারা অনেক টাকা খরচ করতে পারেন, কিন্তু সৎ ইচ্ছার অভাবে তা হচ্ছে না। আবার দেশে অন্য এক শ্রেণির বিত্তবান আছেন, যারা প্রতি বছর যাকাত এবং সম্পদের কাফফারা হিসেবে লাখ লাখ টাকা দান খয়রাত দিচ্ছেন। কিন্তু তারাও বিপন্ন এবং ভাগ্যহীন শিশুদের দিকে একবারও করুণার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন না।
দেশের সব শ্রেণির বিত্তশালী লোকজন ও আলেম সম্প্রদায় ত্যাগের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এলে যেকোনো বিদেশি সাহায্য সংস্থার তুলনায় তারা আরও অনেক বেশি কাজ করতে পারেন। বলা বাহুল্য, মাদার তেরেসা একজন নারী হয়েও দুস্থদের সেবা করে বিশ্বের ত্যাগের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। দুস্থদের সেবা ও সাহায্য-সহযোগিতা করে নোবেল পুরস্কার পেয়ে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে থাকলেন।
শিশুদের জীবিকার ব্যবস্থা
ধনীদের যাকাত, ফিতরা ও অন্যান্য দান খয়রাতের টাকায় দেশের প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একটি করে তহবিল গঠন করে, সে তহবিলের সাহায্যে অনাথ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যায়। আবার কোথাও কোথাও আলাদা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করে কোনো একটি বিদ্যালয়কে অনুদান দিয়ে সেখানে অনাথ শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়। তহবিল গঠনের ব্যাপারে গ্রাম সরকারকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তাছাড়া প্রতিটি জেলায় সরকারিভাবে একটি করে অনাথ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষা প্রবর্তন করলে, শিক্ষা নিয়ে অনাথ শিশুরা বিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার পর তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম এবং সহজ হতে পারে। তখন আর অনাথ শিশুরা জাতির বোঝা হয়ে থাকবে না, তারা নিজেরাও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
উপসংহার
শিশুদের প্রতি আমাদের অবজ্ঞার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাদের পুষ্টি, বৃদ্ধি, পরিণতি, শরীর-মনে স্বাচ্ছন্দ্য স্বাভাবিক সুষ্ঠু বিকাশে আমাদের সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির অনুশীলন করতে হবে। দেশে ব্যাপকভাবে বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হলে অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত শিশুদের কথা সকলে জানতে পারবেন। এতে অনেক দয়ালু ব্যক্তির হৃদয়ে করুণার উদ্রেক হবে এবং তারা অসহায় শিশুর অবস্থার উন্নয়নের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। তখনই সফল হবে বিশ্ব শিশু দিবসের প্রকৃত উদ্দেশ্য।