Home » সার্ক কি, কিভাবে গঠিত হয়, উদ্দেশ্য ও মূলনীতি গুলো কি কি?
সার্ক কি, সার্ক কিভাবে গঠিত হয়, সার্ক এর উদ্দেশ্য ও মূলনীতি,

সার্ক কি, কিভাবে গঠিত হয়, উদ্দেশ্য ও মূলনীতি গুলো কি কি?

by Susmi
0 comment

সার্ক কি

‘সার্ক’ একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। এর পূর্ণরূপ হলো South Asian Association for Regional Co-operation (SAARC), অর্থাৎ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশ (বর্তমানে ৮টি) নিয়ে সার্ক গঠিত। সার্ক-এর সদস্য দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান। সার্কের সদর দফতর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনের লক্ষ্যে নিজেদের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা থেকেই ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় সার্ক।

সার্ক কিভাবে গঠিত হয়

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫) পর বিশ্বব্যাপী উপনিবেশিক শাসনের অবসান হওয়ায় আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক উন্নয়নের সূত্রপাত হয়। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক নির্ভরশীলতার কারণে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় ব্যবধান ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় পারস্পরিক সহযোগিতার নিমিত্তে অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতি জলবায়ু প্রভৃতির কারণে যেমন আঞ্চলিক সহযোগিতা তৈরি হয়েছে, তেমনি সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাববলয়কে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক জোটের। ১৯৪৯ সালে ন্যাটো (NATO), ১৯৫২ সালে আনজুস (ANZUS), ১৯৫৪ সালে নিয়াটো (SEATO), ১৯৫৫ সালে ওয়ারশ সামরিক চুক্তি এ লক্ষ্যেই গড়ে উঠেছিল। তবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে EEC, ASIAN, JCC, NAFTA, EU প্রভৃতি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাগুলো সবচেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করেছে।

পৌরসভার কাজ কি | পৌরসভার গঠন ও কার্যাবলী

ব্যাপক দারিদ্র্য, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা ইত্যাদি দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। অপরদিকে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা, শ্রমশক্তির সহজলভ্যতা এবং প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার দেশগুলোর সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। পারস্পরিক সহযোগিতায় সমস্যা মোকাবিলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রচেষ্টা এবং EEC (European Economic Commission) ASEAN (Association of South East Asian Nations) এর সাফল্য বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আঞ্চলিক সংহতি জোরদারে সংগঠন প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে।

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সফরকালে ঐসব দেশের রাষ্ট্রনায়কদের সাথে এ সম্পর্কে মতবিনিময় করেন এবং বিশেষ দূতের মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। তিনি চেয়েছিলেন, এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে অর্থনীতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কারিগরি, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহজ ও স্বাভাবিক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হোক। এ উদ্দেশ্যে তিনি একটি আঞ্চলিক সংস্থা গড়ে তোলার জন্য শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তাব করেন। সম্মেলন উপলক্ষে বাংলাদেশ ‘Regional Co-operation in South Asia’ শিরোনামে একটি ওয়ার্কিং পেপার তৈরি করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাষ্ট্রনায়কদের নিকট প্রেরণ করেন। ওয়ার্কিং পেপারটিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা ত্রুটি ও নেতিবাচক দিক এড়িয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতার মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। শীর্ষ সম্মেলনের পূর্বে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ৭টি দেশের পররাষ্ট্র সচিবগণ এপ্রিল ১৯৮১ কলম্বো, নভেম্বর ১৯৮১ কাঠমান্ডু, আগস্ট ১৯৮২ ইসলামাবাদ এবং মার্চ ১৯৮৩ ঢাকায় বৈঠকে মিলিত হন। ১৯৮৩ সালের আগস্টে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে সার্ক গড়ে ওঠে এবং একীভূত কর্মসূচি গৃহীত হয়।

১৯৮৫ সালের ৭-৮ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সার্ক আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

সার্ক-এর গঠন ও উদ্দেশ্য

১৯৮৫ সালের ৭-৮ ডিসেম্বর দুদিনব্যাপী ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ‘সার্ক সনদ’ স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত সনদে দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার অঙ্গীকার করে লক্ষ্য স্থির করা হয়। নিচে সার্ক সনদের লক্ষ্যগুলো উল্লেখ করা হলো-

১. জনজীবনের মানোন্নয়ন: অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা।

২. যৌথ স্বনির্ভরতা অর্জন: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে যৌথ স্বনির্ভরতাকে উন্নত ও জোরদার করা।

৩. আস্থা ও সমঝোতা সৃষ্টি: সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিরাজমান সমস্যা, ভুল বোঝাবুঝি, দ্বন্দ্ব-বিরোধ প্রভৃতি দূর করে পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা ও সমঝোতা বৃদ্ধি করা।

৪. যৌথ কার্যক্রম: সাতটি (বর্তমানে আটটি) সদস্য দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির জন্য যৌথভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়িত করা

৫. পারস্পরিক সহযোগিতা: সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে সহযোগিতার ক্ষেত্রকে উত্তরোত্তর সম্প্রসারণ করা।

৬. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা: বিশ্বের অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করা।

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বলতে কি বুঝায়? স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন কেন প্রয়োজন?

৭. অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থার সাথে সহযোগিতা: বিশ্বের অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থার সাথে সহযোগিতা জোরদার করে সার্কের লক্ষ্যসমূহকে বাস্তবায়ন করা।

৮. সার্বভৌমত্ব ও সংহতি বিধান: সার্কভুক্ত দেশগুলো সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিটি রাষ্ট্র রাজনৈতিক স্বাধীনতার নীতি মেনে চলবে এবং একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।

সার্ক-এর মূলনীতি

১. সার্বভৌমত্বের সমতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন।

২. এক রাষ্ট্র কর্তৃক অপর রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। ২

৩. দ্বিপাক্ষিক বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো এ সংস্থায় আলোচনা না করা।

৪. পারস্পরিক সুবিধার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা।

৫. সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক বাধ্যবাধকতার সাথে অসামঞ্জস্য না হওয়া।

Related Posts