সুষুম্নাকাণ্ড কি
কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশ হচ্ছে সুষুম্নাকাণ্ড বা মেরুরজ্জু। এটি মস্তিষ্কের পিছনের অংশ। এর বাইরের দিকে শ্বেত পদার্থ এবং ভিতরের দিকে ধূসর পদার্থ থাকে। মেডুলা অবলংগাটার নিম্নের অংশ থেকে উদ্গত হয়ে করোটির ফোরামেন ম্যাগনাম (Foramen magnum) বা মহাবিবরের মধ্য দিয়ে ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে মেরুদণ্ডের নিউরাল নালী পথে পশ্চাতে উদর কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর বাইরের আবরণকে ড্যুরাম্যাটার (Dura Matter) এবং ভিতরের আবরণকে পায়াম্যাটার (Pia Matter) বলে।
স্নায়ুতন্ত্রের কাজ কি | স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলী |
মানুষের মেরুরজ্জু গড়ে ৪৫ সে. মি. লম্বা এবং ওজন প্রায় ৩৫ গ্রাম। এটি সামনের দিকে বেশ মোটা। এর স্নায়ুর দুটি করে মূল থাকে। যথা: পৃষ্ঠীয় মূল (Dorsal root) এবং অঙ্কীয় মূল (Ventrial root) পৃষ্ঠীয় মূলে গ্যাংগ্লিয়া (Ganglia) থাকে, যা সংবেদী নিউরনের কোষদেহ দ্বারা গঠিত। তাই সুষুম্নাকাও বা মেরুরজ্জু হলো এমন একটি পরিবহন পথ, যার মধ্য দিয়ে স্নায়বিক শক্তি মস্তিষ্ক থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে এবং সেখান থেকে স্নায়বিক সংবেদন মস্তিষ্কে বাহিত হয়। সুষুম্নাকাণ্ডে ৩১ জোড়া স্নায়ু রয়েছে এবং এগুলো অঞ্চলে বিভক্ত। নিম্নে ছকের সাহায্যে মেরুরজ্জুর অঞ্চল ও স্নায়ুমেরু দেখানো যেতে পারে।
সুষুম্নাকাণ্ডের গঠন ও আকৃতির বর্ণনায় Morgan বলেছেন, “The interior in gray matter (cell bodies), so distributed as to present the picture of laterly whose essential form in the letter H.”
সুষুম্নাকাণ্ডের কাজ
সুষুম্নাকাণ্ডের প্রধান কাজ হচ্ছে উদ্দীপনা বা স্নায়ুপ্রবাহ পরিবহন করা। এটি মস্তিষ্কের সাথে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের – সংযোগ রক্ষার বাহক হিসেবে কাজ করে। এজন্য ত্বক হতে আনীত অন্তর্দেশীয় স্নায়ুস্পন্দনকে মস্তিষ্কের স্নায়ুকেন্দ্রের দিকে ধাবিত করে এবং মস্তিষ্ক হতে প্রেরিত স্নায়ুস্পন্দন পেশী ও অন্যান্য অঙ্গসমূহে সরবরাহ করে। নিম্নে সুষুম্নাকাণ্ড বা মেরুরজ্জুর অন্যান্য কার্যক্রম বর্ণনা করা হলো:
i. সুষুম্নাকান্ডীয় সরল প্রতিবর্তসমূহের সমন্বয় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। যেমন- হাঁটুর ঝাঁকুনি প্রতিক্রিয়া।
ii. স্বয়ংক্রিয় প্রতিবর্তসমূহের সমন্বয় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। যেমন- মূত্রথলির সংকোচন।
iii. সুষুম্না স্নায়ু ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
iv. হাঁটা, চলাফেরা, সাইকেল চালানো, দৌড়ানো প্রভৃতি অভ্যাসজনিত ঐচ্ছিক ক্রিয়া পরিচালিত করে।
মস্তিষ্ক সম্পর্কে তথ্য: মস্তিষ্কের গঠন ও কাজ |
v. মেরুরজ্জুর মাধ্যমেই স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া মানসিক চিন্তা বা প্রস্তুতি মেরুরজ্জুর সংশ্লিষ্টতায় হয়ে থাকে। ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দ্রুত পরিবর্তন সাধিত হয়।
vi. সুষুম্নাকাও পেশীটান প্রতিবর্তের সহায়তায় পেশীটানের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। শিশুদের পোলিও রোগে সম্মুখ স্নায়ুশৃঙ্গের চেষ্টায় স্নায়ুকোষ বিনষ্ট হলে পেশীটান লোপ পায়, পেশী নরম হয়ে উঠে এবং ঐচ্ছিক পেশীর নড়াচড়া কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়।