Home » ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল আলোচনা কর
১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন,

১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল

১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক আইন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যা সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যুক্তফ্রন্ট ২১ দফার ভিত্তিতে অবর্তীর্ণ হয়। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট অভূতপূর্ব বিজয় অর্জনে সক্ষম হয়। নিচে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল ছকাকারে দেখানো হলো-

আসন সংখ্যা রাজনৈতিক দল প্রাপ্ত আসন
মুসলিম আসন = ২৩৭ মুসলিম লীগ

যুক্তফ্রন্ট

নির্দলীয়

খেলাফতে রব্বানী

০৯

২২৩

০৪

০১

অমুসলিম আসন = ৭২ কংগ্রেস

তফসিল ফেডারেশন

যুক্তফ্রন্ট

খ্রিস্টান

বৌদ্ধ

কমিউনিস্ট পার্টি

নির্দলীয় প্রার্থী

২৪

২৭

১৩

০১

০২

০৪

০১

যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক ২১ দফা কর্মসূচি পূর্ব বাংলার জনগণ কর্তৃক ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। ফলে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হয়। মোট ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন লাভ করে। মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসনে বিজয়ী হয়। এছাড়া ৯টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সবকটিই যুক্তফ্রন্ট লাভ করে। মুসলিম লীগ নেতা তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ ছাত্রের নিকট শোচনীয় পরাজয় বরণ করেন। অমুসলিমদের জন্য ৭২টি আসনের ১৩টিতে যুক্তফ্রন্ট ২৪টিতে কংগ্রেস, ২৭টিতে তফসিল ফেডারেশন, খ্রিস্টান সম্প্রদায় ১টি ও বৌদ্ধ সম্প্রদায় ২টি, কমিউনিস্ট পার্টি ৪টি ও নির্দলীয় প্রার্থী ১টিতে বিজয়ী হয়। নির্বাচনে মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে ক্ষমতা হারায়। যুক্তফ্রন্ট শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, পাক শাসকগোষ্ঠী এ সরকারকে স্থায়ী হতে দেয়নি। ১৯৫৪ সালের ২৯ মে যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটলে পূর্ব বাংলায় গভর্নরের শাসন বলবৎ করা হয়।

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পটভূমি আলোচনা কর

যুক্তফ্রন্টের বিজয় এবং মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয়ের পেছনে যেসব কারণ নিহিত ছিল তা হলো-

১. বাংলা ভাষার অবমাননা;

২. স্বাধিকারের দাবি উপেক্ষিত;

৩. আদর্শগত দ্বন্দ্ব;

৪. লাহোর প্রস্তাবের সংশোধন;

৫. সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি:

৬. সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থতা ইত্যাদি।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল এর প্রভাব

১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয় এবং ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় পাকিস্তানের রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।

প্রথমত, এ নির্বাচনে সরকারি দল মুসলিম লীগের পরাজয় ঘটলে দলটি একেবারে ভেঙে পড়ে।

দ্বিতীয়ত, মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয়ে গণপরিষদে মুসলিম লীগের বাঙালি সদস্যরা তাদের প্রদেশের প্রতিনিধি নন বলে প্রমাণিত হয়।

তৃতীয়ত, এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবির প্রতি পূর্ব বাংলার গণমানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনই প্রমাণ করে। নির্বাচনি ঐক্য বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা জাগ্রত ও বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

চতুর্থত, নির্বাচনি ইশতেহারের ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণের দাবি জানায়। যুক্তফ্রন্টের সদস্যরা পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে গণপরিষদে যোগ দেন।

পঞ্চমত, নির্বাচনের ফলাফল দৃষ্টে পাকিস্তানি শাসক মহল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে বাঙালিদের সুদৃঢ় ঐক্য বুঝতে পেরে ১৯৫৪ সালে গণপরিষদে বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্থান দেয়। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে।

ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের নিরঙ্কুশ বিজয় পাকিস্তানি শাসকচক্রের ভিতকে নড়বড়ে করে তোলে এবং পূর্ব বাংলা মনস্তাত্ত্বিকভাবে যুক্ত পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেও যুক্তফ্রন্ট সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। কিন্তু এ নির্বাচনে বাঙালি জাতি যে স্বাতন্ত্র্য ও জাতীয়তাবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল তার প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।

Related Posts