Home » সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি?
সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি

সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি?

by Susmi
0 comment

প্রিয় পাঠক, আজকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় সম্পর্কে জানতে চলেছি। সেটা হলো সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি? এর আগে আমরা সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে জেনেছি। উক্ত লেখায় সিন্ধু সভ্যতাকে নগর সভ্যতা বলা হয় কেন সে সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। চলুন, সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলি জেনে নিই।

সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য সমূহ

১৯২১ সালে পাঞ্জাবের মন্টোগোমারি জেলার হরপ্পা অঞ্চলে এবং ১৯২২ সালে সিন্ধুর লারাকানা জেলার মহেঞ্জোদারো অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন উদ্ধার করা হয়। নদী বিধৌত উর্বরা পলিতে কৃষি অর্থনীতি ছিল সিন্ধু সভ্যতার জীবনীশক্তি। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সিন্ধু সভ্যতাকে স্বমহিমায় উজ্জ্বল করে রেখেছে। নিম্নে সিন্ধু সভ্যতার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো:

১. সিন্ধু সভ্যতার ভৌগোলিক অবস্থান

হিমালয় পর্বতে উৎপত্তি হয়ে ইরাবতীর ধারে হরপ্পা বর্তমানে পাকিস্তানের লাহোর থেকে একশ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে পাঞ্জাবের মন্টোগোমারী জেলায় ও সিন্ধু প্রদেশে সিন্ধু নদের ধারে মহেঞ্জোদারো বর্তমান করাচি থেকে দু’শত মাইল উত্তরে লারাকানা জেলায় প্রায় ৪০০ মাইল দুটি অঞ্চলকে নিয়ে প্রায় ১,৫০০ মাইল জুড়ে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছে। অঞ্চল তিনটি হচ্ছে মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা ও চানহুন্দারো।

মিশরীয় মিথলজি - আদি থেকে অন্ত: এস এম নিয়াজ মাওলা - Egyptian Mythology: S M Niaz Mowla

TK. 2,000 TK. 1,748

২. সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল

সিন্ধু সভ্যতার সর্বাধিক সমৃদ্ধির কাল ছিল ২,৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে ২,৩০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত। ২,৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের পূর্বে কয়েকশ বছরব্যাপী সিন্ধু সভ্যতা ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে। অপরপক্ষে, ২,৩০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের পরে ক্রমশ সিন্ধু সভ্যতার অবক্ষয় হতে থাকে। অবশেষে ১,৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের মধ্যেই বহিরাগত আর্যদের আক্রমণে সিন্ধু সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

৩. সিন্ধু সভ্যতার বিস্তৃতি

সিন্ধু, পাঞ্জাব, বেলুচিস্থান, রাজপুতনা, গুজরাট এবং কাশ্মীর ও উত্তর প্রদেশের অংশবিশেষ জুড়ে সিন্ধু সভ্যতা বিস্তৃত ছিল। বিশাল এলাকা জুড়ে সিন্ধু সভ্যতার বিস্তার এ সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

৪. সিন্ধু সভ্যতার জাতি

সিন্ধু সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এ সভ্যতা গড়ে তুলেছিল বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ একত্রে মিলিত হয়ে। যেমন- অস্ট্রিক, ভূমধ্যসাগরীয়, মঙ্গোলীয় ও আলপাইন জাতির মানুষ এখানে বাস করত। তাদের মধ্যে দ্রাবিড় ও সুমেরীয় জাতিগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য বেশিমাত্রায় পরিস্ফুট হয়।

৫. ব্রোঞ্জযুগীয় সভ্যতা

সিন্ধু সভ্যতার একটি অনন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ সভ্যতা ছিল ব্রোঞ্জযুগীয় সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের ব্যবহৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় হাতিয়ার ও অস্ত্রশস্ত্র ছিল মূলত বোজ দ্বারা তৈরি। তারা লোহার ব্যবহার জানত না।

৬. নদীমাতৃক সভ্যতা

প্রাচীনকালে প্রায় সব সভ্যতাই নদী তীরবর্তী অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। সিন্ধু সভ্যতাও যেহেতু একটি প্রাচীন সভ্যতা, তাই এ সভ্যতাও ছিল সিন্ধু নদের অববাহিকায় সৃষ্ট একটি নদীমাতৃক সভ্যতা। হিমালয় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে নেপালের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে সিন্ধু নদ দক্ষিণ করাচির অদূরে আরব সাগরে পড়েছে। এ নদের অববাহিকায় অনার্য ও বৈদিক জাতিগোষ্ঠী বসতি স্থাপন করে সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্মেষ ঘটায়, যা সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত। সিন্ধু নদের অববাহিকায় সিন্ধু সভ্যতার উৎপত্তি হয় বলে একে সিন্ধু সভ্যতা বলা হয়। আবার যেহেতু সিন্ধু নদকে কেন্দ্র করে সিন্ধু সভ্যতার সৃষ্টি, তাই এ সভ্যতাকে নদীমাতৃক সভ্যতাও বলা হয়।

অন্যান্য লেখা:

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা বর্ণনা কর।

প্রাচীন যুগ কি? প্রাচীন যুগের বৈশিষ্ট্য সমূহ লেখ।

সভ্যতা কাকে বলে? প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা সম্পর্কে আলোচনা কর

৭. নগরকেন্দ্রিক

সিন্ধু সভ্যতার নগরগুলো ছিল সুষ্ঠু পরিকল্পনামাফিক এবং তাতে অনেক দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। নগরের রাস্তাগুলো ছিল বেশ প্রশস্ত এবং পরিকল্পিতভাবে তৈরি। রাস্তায় নিয়মিত ব্যবধানে ল্যাম্পপোস্টের ব্যবস্থা ছিল। সেখানে একটি পৌরসভার অস্তিত্ব ছিল যা একটি উন্নতমানের প্রশাসন, রুচিবোধ, সাংস্কৃতিক তথা নগর সমাজ জীবনের ইঙ্গিত বহন করে। নগরের ভবনগুলো ছিল, পোড়ানো শক্ত ইটের তৈরি। প্রত্যেকটি আবাসিক বাড়িতে প্রশস্ত বারান্দা, দরজা, জানালা, কূপ, নর্দমা ও গোসলখানার অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছিল। নগরের আকর্ষণীয় বস্তু হচ্ছে ১৮০ × ১৮০ ফুট আয়তনের গ্রেট বাথ। এর অভ্যন্তরে একটি সুইমিং পুল ছিল যার দৈর্ঘ্য ছিল ৩৯ ফুট, প্রস্থ ২৩ ফুট এবং গভীরতা ৮ ফুট। তাছাড়া মহেঞ্জোদারো নগরকেন্দ্রে বড় একটি শস্যাগার ছিল। শস্যাগার সংলগ্ন কক্ষগুলো দেখলে মনে হয় এখানে শ্রমিক বা ক্রীতদাসরা বাস করত।

৮. বিচিত্র সমাজব্যবস্থা

সিন্ধু সভ্যতার সমাজব্যবস্থা ছিল বিচিত্র রকমের। এখানে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রকার মূল্যবান অলংকার, যেমন- স্বর্ণ, রৌপ্য প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু এবং অপেক্ষাকৃত কম মূল্যবান ধাতু যেমন- ব্রোঞ্জ, তামা ইত্যাদি দ্রব্য এবং উন্নতমানের মুদ্রা প্রমাণ করে যে, সিন্ধু সভ্যতার জনসাধারণ বিভিন্ন অর্থনৈতিক পেশা ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। প্রাপ্ত নিদর্শন তাদের কৃষি, বয়নশিল্প, মৃৎপাত্র, ইট তৈরি, স্বর্ণকার, কর্মকার, কুমার প্রভৃতি পেশায় নিয়োজিত থাকার প্রমাণ দেয়।

৯. শ্রেণিবিভক্ত

সমাজ খননকার্যের ফলে মহেঞ্জোদারোতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি যে, এখানে বসবাসরত মানুষ ৪টি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা:

ক. শিক্ষিত শ্রেণী: শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে ছিল পুরোহিত, চিকিৎসক, জ্যোতিষী ও জাদুকর গোষ্ঠী। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষদান ও নিয়মকানুন প্রণয়ন এ শ্রেণির দ্বারাই সম্পন্ন হতো। পরবর্তীতে বৈদিক সমাজে ব্রাহ্মণরা সেই কাজ করত।

খ. যোদ্ধা: যোদ্ধা শ্রেণীর মধ্যে ছিল দুর্গের দ্বারা রক্ষী, যুদ্ধের সৈনিকগণ। রাষ্ট্র ও জনসাধারণকে রক্ষা করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। এরা পরবর্তীতে ভারতীয় সমাজে ক্ষত্রিয় নামে পরিচিতি লাভ করে।

গ. ব্যবসায়ী ও কারিগর: ব্যবসায়ী ও কারিগর শ্রেণিতে বিভিন্ন পেশার লোক ছিল। যেমন- রাজমিস্ত্রী, লিপিকার, শাঁখারি, স্বর্ণকার, তাঁতি, ছুতার প্রভৃতি।

ঘ. শ্রমজীবী শ্রেণী: শ্রমজীবী শ্রেণির মধ্যে ছিল গৃহকর্মে নিয়োজিত শ্রমিক, চর্মকার, জেলে, কুটির শিল্পের শ্রমিক, কৃষক, মুটে প্রভৃতি। এ শ্রেণির মানুষ পরবর্তীতে বৈদিক যুগে চতুর্থ বা শূদ্র বর্ণে রূপান্তরিত হয়।

১০. কৃষি ও ব্যবসায় কেন্দ্রিক অর্থনীতি

সিন্ধু সভ্যতার মূল বুনিয়াদ গড়ে ওঠে কৃষি ও ব্যবসায়কে কেন্দ্র করে। অধিবাসীদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন ছিল কৃষিকাজ। তারা কৃষি জমিতে গম, যব, বার্লি ইত্যাদি উৎপাদন করত। তদুপরি তারা সবজি, দুধ, মাছ, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ইত্যাদির মাংস খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত। সিন্ধু সভ্যতার ব্যবসায়ীগণ মিসর, পারস্য প্রভৃতি দেশের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল বলেও জানা যায়।

১১. কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক অবস্থা

সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক লিপিসমূহের পাঠোদ্ধার সম্ভব হয় নি বলে তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার সঠিক চিত্র পাওয়া যায় নি। তবে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর বিভিন্ন ঘড়-বাড়ি ও অট্টালিকা নির্মাণের কৌশলের মধ্যে মিল থাকায় ঐতিহাসিকগণ মনে করেন উভয় এলাকার রাজনীতিই এক শক্তিশালী কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতো। রাজা ছিলেন শাসন ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দু।

১২. ব্যবসায় বাণিজ্য

সিন্ধু সভ্যতার কারিগররা বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করত, যার চাহিদা ভারতের উত্তর প্রান্ত রাজস্থান, গুজরাট প্রভৃতি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সিন্ধু সভ্যতার গৌরবময় দিনগুলোতে কাথিয়াওয়া ও দাক্ষিণাত্য থেকে কয়েক প্রকার পাথর এবং ঝিনুক, পারস্য ও আফগানিস্তান থেকে রূপা, পারস্য থেকে তামা, মধ্য এশিয়া থেকে জেড পাথর আনা হতো। তিলমুন দ্বীপ ও মেসোপটোমিয়ার বন্দরগুলো দিয়ে ময়ূর, গজদন্ত, মুসা ও সিন্ধু নামে পরিচিত সুতি কাপড় রপ্তানি করা হতো। আর ঐসব জায়গা থেকে রূপা, সুগন্ধি দ্রব্য, কার্পাস, মূল্যবান পাথর ও অন্যান্য জিনিস আমদানি করা হতো।

১৩. আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা

প্রত্নতাত্ত্বিকগণ মনে করেন যে, যথেষ্ট কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক সরকারের মাধ্যমে সিন্ধু উপত্যকার নগর দুটিতে শাসন কাজ পরিচালনা করা হতো এবং নিঃসন্দেহে একজন পুরোহিত রাজ আমলাতান্ত্রিক সরকারের প্রধান ছিলেন।

১৪. বৃহৎ প্রাসাদসমূহ

প্রাচীন হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগরীতে বেশকিছু বৃহৎ প্রাসাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে মহেঞ্জোদারোতে আবিস্কৃত বৃহৎ হলো ঘরটি অন্যতম। এটি ২৩০ × ৭৮ ফুট জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞগণের ধারণা, সম্ভবত কোনো রাজকর্মচারীর বাসস্থান অথবা পুরোহিতের আবাসস্থল অথবা ধর্মীয় শিক্ষায়তন হিসেবে এ ইমারতটি নির্মিত হয়। মহেঞ্জোদারোতে বৃহৎ স্নানাগার ছিল। এ স্নানাগারটি ছিল ১৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১০৮ ফুট প্রশস্ত। সাঁতারের জন্য বৃহৎ চৌবাচ্চা ছিল। হরপ্পার সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় ইমারত হচ্ছে বৃহদাকার শস্যাগার। সমগ্র শস্যাগারটিতে ৯,০০০ বর্গফুট স্থান ছিল, যেখানে সারা বছরের জন্য শস্য মজুদ করা হতো।

সিন্ধু সভ্যতা

সিন্ধু সভ্যতা

১৫. দুর্গ

নগরজীবনের তথা জাতীয় জীবনের কেন্দ্র ছিল উন্নত নগর দুর্গগুলো। সরু প্রাচীরবেষ্টিত এসব দূর্গ মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। দুর্গের মধ্যে চারদিকে ঘেরা স্থানে শাসন বিভাগীয় ভবনের অবস্থান। হরপ্পার দুর্গের উপরের দালানের বিশেষ কোনো চিহ্ন নেই। নগর দুর্গগুলোর সাধারণ গঠন দেখে মনে হয়, এগুলো এককালে ধর্মীয় সমাবেশ ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

১৬. নগর পরিকল্পনা

সিন্ধু সভ্যতার নগরগুলো বিশেষত হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগর দুটি ইটের ভিত্তিভূমির উপর নির্মিত হয়েছিল। উভয় নগরের একাংশ ছিল প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। অপর অংশ ছিল সাধারণ নগরী। এছাড়া সমষ্টিক স্নানাগার, বিশাল শস্যাগার, ব্যাংক কোষাগার ইত্যাদি নাগরিক সভ্যতার উপকরণগুলোও পরিকল্পিতভাবে তৈরি হয়েছিল।

১৭. উন্নত রাস্তাঘাট

সিন্ধু সভ্যতার যুগে শহরের রাস্তাঘাটগুলো ছিল পাকা, সোজা ও চওড়া। মহেঞ্জোদারোতে ৯ ফুট হতে ৩৪ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত রাস্তা আবিষ্কার হয়েছে। রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে নির্মিত হয়েছিল ইটের তৈরি দালান।

১৮. আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা

সিন্ধু সভ্যতার যুগে পয়ঃপ্রণালি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল উন্নত এবং আধুনিক ধরনের। পাকা রাস্তার নিচ দিয়ে ছিল আচ্ছাদিত নর্দমা। নর্দমার স্থানে স্থানে ছিল সোকপিট।

১৯. পোশাক-পরিচ্ছদ

পোশাক-পরিচ্ছদের জন্য তারা প্রধানত সুতা ও পশম ব্যবহার করত। তখন দু’অংশবিশিষ্ট পোশাকের প্রচলন ছিল। পোশাকের উপরের দিকটা অনেকটা বড় ছিল এবং নিম্নের অংশ ছিল ছোট কাপড়। স্ত্রী পুরুষের পোশাকের তেমন পার্থক্য ছিল না। তারা উভয়ই অলংকার ব্যবহার করত।

২০. সীলমোহর

সিন্ধু সভ্যতার সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন অবশ্যই সীলমোহর। প্রায় ২,০০০ সীলমোহর এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে যাদের অধিকাংশের গায়ে ছোট ছোট লিপি খোদাই করা ছিল।

২১. ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা

সিন্ধু সভ্যতার অপর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা। মহেঞ্জোদারোতে কোনো পাথরের তৈরি ঘরবাড়ি পাওয়া যায়নি। সর্বত্র পোড়া ইটের ব্যবহার দেখা যায়। ফলে সময় সময় অট্টালিকাগুলো মাটির নিচে ধসে গেলে সে স্থানে অনুরূপ অট্টালিকা তৈরি করার প্রথা মহেঞ্জোদারোতে ছিল।

২২. শস্যাগার

হরপ্পা দুর্গের উত্তরে প্রতিষ্ঠিত বিরাট শস্যাগার ছিল। আয়তন (১৬৯×১৩৫) বর্গফুট। ঐতিহাসিক বাসাম একে রাষ্ট্রীয় গুদাম ঘরের সাথে তুলনা করেছেন। পাথরের ওপর তৈরি উঁচু মঞ্চ থেকে বোঝা যায় যে, এখানে শস্য মাড়াই করা হতো। সংলগ্ন গৃহগুলোতে শ্রমিকদের বাসস্থান ছিল। হুইলার বলেছেন, “কি পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য, কি বিস্ময়কর উৎকর্ষ সিন্ধু উপত্যাকার।” শস্যাগারগুলোর সাথে তুলনীয় কোনো শস্যাগার খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর পূর্বে পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায়নি।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিশ্ব ইতিহাসে সিন্ধু সভ্যতা নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্যে ভরপুর হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। নদী তীরবর্তী সভ্যতা হওয়ার সুবাদে সিন্ধু সভ্যতা অত্যন্ত শক্তিশালী কৃষিভিত্তিক আর্থিক বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। ইতিহাসবেত্তাগণ মনে করেন সিন্ধু সভ্যতার আলোকেই পরবর্তীতে আর্য সভ্যতা গড়ে উঠে।

Related Posts