পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি সে সম্পর্কে পরিবেশ বিজ্ঞানিগণ বিভিন্ন মত দিয়েছেন ও বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। যেমন- অধ্যাপক পি. জিসবার্ট (P. Gisbert) ‘Fundamentals of Society’ গ্রন্থে পরিবেশকে চারভাগে ভাগ করেছেন। যথা-
ক. প্রাকৃতিক পরিবেশ (Natural environment);
খ. কৃত্রিম পরিবেশ (Artificial environment);
গ. সামাজিক পরিবেশ (Social environment) এবং
ঘ. মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ (Psychological environment)।
পরিবেশ কাকে বলে ও পরিবেশের সংজ্ঞা দাও |
ক. প্রাকৃতিক পরিবেশ (Natural environment): প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে সেসব উপকরণকে বুঝায় যা মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, অথচ মানব বিকাশে এসব উপকরণ প্রভাব বিস্তার করে। মানুষ, নদী, বায়ু, মাটি, পানি, পাহাড়, আকাশ, সূর্য প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান।
খ. কৃত্রিম পরিবেশ (Artificial environment): মানুষ তার বিবেক বুদ্ধি দ্বারা প্রকৃতি প্রদত্ত উপকরণতে ব্যবহারের মাধ্যমে যে পরিবেশ গড়ে তোলে তাকে কৃত্রিম পরিবেশ বলে। এ ধরনের উপাদান বস্তুগত এবং মানুষ এর সংশোধন ও পরিবর্তন করতে পারে।
গ. সামাজিক পরিবেশ (Social environment): সমাজের যেসব উপাদান মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এজ মানুষ এসব উপাদানকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে। সহযোগিতা, সম্পর্ক, প্রথা, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি প্রকৃতি সামাজিক পরিবেশের উপাদান।
ঘ. মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ (Psychological environment): মানুষের আচার-আচরণ, অভিজ্ঞতা, অভ্যাস, দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষা প্রভৃতির উপর যে পরিবেশ প্রভাব বিস্তার করে তাকে মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ বলে। এ পরিবেশের মাধ্যমে মানুষ স্বাধীনভাবে তার চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে থাকে।
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ (MacIver and Page) মানুষের পরিবেশকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা:
ক. বাহ্যিক পরিবেশ (Outer environment) এবং
খ. সামাজিক পরিবেশ বা অভ্যন্তরীণ পরিবেশ (Social or Inner environment)।
ক. বাহ্যিক পরিবেশ (Outer environment): বাহ্যিক পরিবেশ বলতে মানুষের বিবেক, বুদ্ধি, দক্ষতা, শ্রম, সময় প্রভৃতিকে প্রয়োগ করে এবং প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে যে পরিবেশ গড়ে তোলে তাকে বাহ্যিক পরিবেশ বলে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, গ্রাম, শহর, দালানকোঠা, গাড়ি, স্কুল, কলেজ প্রভৃতি বাহ্যিক পরিবেশের উদাহরণ।
খ. সামাজিক পরিবেশ বা অভ্যন্তরীণ পরিবেশ (Social or Inner environment): সামাজিক বা অভ্যন্তরীন পরিবেশ বলতে যেখানে মানুষ বসবাস করে তাকে বুঝায়। অর্থাৎ সমাজে প্রচলিত প্রথা, রেওয়াজ, রীতি-নীতি, নিয়ম-কানুন প্রভৃতির সমষ্টিকে সামাজিক পরিবেশ বলা হয়। মানুষ সামাজিক পরিবেশের প্রধান বিষয়বস্তু।
মানুষের জন্মকে ভিত্তি করে সামাজিক পরিবেশ দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:
ক. ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বের পরিবেশ (Post-natal environment)
খ. ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরের পরিবেশ (Pre-natal environment)
ক. ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বের পরিবেশ (Pre-natal environment): গর্ভাবস্থায় শিশু যে পরিবেশে থাকে তাকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বের পরিবেশ বলে। এসময় ক্ষতিকর ওষুধ, সেবা, রোগব্যাধি, আঘাত, মাদকাসক্তি, অপুষ্টি প্রভৃতি ভ্রুণের উপর প্রভাব ফেলে।
খ. ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরের পরিবেশ (Post-natal environment): জন্মের পর থেকে মৃত্যু অবধি পর্যন্ত মানুষ যে পরিবেশে বাস করে তাকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরের পরিবেশ বলে। যেমন- পারিবারিক পরিবেশ, বিদ্যালয়ের পরিবেশ, কর্মপরিবেশ, সামাজিক পরিবেশ।
মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র কয়টি ও কি কি? – বিস্তারিত আলোচনা |
Marshall Janes তিন শ্রেণির পরিবেশের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা:
ক. প্রাকৃতিক পরিবেশ (Natural environment),
খ. সামাজিক পরিবেশ (Social environment) এবং
গ. সাংস্কৃতিক পরিবেশ (Cultural environment)
Kimbal Young পরিবেশকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা:
ক. ভৌগোলিক পরিবেশ (Geographical environment)
খ. সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ (Social-cultural environment)
আশাকরি, উপরের আলোচনা থেকে পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
পরিবেশ সম্পর্কে আপনার মনে উঁকি দেয়া আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর চলুন জেনে নিই-
সামাজিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি?
সামাজিক পরিবেশের উপাদান গুলো হলো- সহযোগিতা, সম্পর্ক, প্রথা, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন,
নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি প্রকৃতি।
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি?
মানুষ, নদী, বায়ু, মাটি, পানি, পাহাড়, আকাশ, সূর্য প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান।
পরিবেশের উপাদান কয়টি?
পরিবেশের উপাদান ২ টি। যথা- জীব উপাদান ও জড় উপাদান।