সাইকোসিস কেন হয়
মনোবিকার প্রধানত মস্তিষ্কের ত্রুটি এবং মানসিক পীড়ন থেকে সৃষ্টি হয়। মনোবিকার প্রধানত আচরণমূলক ও – আঙ্গিকগত এ দু’ভাগে ভাগ করা হয়। আঙ্গিক মনোবিকারকে মস্তিষ্কের ত্রুটি এবং আচরণমূলক মনোবিকারকে মানসিক – চাপ পর্যায় বলা যায়। নিম্নে মনোবিকার বা সাইকোসিস রোগের কারণ সমূহ আলোচনা করা হলো।
১. মস্তিষ্কে টিউমার (Brain tumour): মস্তিষ্কে টিউমার দেখা দিলে স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি হয় এবং রক্ত চলাচল বিঘ্নিত হয়। এতে করে স্নায়ুকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
২. মস্তিষ্কে বিষক্রিয়া (Toxic reaction): কোন ওষুধ বা মাদক দ্রব্যের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্কে প্রদাহ ও বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এর ফলে ব্যক্তি সাইকোসিসে আক্রান্ত হতে পারে।
৩. রোগজীবাণুর আক্রমণ: বিভিন্ন রোগজীবাণুর আক্রমণে ব্যক্তির স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ ও ক্ষতির শিকার হতে পারে। এতে করে ব্যক্তি মনোবিকার রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
৪. জিনগত ত্রুটি: মানবদেহের জিন মানুষের আচরণ ও তার সুস্থতায় প্রভাব বিস্তার করে। জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৫. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির সমস্যা: অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি মানব আচরণের জন্য খুবই প্রয়োজন। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরকে ভারসাম্য রাখতে সহায়তা করে। এ ধরনের হরমোনের নিঃসরণ কমবেশি হলে মনোবিকার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
৬. গর্ভকালীন ত্রুটি: গর্ভকালীন সময় কোন ত্রুটি থাকলে যেমন স্নায়ুতান্ত্রিক গঠন বা মস্তিষ্কের গঠনে জটিলতা হলে সাইকোসিস সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।
৭. স্নায়ুর কার্যক্ষমতা হ্রাস: অনেকের বিশেষ করে বৃদ্ধদের বার্ধক্যজনিত স্নায়ু বৈকল্য দেখা দিতে পারে। এর ফলে আক্রান্ত বৃদ্ধের দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলো ও কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
৮. বংশগতধারা (Heridity): গবেষণায় দেখা গেছে, সাইকোসিস রোগের পিছনে বংশগতধারা অনেকাংশে দায়ী। কোন ব্যক্তির মধ্যে সাইকোসিস রোগের জীবাণু থাকলে তা পরবর্তী বংশধরদের হতে পারে। বাবা-মা কারোর এ রোগ দেখা দিলে তা সন্তানের উপর প্রভাব ফেলে।
৯. সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণ: সামাজিক সাংস্কৃতিক কারণে সাইকোসিক রোগ যায়। পারে। অতিসচেতন ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এবং শহর এলাকার জনগণের এ ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
১০. মনোবৃত্তীয় কারণ: মনোবিকারে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে মনস্তাত্ত্বিক উপাদান একটি অন্যতম কারণ। ব্যক্তির তীব্র মানসিক চাপ থেকে এ রোগের সৃষ্টি হয়। আবেগীয় দ্বন্দ্ব, শৈশবের বঞ্চনা, বাবামার বিচ্ছিন্নতা, পীড়ন প্রভৃতি মনস্তাত্ত্বিক কারণে সাইকোসিস রোগ দেখা দিতে পারে।
উপর্যুক্ত কারণে মনোবিকার বা সাইকোসিস রোগ সৃষ্টি হতে পারে অর্থাৎ এসব কারণের কোন একটির উপস্থিতি মনোবিকার রোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এ রোগ মূলত তীব্র মানসিক বৈকল্য হিসেবে বিবেচিত। দীর্ঘদিন হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করলে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
আশাকরি, উপরের আলোচনা থেকে সাইকোসিস কেন হয় সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করেছেন।
সাইকোসিস কি? এ রোগের লক্ষণ গুলো কি কি? |