বাজারজাতকরণের গুরুত্ব
পুঁজি যদি হয় ব্যবসায়ের শোণিত প্রবাহ, বাজারজাতকরণ নিঃসন্দেহে তার জীবনীশক্তি। পুঁজি উৎপাদনের সহায়ক, আর বাজারজাতকরণ উৎপাদনের চাবিকাঠি। বাজারজাতকরণ ভোক্তার হাতে পণ্য পৌঁছে দিয়ে ভোগের সাথে উৎপাদনের মিলন ঘটিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় করে প্রাণের সঞ্চার, ফল্গুধারার মতো সিঞ্চিত করে সমগ্র ব্যবসাস জগৎ। আধুনিক সমাজে তাই বাজারজাতকরণের গুরুত্ব অপরিসীম।
নিচে বাজারজাতকরণের গুরুত্ব আলোচিত হলো:
১. বৃহদায়তন উৎপাদনের সহায়ক (Facilitating large-scale production)
ক্রমবর্ধমান বাজারের উপর বৃহদাকার উৎপাদনের বিকাশ নির্ভরশীল। পণ্য উৎপাদনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো বৃহত্তর বাজার। বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারের আয়তন বৃদ্ধি করে। ফলে বৃহদায়তন উৎপাদনের গতি ত্বরান্বিত হয়।
মার্কেটিং এর বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর |
২. শিল্প ও কৃষির সুষম উন্নয়ন (Balanced growth of industry and agriculture)
বাজারজাতকরণ এক খাত থেকে অন্য খাতে সম্পদের বণ্টন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে শিল্প ও কৃষির সুষম উন্নয়নে সহায়তা করে। আর কৃষি ও শিল্পের সমন্বয়ের উপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভর করে।
৩. সামাজিক কল্যাণ (Social well-being)
সমাজের সর্ব শ্রেণীর লোকের জন্য বাজারজাতকরণ খুবই প্রয়োজনীয়। একই অঞ্চলের লোকজন নিজেদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে স্ব স্ব প্রয়োজন মেটাতে পারে। সবাই তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রয় করে এবং সেই বাজার থেকে ভোগের জন্য অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় করতে পারে। বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ার অবর্তমানে এসব করা সম্ভব হতো না।
৪. আন্তঃআঞ্চলিক সম্পদ বণ্টন (Inter-regional distribution of resources)
বাজারজাতকরণের ফলে উদ্বৃত্ত অঞ্চল থেকে ঘাটতি অঞ্চলে সম্পদ বণ্টিত হচ্ছে। আন্তঃআঞ্চলিক সম্পদ বণ্টনের দরুন আঞ্চলিক উন্নয়নে সমতা বিধান করা সম্ভব হচ্ছে।
৫. কর্মসংস্থান (Employment)
বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় জড়িত অসংখ্য মধ্যস্থ ব্যবসায়ী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক লোক কর্মরত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। যে কোনো দেশের বেকার সমস্যার তীব্রতা হ্রাসে বাজারজাতকরণের গুরুত্ব অপরিসীম।
৬. সরবরাহের সাথে চাহিদার সমতা বিধান (Adjusting supply with demand)
বাজারজাতকরণ উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী উৎপাদকের নিকট থেকে ভোক্তার নিকট পৌছে দিয়ে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখে। ফলে চাহিদার সাথে সরবরাহের সমতা সক্ষিত হয়।
৭. বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়ন (Development of foreign trade)
বিশ্ব বাণিজ্যে বাজারজাতকরণের অবদান অপরিসীম। বাজারজাতকরণ দেশে-বিদেশে পণ্য প্রেরণে সহায়তা করছে। এক দেশের পণ্যসামগ্রী আরেক দেশের ভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে এবং পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বাড়িয়ে দেশীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড মজবুত করছে।
৮. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (Improving standard of living)
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিচিত্রধর্মী পণ্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম ভোক্তার হাতে পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে বাজারজাতকরণ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এসব পণ্য ভোগের মাধ্যমে ভোক্তারা তাদের জীবন ধারণের মানকে উন্নত করতে পারে। এ কারণে গতিশীল সমাজে বাজারজাতকরণকে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৯. প্রাকৃতিক সম্পদের সহ্যবহার (Proper utilisation of natural resources)
বাজারজাতকরণ দেশে ও বিদেশে পুঞ্জিভূত প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করে পণ্য ও সেবা কর্ম ডোক্তার হাতে পৌঁছে দেয়। এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার সুনিশ্চিত হয়।
১০. আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন (Socio-Economic Development)
বাজারজাতকরণ শিক্ষা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল সরবরাহ, উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন, বৃহদায়তন শিল্পের সম্ভাবনা সৃষ্টি এবং গ্রাম ও শহরাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। সুতরাং আধুনিক অর্থনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাজারজাতকরণের বিচরণ বিদ্যমান। এ কারণেই বিশ্বখ্যাত ব্যবস্থাপনা বিশারদ Peter F. Drucker বাজারজাতকরণকে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের সর্বাধিক কার্যকর ইঞ্জিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাজারজাতকরণের ভূমিকা আলোচনা কর |