নিরীক্ষা প্রতিবেদন
প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কার্য সম্পন্ন করার পর নিরীক্ষাকালীন সময়ে প্রাপ্ত তথ্য, ব্যাখ্যা ও অন্যান্য প্রমাণপত্র পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানের হিসাবপত্র এবং আর্থিক বিবরণী সম্পর্কে নিরীক্ষক যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন তাকে নিরীক্ষকের প্রতিবেদন বা নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলে।
নিরীক্ষাকার্য সম্পন্ন করার পর নিরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন পেশ করা নিরীক্ষকের কর্তব্য। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমেই নিরীক্ষক তার পরীক্ষিত হিসাবপত্র এবং আর্থিক বিবৃতিগুলো সম্পর্কে তার মতামত নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের গোচরে আনেন। প্রতিবেদন প্রস্তুত ও পেশ করা নিরীক্ষাকার্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং নিরীক্ষাকার্যের শেষ ধাপ।
আরও পড়ুন: নিরীক্ষা মান কি? আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা মান কি এবং এই মানসমূহের সুবিধা
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য সমূহ
নিরীক্ষা কার্যের সর্বশেষ ধাপ হলে প্রতিবেদন প্রস্তুত ও পেশ করা। নিরীক্ষক তার কার্যশেষে একটি নিরপেক্ষ প্রতিবেদন প্রস্তুত করে থাকে। একটি নিরপেক্ষ বা উত্তম নিরীক্ষা প্রতিবেদনের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়-
১) সরলতা
উত্তম নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রথম ও প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য হল সরলতা। প্রতিবেদন এমন হতে হবে যাতে এর অর্থ সহজে অনুধাবন করা যায়।
২) স্পষ্টতা
নিরীক্ষা প্রতিবেদন হতে হবে স্পষ্ট বক্তব্যের একটি দলিল। কারণ, স্পষ্ট বক্তব্যের অভাবে প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
৩) প্রাঞ্জলতা
প্রাঞ্জলতা কথাটির দ্বারা নিরীক্ষা প্রতিবেদনের পরিচ্ছন্নতা বোঝায়। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানের কাজ-কর্মের মূল্যায়ন করার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় বিষয় বা তথ্য প্রকাশ করা প্রয়োজন তা যেন গোপন করা না হয়।
৪) সংক্ষিপ্ততা
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অবশ্যই সংক্ষিপ্ত আকারের হতে হবে। প্রতিবেদনে কোন বিষয়বস্তু যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় তার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: নিরীক্ষা কি একটি পেশা? – ব্যাখ্যা কর।
৫) দৃঢ়তা
নিরীক্ষার সময় কি জাতীয় কাজ করতে হবে, কার্যের পরিধি কি ইত্যাদি বিষয় প্রতিবেদনে স্পষ্ট ও দৃঢ়তার সঙ্গে উল্লেখ করতে হবে।
৬) উদ্দেশ্যভিত্তিক
নিরীক্ষার প্রতিবেদনটি অবশ্যই উদ্দেশ্যভিত্তিক হওয়া যুক্তিযুক্ত। কারণ, উদ্দেশ্যভিত্তিক না হলে নিরীক্ষার প্রতিবেদন তার গুরুত্ব হারাতে পারে।
৭) প্রাসঙ্গিকতা
নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে যে, নিরীক্ষক যে সকল বিষয়গুলোর উপর মতামত ব্যক্ত করবেন তাদের প্রাসঙ্গিকতা যেন না ছাড়িয়ে যায়।
৮) যুক্তিপূর্ণ মতামত
প্রতিবেদনে যে মতামত দেওয়া হবে তা যুক্তিপূর্ণ হতে হবে। যুক্তিহীন বিষয় সংক্রান্ত কোন মতামত প্রতিবেদনে দেওয়া যাবে না।
৯) তথ্যভিত্তিক
নিরীক্ষার প্রতিবেদনে যে সকল বিষয়ের উল্লেখ করা হবে ঐ সকল বিষয় তথ্য ও সময়ভিত্তিক হতে হবে।
১০) বাস্তবতা
প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিষয়গুলো প্রকৃত ও বাস্তবসম্মত হবে। প্রদত্ত সংবাদ যেন প্রকৃতই সংবাদ হয় তা যেন সংবাদ সংগ্রহের উপায় হিসেবে পরিগণিত না হয়।
১১) পক্ষপাতহীনতা
নিরীক্ষক তার প্রতিবেদনে যে সকল বিষয় বা মতামত ব্যক্ত করবেন তাতে যেন নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। অর্থাৎ নিরীক্ষকের প্রতিবেদন স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন হবে।
১২) শর্তের উল্লেখ
প্রতিবেদনে শর্তসাপেক্ষ মতামত দেওয়া হলে তার কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
১৩) নাম, ঠিকানা ও তারিখ
নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে নিরীক্ষকের নাম বা তার প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা এবং প্রতিবেদন প্রস্তুতের তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
১৪) স্বাক্ষর
প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করার শেষে নিরীক্ষক তার প্রতিবেদনটিতে অবশ্যই স্বাক্ষর করবেন এবং প্রয়োজনীয় সীলমোহর ব্যবহার করবেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, যদিও নিরীক্ষা প্রতিবেদন খুব সংক্ষিপ্ত ও বিষয়বস্তুমুখী হয়, তবুও এটি হিসাবের সন্দেহজনক লেনদেনগুলোকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করবে।
আরও পড়ুন: সরকারি নিরীক্ষা বলতে কি বুঝ? সরকারি নিরীক্ষার উদ্দেশ্য আলোচনা কর