ভোগ্য পণ্য
যে সব দ্রব্য চূড়ান্ত ভোগের উপযোগী সেগুলোকে বলা হয় ভোগ্যপণ্য। এ জাতীয় পণ্য বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া ছাড়াই ব্যবহার ও ভোগ করা যায়। টয়লেট সাবান, টুথপেস্ট, টেবিল ফ্যান ইত্যাদি ভোগ্য পণ্যের উদাহরণ। এসব পণ্য ক্রেতা বিনা প্রক্রিয়াতেই ব্যবহার করতে পারে বলে এগুলোকে ভোগ্য পণ্য বলা হয়। অধিকাংশ ভোগ্য পণ্যের এককপ্রতি মূল্য কম হয়ে থাকে। প্রখ্যাত লেখকগণ ভোগ্য পণ্যের নিম্নরূপ সংজ্ঞা প্রদান করেছেন:
১. ফিলিপ কটলার ও গ্যারি আর্মস্ট্রং (Philip Kotler and Gary Armstrong) বলেন, “ভোগ্য পণ্য হচ্ছে ঐগুলো যা চূড়ান্ত ভোক্তা ব্যক্তিগত ভোগের জন্য ক্রয় করে থাকে।”
২. American Marketing Association প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, “কোনো রকম পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়াই যে সব পণ্য চূড়ান্ত ভোক্তা বা গৃহস্থালি ব্যবহারকারীগণ কর্তৃক ব্যবহৃত হয় সেগুলোই ভোগ্যপণ্য।”
৩. Lamb এবং অন্যান্যদের মতে, “ভোগ্য পণ্য হচ্ছে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত অভাবের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য ক্রীত পণ্য”।
ভোক্তাবাজার ও ব্যবসায় বাজারের মধ্যে পার্থক্য দেখাও |
৪. Steven J. S Kinner বলেন, “ভোগ্য পণ্য হচ্ছে ঐ সব পণ্য যেগুলো চূড়ান্ত ভোক্তারা ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যবহারের জন্য ক্রয় করে।” উপরিউক্ত আলোচনা ও সংজ্ঞার আলোকে বলা যায়, সরাসরি ভোগ বা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যে সব পণ্য ক্রয় করা হয় এবং যে সব পণ্যের কোনো প্রক্রিয়াজাতকরণ করার প্রয়োজন হয় না সেসব পণ্যকে ভোগ্যপণ্য বলে।
ভোগ্য পণ্যের বৈশিষ্ট্য
কোনো ধরনের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ব্যতীত ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ভোগের জন্য যেসব পণ্য কেনা হয়, সেসব পণ্যকে ভোগ্যপণ্য বলে। যেমন-চাল, ডাল, টুথপেস্ট, বিস্কুট প্রভৃতি। নিম্নে ভোগ্য পণ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচেনা করা হলো-
১. ক্রয়ের উদ্দেশ্য (Objectives of purchase): ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ভোগের উদ্দেশ্যে ভোগ্য পণ্য ক্রয় করা হয়। অর্থাৎ ভোগ্যপণ্য ক্রয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে চূড়ান্ত ব্যবহার।
২. ক্রয়ের আকার (Size of purchase): ভোগ্যপণ্য অল্প পরিমাণে ক্রয় করা হয়। ব্যক্তিগত ভোগে ব্যবহৃত হয় বলে একসাথে বেশি কেনার প্রয়োজন হয় না।
৩. প্রক্রিয়াকরণ (Processing): ভোগ্যপণ্য ব্যবহারের পূর্বে সাধারণত প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন হয় না। তবে ছোটখাটো প্রক্রিয়াকরণ করা যেতে পারে। যেমন- চাল থেকে ভাত রান্না করা।
৪. এককপ্রতি মূল্য (Per unit price): বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের এককপ্রতি মূল্য কম হয়ে থাকে। এজন্য ক্রয়ে কম অর্থ ব্যয় হয়।
৫. বণ্টন প্রণালি (Channel of distribution): ভোগ্যপণ্যের ক্রেতারা সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। এ কারণে ভোগ্যপণ্য বাজারজাতকরণে দীর্ঘ বণ্টন প্রণালি ব্যবহার করতে হয়। ৬. ক্রয়ের গুরুত্ব (Frequency of purchase): ক্রেতারা ভোগ্যপণ্য ঘন ঘন ক্রয় করে এবং প্রতিবার অল্প পরিমাণে ক্রয় করে। তাই ভোগ্যপণ্য ক্রয়ের ঘনত্ব বেশি।
৭. প্রসার হাতিয়ার (Promotion tool): ভোগ্যপণ্য বাজারজাতকরণে বিজ্ঞাপন ও বিক্রয় প্রসার বেশি কার্যকর।
৮. বাজার বিস্তৃতি (Market expansion): ভোগ্যপণ্যের বাজার দেশের আনাচে-কানাচে বিস্তৃত। অর্থাৎ, সারাদেশেই ভোগ্যপণ্যের ক্রেতা আছে।
৯. প্রাত্যহিক চাহিদা (Regular demand): মানুষের দৈনন্দিন জীবন ধারণের জন্য ভোগ্যপণ্য প্রয়োজন হয়। তাই প্রতিদিনই। ভোগ্যপণ্যের ক্রেতা আছে।
১০. ক্রেতার সংখ্যা (Number of customer): ভোগ্যপণ্যের ক্রেতার সংখ্যা বেশি এবং ক্রেতারা বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকে।
১১. চাহিদা (Demand): ব্যবহারকারীদের উপর ভোগ্যপণ্যের চাহিদা নির্ভরশীল। অন্য কোনো পণ্যের উপর এর চাহিদা নির্ভর করে না।
১২. অর্থ বিনিয়োগ (Financial investment): ভোগ্যপণ্যের এককপ্রতি মূল্য সাধারণত কম এবং অল্প পরিমাণে ক্রয় করা হয় বলে এক্ষেত্রে কম অর্থ বিনিয়োগ করলেই চলে।
১৩. ক্রয় বিবেচনা (Purchase consideration): এক্ষেত্রে ক্রেতারা নিজেদের প্রয়োজন ও সন্তুষ্টি চিন্তা করে পণ্য ক্রয় করে। উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি বিবেচনা করে বাজারজাতকারীকে ভোগ্য পণ্য বাজারজাতকরণ করতে হয়।
বাজার বিভক্তিকরণ কি? বাজার বিভক্তিকরণের সুবিধা-অসুবিধা ও উদ্দেশ্য |