মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র
গ্রেগর জোহান মেন্ডেল বংশগতির জনক হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি বংশগতির উপর দুটি সূত্র উদ্ভাবন করেন। তাঁর দুটি সূত্রে পিতামাতার বৈশিষ্ট্যগুলো কিভাবে সন্তান-সন্ততির মধ্যে স্থানান্তরিত হয় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রবল এবং দুর্বল জিনের বংশগতি নিয়ে গবেষণা করে তিনি বংশগতির সূত্র আবিষ্কার করেন। তাঁর সূত্র দুটি মেন্ডেলবাদ নামে পরিচিতি লাভ করে। তার পরীক্ষায় একই প্রজাতির বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ভিন্ন দুটি মটরগাছ নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। বংশগতির এই পরীক্ষাসমূহ নিম্নরূপ:
প্রথম পরীক্ষণ: মেন্ডেল তাঁর প্রথম পরীক্ষায় দু’ ধরনের মটরদানার সংকর প্রজননের ব্যবস্থা করেন। এর একটি ছিল গোল মসৃণ এবং অন্যটি কুচকানো গোল। প্রথম পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম প্রজন্মের FI সবগুলো মটর দানা থেকে গোল মসৃণ মটর দানা পাওয়া যায়। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন একই বীজ থেকে গাছ করলেন তখন দেখা গেল দ্বিতীয় প্রজন্যে (F2) গোল মসৃণ বীজ এসেছে শতকরা ৭৫ ভাগ এবং কুচকানো ২৫ ভাগ। তাহলে দ্বিতীয় বংশধরের অনুপাত ৩: ১।
আরও পড়ুন
বংশগতি কি বা কাকে বলে? বংশগতির সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ |
মেন্ডেল প্রথম প্রজন্মের (F1) বীজে কুচকানো বীজের প্রচ্ছন্ন থাকাকে গুণগুণ নাম দিলেন। সুতরাং বংশগতি সম্পর্কে মেন্ডেল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, বাবা-মার মধ্যে থাকা মুখ্য এবং গৌণ গুণ দিতীয় বংশে বংশধরদের মধ্যে সঞ্চারিত হয় ৩:১ অনুপাতে। তাই প্রথম সূত্রের নিয়ম অনুযায়ী মা-বাবার পক্ষ থেকে দুটি ফ্যাক্টর প্রথম প্রজন্মে একত্রিত হয় এবং তা একই বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রজন্মে ৩টি প্রবল ও ১টি প্রচ্ছন্ন অনুবাদ প্রদান করে। [তথ্যসূত্র: রেজাউল, সামাজিক পরিবেশে মানবীয় আচরণ, পৃষ্ঠা-১৩৫)
দ্বিতীয় পরীক্ষণ: মেন্ডেল তার দ্বিতীয় পরীক্ষণে প্রথম বংশধরদের গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে বপন করলেন। তিনি দ্বিতীয় বংশধর (F2) মোট ১০৬৪টি মটরগাছ যোগাড় করলেন। মটরগাছগুলোর মধ্যে ৭৮৭টি লম্বা এবং ২৭৭টি খাটো, যার অনুপাত দাঁড়ায় ৩: ১। এর ফলে বুঝা যায়, সংকরায়নের পর প্রথম বংশধরের উদ্ভিদ দুটি বৈসাদৃশ্যময় বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটলেও একটি প্রকাশিত হয় এবং দ্বিতীয়টি প্রচ্ছন্ন অবস্থায় বিদ্যমান থাকে, কিন্তু নষ্ট হয়ে যায় না।
মেন্ডেলের গবেষণা হতে দেখা যায়, প্রথম বংশধরের সমস্ত উদ্ভিদ এক প্রকার লম্বা এবং দ্বিতীয় বংশধরের উদ্ভিদগুলো লম্বা এবং খাটো, যার অনুপাত ৩: ১। প্রথম বংশধরে যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তা প্রায় প্রকট এবং এ বৈশিষ্ট্য দ্বিতীয় বংশধরের তিন- চতুর্থাংশ প্রকাশ পায়। এভাবে তিনি সাতবার পরীক্ষা করেন এবং একই ফল লাভ করেন। (তথ্যসূত্র:- আতিক, মানবীয় বৃদ্ধি, আচরণ ও সামাজিক পরিবেশ পৃ- ১১৯)
মেন্ডেলবাদের সারাংশ
মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার ফলাফলকে এভাবে ব্যাখ্যা করলেন, “একজোড়া বৈসাদৃশ্যময় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মাতা-পিতা হতে সৃষ্ট জনন কোষের যৌন মিলনের ফলে যে সংকর সৃষ্টি হবে, তাতে মাতা ও পিতার স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য প্রত্যেকের একটি করে মোট দুটি ফ্যাক্টর বা জিন থাকবে এবং ফ্যাক্টর বা জিন দুটি পরবর্তীকালে পৃথক পৃথক জনন কোষ সৃষ্টি করবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
এই বিষয়ে আপনার মনে উঁকি দেয়া আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর চলুন জেনে নিই-
বংশগতি বিদ্যার জনক কে?
বংশগতি বিদ্যার জনক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল।
বংশগতি বলতে কি বুঝায়?
বংশগতি বলতে সাধারণত সন্তান-সন্তুতির মধ্যে জন্মসূত্রে পিতামাতা থেকে জৈবিক ও মানসিক প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা ও প্রবণতাকে বুঝায়।
বংশগতির প্রধান উপাদান কোনটি?
বংশগতির প্রধান উপাদান ক্রোমোজোম।