Home » সেবা কি বা কাকে বলে? সেবার বৈশিষ্ট্য কি কি?
সেবা কি বা কাকে বলে, সেবার বৈশিষ্ট্য কি কি,

সেবা কি বা কাকে বলে? সেবার বৈশিষ্ট্য কি কি?

by Susmi
0 comment

সেবা

বাজারজাতকরণ কার্যক্রম শুধু বস্তুগত পণ্য উন্নয়ন ও বাজারজাতকরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সেবা, ব্যক্তি, স্থান, ধারণা, সংগঠন ও বাজারজাতকরণের আওতাভুক্ত। সেবা হচ্ছে এমন কিছু কার্যাবলি বা উপকারিতা যেগুলো পৃথকভাবে শনাক্তকরণযোগ্য অথচ স্পর্শযোগ্য নয় এবং ক্রেতার প্রয়োজন ও অভাব পূরণ করতে সক্ষম। এসব অদৃশ্যমান কার্যাবলি বা উপকার একপক্ষ অন্যপক্ষকে প্রদান করতে পারে। সেবাকে সেবাদানকারী থেকে আলাদা করা যায় না। এজন্য সেবাদানের ক্ষেত্রে সেবাপ্রদানকারীর উপস্থিতি প্রয়োজন। ব্যক্তি, স্থান ও সময়ভেদে সেবার মানে পার্থক্য দেখা যায়। সেবাকে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা যায় না। সেবার উৎপাদন ও ভোগ একইসাথে হয়ে থাকে।

সেবার সংজ্ঞা

বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে সেবার সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিন্মে কয়েকটি দেয়া হলো-

Philip Kotler এবং Gary Armstrong– এর মতে সেবা হচ্ছে যে কোনো কাজ বা সুবিধা যা একপক্ষ অন্যপক্ষকে প্রদান করতে পারে, যা অবশ্যই অস্পর্শনীয় এবং যাতে মালিকানার কোনো পরিবর্তন ঘটে না।

এ প্রসঙ্গে Stanton, Etzel এবং Walker বলেন, সেবা হচ্ছে শনাক্তকরণযোগ্য, অস্পর্শনীয় কার্যাবলি যা লেনদেনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্রেতার অভাবের সন্তুষ্টি বিধান করা।

Zikmund এবং d’ Amico এর ভাষায়, সেবা হচ্ছে ক্রেতার জন্য সম্পাদিত একটি অস্পর্শনীয় কাজ বা কার্য এবং যা অস্পর্শনীয় যা ক্রয়ের পূর্বে নাড়াচাড়া বা পরীক্ষা করা যায় না।

McCarthy এবং Perreault-এর মতে সেবা হচ্ছে অন্যের জন্য এক পক্ষের সম্পাদিত চুক্তি।

পণ্যের জীবন চক্র কি? পণ্যের জীবন চক্র বলতে কি বুঝায়?

সেবার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Steven J. Skinner বলেন, সেবা হচ্ছে একটি অস্পর্শনীয় পণ্য যা ভোক্তাদের সুবিধা প্রদান করে এবং প্রায়ই মানবিক বা যান্ত্রিক প্রচেষ্টার সাথে যুক্ত থাকে।

সামগ্রিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সেবা হচ্ছে এমন কতকগুলো কাজ বা সুবিধা যা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের প্রয়োজন ও অভাব মেটানোর জন্য বাজারজাত করে, যেগুলো পৃথকভাবে শনাক্তযোগ্য অথচ দৃশ্যমান, স্পর্শযোগ্য বা স্বাদগ্রহণযোগ্য নয়।

সেবার বৈশিষ্ট্য

সেবা বলতে এমন কতকগুলো কাজ বা সুবিধাকে বুঝায়, যেগুলো আলাদাভাবে শনাক্তযোগ্য অথচ স্পর্শযোগ্য নয় এবং ক্রেতাদের অভাব বা প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। সেবার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যে কারণে সেবার প্রকৃতি বস্তুগত পণ্য থেকে আলাদা। সেবার বাজারজাতকরণ কর্মসূচি প্রণয়নের সময় বাজারজাতকারীকে অবশ্যই এ বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করতে হবে।

১. অস্পর্শনীয়তা

বস্তুগত পণ্যের মতো কেনার পূর্বে ক্রেতা সেবার স্বাদ নিতে পারে না, সেবাকে দেখতে পারে না, অনুভব করতে পারে না, এমনকি শুনে বা গন্ধ নিয়ে যাচাই করতে পারে না। যেমন- একজন যাত্রী ভ্রমণের পূর্বে বাস কর্তৃপক্ষের সেবা কেমন হবে সে সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না। বাসযাত্রীকে ভ্রমণের পূর্বে একটি টিকিট দেয়া হয় যার দ্বারা নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছার প্রতিশ্রুতি বুঝায়। সেবার অস্পর্শনীয়তা সম্পর্কে Philip Kotler এবং Gary Armstrong বলেন, সেবার অস্পর্শনীয়তা বলতে বুঝায় কেনার পূর্বে সেবা দেখা, স্বাদ নেয়া, অনুভব করা, শোনা বা গন্ধ নেয়া যায় না।

এজন্য সেবা বাজারজাতকারী সেবা থেকে প্রাপ্তব্য সুবিধাকে ক্রেতার সামনে উপস্থাপন করে। সেবা প্রদানের স্থান ব্যক্তি, মূল্য, যন্ত্রপাতি এবং যোগাযোগের মাধ্যমে ক্রেতাকে সেবার মান সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে বাজারজাতকারী এক বা একাধিক উপায়ে সেবা কর্মটিকে ক্রেতার সামনে দৃশ্যমান করে তোলার চেষ্টা করে। সেবার সুবিধাকে তুলে ধরার জন্য চারটি প্রমোশনাল কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে।

ক. উচ্ছ্বাসিতকরণ: এখানে বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করে সেবাকে গ্রাহকদের চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলা হয়। যেমন- জীবন বিমা কর্পোরেশন তাদের একটি বিজ্ঞাপনে এক বৃদ্ধ সুখী দম্পতিকে দেখায়, যারা শেষ বয়সেও পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে, নিশ্চিত মনে বিনোদনে অংশ নিচ্ছে। আর এগুলো সম্ব হয় জীবন বিমার পলিসির কল্যাণে।

খ. অনুষঙ্গ: স্পর্শনীয় বস্তু, ব্যক্তি, বিষয় বা স্থানের সাহায্যে সেবাকে তুলে ধরা হয়। যেমন- ফ্যান্টাসি কিংডম আশুলিয়াকে তুলে ধরতে পারে, কনসালটেন্সি ফার্ম যারা পরামর্শ দিচ্ছে তাদেরকে বিজ্ঞাপনে দেখাতে পারে, নার্সিং হোম বা হাসপাতালে যে সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেখানে বসে তাদেরকে বিজ্ঞাপনে দেখাতে পারে।

গ. বস্তুগত উপস্থাপনা: এক্ষেত্রে বস্তুগতভাবে সেবাটিকে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক গোল্ড ও সিলভার দুই ধরনের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকদের কী ধরনের সুবিধা দিচ্ছে তা প্রকাশ করছে। কমিউনিটি সেন্টারগুলো কর্মচারীদের ড্রেসের মাধ্যমে তাদের পরিচ্ছন্নতা, নির্ভরযোগ্যতার বিষয়টি তুলে ধরছে।

ঘ. প্রামাণিকীকরণ: এক্ষেত্রে তথ্য, চিত্র, গ্রাফ ইত্যাদির মাধ্যমে সেবার বিভিন্ন দিক প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়। যেমন- পেডরোলো পানির পাম্প বিজ্ঞাপনে অতীতের পাম্প বিক্রয়ের হিসাব গ্রাফের মাধ্যমে তুলে ধরে তাদের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে প্রকাশ করছে। বিভিন্ন কোম্পানি ISO 9002 সনদ প্রাপ্তির বিষয়টি প্রচার করে তাদের সেবার মানের ব্যাপারে ক্রেতার আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে।

২. অবিচ্ছিন্নতা

সেবাকে সেবাদানকারী থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। বস্তুগত পণ্য প্রথম উৎপাদিত হয় এরপর মজুদ, বিক্রয় ও ভোগ করা হয়। অন্যদিকে, সেবা প্রথমে ‘বক্রয় হয়, এরপর উৎপাদন ও ভোগ করা হয়। এ প্রসঙ্গে Philip Kotler এবং Gary Armstrong বলেন, সেবার অবিচ্ছিন্নত বলতে বুঝায় যে সেবাদানকারী মানুষ বা মেশিন যাহোক, সেবাকে সেবাদানকারী থেকে আলাদা করা যায় না।

যে কর্মী বা ব্যক্তি সেবা দেয় সেও সেব অংশ হয়ে যায়। আবার, সেবা উৎপাদনের সময় ক্রেতাকে উপস্থিত থাকতে হয়। যেমন- শিক্ষক শিক্ষাদান করেন। শিক্ষাদান বষয়টিকে শিক্ষক থেকে আলাদা করা যায় না। আবার, ছাত্রের অনুপস্থিতিতে শিক্ষাদানও সম্ভব নয়। সেবা দাতা ও সেবা গ্রই তার আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে সেবা উৎপাদন ও ভোগ হবে।

শিল্প পণ্য কি? শিল্প পণ্যের বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর

৩. বৈসাদৃশ্যতা

কে, কখন, কোথায় বং কিভাবে সেবা দিচ্ছে এর ভিত্তিতে সেবার মান বিভিন্ন রকম হয়। একটি পণ্যের লক্ষ লক্ষ একক একই মানের উৎপাদন করা সম্ভব, কিন্তু একজন নাপিতের চুলকাটা সবসময় একরকম হয় না। এ প্রসঙ্গে Philip Kotler এবং Gary Armstrong বলেন, সেবার বৈসাদৃশ্যতা বলতে বুঝায় যে সেবার মান নির্ভর করে কে, কখন, কোথায় এবং কিভাবে সেবা দিচ্ছে তার উপর সেবা প্রদানকারীর শরীর, মন এবং পরিবেশের কারণেও সেবার মান বিভিন্ন ধরনের হয়। বেশিরভাগ সেবা যেহেতু মানুষ প্রদান করে তাই বিভিন্ন কারণে মানুষের কাজ বিভিন্ন রকম হয়। সেবার মানে ক্রেতার সহযোগিতা, কর্মীর নৈতিকতা ও কাজের চাপ প্রভাব বিস্তার করে। যেমন- ডাক্তার যদি ১ ঘণ্টায় ২০ জন রোগী দেখে তাহলে তাঁর সেবার মান ও ১ ঘণ্টায় ১০ জন রোগী দেখলে তার সেবার মান এক হবে না। তবে প্রতিষ্ঠানকে সেবার মানে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে।

৪. নশ্বরতা

সেবার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেবা নশ্বর। সেবাকে পরবর্তীতে বিক্রয় বা ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা যায় না। সিনেমা হলের খালি আসন, ট্রেনের খালি সিট সংরক্ষণ করে ঈদের সময় যখন চাহিদা বেশি থাকে তখন ব্যবহার করা যায় না। Philip Kotler এবং Gary Armstrong বলেন, সেবার নশ্বরতা বলতে বুঝায় যে পরবর্তীতে বিক্রয় বা ব্যবহারের জন্য সেবাকে সংরক্ষণ করা যায় না।

সেবার চাহিদা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে এটা বাজারজাতকারীর জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। কিন্তু চাহিদা উঠানামা করলে সমস্যা হয়। যেমন- কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে শীতকালে ভীড় রেশি থাকে, অন্য সময় ভীড় কম থাকে। সেবার নশ্বরতাকে মোকাবেলা করার জন্য বাজারজাতকারীকে কয়েকটি কাজ করতে হয়।

উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে সেবার প্রকৃতি বস্তুগত পণ্য থেকে আলাদা। এজন্য বাজারজাতকারীকে সেবা বাজারজাত করার জন্য ভিন্ন ধরনের বাজারজাতকরণ কৌশল উন্নয়ন করতে হয়।

Related Posts