স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড। সমগ্র দেহব্যাপী বিস্তৃত জালের মতো ছড়িয়ে থাকা স্নায়ুগুলো বিভিন্ন উদ্দীপক থেকে উত্তেজনা গ্রহণ করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয়। পরে তা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্নায়ুর মাধ্যমে কার্যগত ও আচরণগত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আজকের আলোচনায় আমরা স্নায়ুতন্ত্রের কাজ তথা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলী গুলো তুলে ধরবো।
মানবীয় আচরণ সৃষ্টিতে স্নায়বিক প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম বিশ্লেষণে দেখা যায় সমগ্র দেহব্যাপী বিস্তৃত স্নায়ুসমূহ দ্বারা উদ্দীপক হতে গৃহীত উত্তেজনা স্নায়ুতন্ত্রের অন্তর্মুখী স্নায়ুগুলোর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং দেখান যে, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত বহির্মুখী স্নায়ুর মাধ্যমে শরীরের গতিশীল পেশীতে পরিবাহিত হয় এবং পরিবেশ উপযোগী আচরণগত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এভাবে মানবদেহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, আচরণ-অভিজ্ঞতা, প্রত্যক্ষণ, সংবেদন ইত্যাদির মূলে স্নায়ুতন্ত্র কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
স্নায়ুতন্ত্র কাকে বলে ও স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণীবিভাগ |
গাইটোন এবং হল এর মতে, স্নায়ুতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিশাল জটিলতার এক অদ্ভুত নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া; আক্ষরিক অর্থে এটি বিভিন্ন ইন্দ্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ তথ্যের একক গ্রহণ করে, যেগুলোর সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে শারীরিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
ই. আর. হিলগার্ড বলেছেন, “স্নায়ুতন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট কাঠামো মানুষকে পরিবেশের প্রতি প্রতিক্রিয়া ও তাৎক্ষণিক সংগতিবিধানের ক্ষমতা প্রদান করে, এমনকি অতীতের অভিজ্ঞতাকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চার করতে এবং অভ্যাস ও মনোভাবের বিকাশ সাধনে সহায়তা প্রদান করে।”
সংগ্রাহক (Receptors) ও প্রভাব (Effectors) এর মধ্যে প্রণোদনা পরিচালনা করাই স্নায়ুতন্ত্রের মুখ্য উদ্দেশ্য। সংগ্রাহক যন্ত্রের মাধ্যমে চাপ, তাপ, গন্ধ, স্পর্শ, দর্শন, শ্রবণ প্রভৃতি সংবেদন গ্রহণের পর প্রক্রিয়াকরণ করে বিভিন্ন প্রভাব যন্ত্রের মাধ্যমে (গ্রন্থি, পেশী) প্রণোদনা সৃষ্টি করাই স্নায়ুতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য। যেমন- ঘুমন্ত অবস্থায় গরম বা ঠাণ্ডা অনুভূত হলে হাত সরিয়ে নেয়া। শরীরের কোথাও পিঁপড়ে কামড় দিলে তা তাড়িয়ে দেয়া বা মেরে ফেলা প্রভৃতি উদ্দীপক প্রতিক্রিয়ার সংযোগ স্থাপনে স্নায়ুতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্নায়ুতন্ত্রে RAS (Recticular Activating System) এর কারণে একই উদ্দীপকের প্রতি বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন রূপ বা একই ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আচরণ প্রদর্শন করে। ফলে ব্যক্তির আচরণে বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়।
স্নায়ুতন্ত্রের কাজ
শারীরতত্ত্ববিদ Guyton ও Hall এর মতে, স্নায়ুতন্ত্রের কাজ গুলো নিম্নরূপ-
১. স্নায়ুতন্ত্র বিভিন্ন ধরনের সংবেদন অঙ্গ থেকে লক্ষ লক্ষ তথ্যের একক (Millions of bits of information) গ্রহণ করে এবং সেগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে শরীর অঙ্গে প্রতি সাড়া জাগায়।
২. সংগ্রাহক যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে সংগৃহীত প্রবাহকে অর্থপূর্ণ করে সংবেদন অভিজ্ঞতার (Sensory experience) সৃষ্টি করে। এতে মানুষ কোনকিছু দেখে বুঝতে পারে, কোনকিছু শুনে তার অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারে।
৩. বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করাই হচ্ছে স্নায়ুতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যেমন-
ক. Contraction of skeletal muscles through the body.
খ. Contraction of smooth muscle in the internal organ.
গ. Secretion by both exocrive and endocrive glands in many parts of the body.
উপর্যুক্ত কার্যাবলিকে সমষ্টিগতভাবে স্নায়ুতন্ত্রের অঙ্গ সঞ্চালন (Motor functions of the nervous system) বলা হয়।
পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি – বিস্তারিত তুলে ধর |
৪. স্নায়ুতন্ত্রের অন্যতম প্রধান কাজ হলো বাইরে থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে এমনভাবে প্রক্রিয়াজাত করা, যাতে উপযুক্ত সঞ্চালন (Appropriate motor response) তৈরি হয়। উল্লেখ্য যে, বৃহৎ সংখ্যক সংবেদী তথ্য অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনায় মস্তিষ্ক কর্তৃক বাতিল (Discarded by the brain) হয়ে যায়।
৫. বাছাইকৃত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো স্নায়ুতান্ত্রিক বিশেষ ব্যবস্থায় মস্তিষ্কের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ অংশে প্রেরিত হয় এবং উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই ধরনের কার্যাবলিকে স্নায়ুতন্ত্রের সমন্বিত কার্যাবলি (Integrative function of the nurvous system) বলে।
৬. স্নায়ুতান্ত্রিক বিশেষ ব্যবস্থায় সংগৃহীত ও প্রক্রিয়াকৃত অনেক তথ্য ভবিষ্যৎ সঞ্চালন কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ এবং চিন্তন প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের জন্য মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্সে জমা থাকে।
এই জমাকৃত তথ্য যে কোন সময় ব্যবহৃত হতে পারে। একবার সঞ্চিত তথ্য স্নায়ুতন্ত্রের প্রক্রিয়াকরণ যান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ (Part of the processing michanism) হিসেবে প্রাধান্য বিস্তার করে। তবে মস্তিষ্কের Basal unit এবং Spinal cord- ও কিছু তথ্য জমা রাখার কাজ করে। এ প্রক্রিয়াকে গাইটোন Facilitation process বলে উল্লেখ করেছেন।