Home » এককেন্দ্রিক সরকার কাকে বলে ও এককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য
এককেন্দ্রিক সরকার কাকে বলে, এককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য,

এককেন্দ্রিক সরকার কাকে বলে ও এককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য

by Susmi
0 comment

এককেন্দ্রিক সরকার কাকে বলে

এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারের সব ক্ষমতা একটিমাত্র জাতীয় বা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে পুঞ্জীভূত থাকে। কেন্দ্র নিজের প্রয়োজনে বা অঞ্চলসমূহের চাহিদার ভিত্তিতে আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা সরকার গঠন করে তাদের হাতে কিছু কিছু ক্ষমতা অর্পণ করে। কিন্তু ঐসব আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ বা সরকারগুলো কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণেই থেকে যায়। তারা স্বাধীনভাবে কোনো কাজ করতে পারে না। কেন্দ্র ইচ্ছা করলেই আঞ্চলিক সরকারগুলো পুনর্গঠন করতে পারে। এছাড়া তাদের ক্ষমতার হ্রাসবৃদ্ধি এমনকি প্রয়োজন মনে করলে বিলুপ্তিও ঘটাতে পারে।

সংসদীয় সরকারের বৈশিষ্ট্য | মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য

অধ্যাপক ডাইসি এককেন্দ্রিক সরকার সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই সরকার হলো একটি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক চূড়ান্ত ডাইনবিভাগীয় ক্ষমতার স্বাভাবিক ব্যবহার।’ (Unitarism is the habitual exercise of supreme legislative authority by one central power.)

অধ্যাপক গেটেল (Prof. Gettel) এর মতে, ‘এককেন্দ্রিক সরকার হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যেখানে সংবিধান রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা জাতীয় সরকারের হাতে অর্পণ করে।’ (Unitary government is a system in which the constitution of the state delegates all government powers to the national government.)

সি. এফ. স্ট্রং (C. F. Strong) এর মতে, ‘যে শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় আইনসভা সংবিধানের মাধ্যমে অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী তাই এককেন্দ্রিক সরকার।’

অধ্যাপক গার্নার (Prof. Garner) এর মতে, ‘এককেন্দ্রিক সরকার হচ্ছে এমন এক ব্যবস্থা যেখানে সব ক্ষমতা সংবিধানের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয় এবং স্থানীয় সরকারসমূহের ক্ষমতার স্বাতন্ত্র্য এমনকি অস্তিত্বও কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর নির্ভরশীল।’

এককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য

এককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

১. কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রাধান্য

অধ্যাপক ডাইসি (Dicey) এর মতে, ‘এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রাধান্য। কেন্দ্রীয় আইনসভার কর্তৃত্ব সমগ্র দেশে পরিব্যাপ্ত থাকে এবং এই আইনসভা যে কোনো আইন পাস বা রদ করতে পারে।’ কে. সি. হুইয়ার (K. C. Wheare) বলেন, ‘এককেন্দ্রিক সংবিধানে সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য আইনসভাই সংশ্লিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষ হয়।'(‘In a unitary constitution, the legislature of the whole country is the supreme lawmaking body in the country.’)

২. কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা

এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা কেন্দ্রে পুঞ্জীভূত হয়। প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সরকারকে তাদের ক্ষমতা পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়।

৩. একক আনুগত্য

এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো নাগরিকদের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি একক আনুগত্য প্রদর্শন। এ সরকারব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের মতো দ্বৈত আনুগত্য দেখাতে হয় না। কারণ এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় দ্বৈত নাগরিকতার কোনো সুযোগ নেই।

৪. সংবিধানের প্রকৃতি

এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত বা অলিখিত যেকোনো ধরনের হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপরিচালনার ধারা-উপধারাসমূহ লিখিত থাকে। যেমন: বাংলাদেশের সংবিধান। আবার, অলিখিত সংবিধানের মাধ্যমেও দেশ পরিচালিত হয়। যেমন: যুক্তরাজ্যের সংবিধান।

৫ . সুপরিবর্তনীয় সংবিধান

এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় সংবিধান সাধারণত সুপরিবর্তনীয় হয়। কারণ এই ব্যবস্থায় আইনসভা সাধারণ আইন পাসের নিয়মে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। অর্থাৎ, সংবিধান সংশোধনের জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় না।

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর

৬. একক নাগরিকত্ব

এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় একক নাগরিকত্ব স্বীকৃত। এ কারণে প্রদেশের জন্য পৃথক কোনো নাগরিকত্ব থাকে না।

৭. স্থানীয় সরকার

এককেন্দ্রিক সরকার প্রশাসনিক সুবিধার্থে স্থানীয় সরকার বা কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি করে। যেমন: প্রদেশ বা রাজ্য, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক গেটেল (Prof. Gettell) বলেন, ‘এককেন্দ্রিক সরকার প্রশাসনে দক্ষতা সৃষ্টির জন্য স্থানীয় সরকারকে কিছু ক্ষমতা অর্পণ করে থাকে।’

৮. স্বায়ত্তশাসনের অনুপস্থিতি

এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থায় প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সরকারগুলো স্বায়ত্তশাসন পায় না। ফলে এদের নিজস্ব কোনো এখতিয়ার থাকে না। তারা কেন্দ্রের অভিপ্রায় অনুযায়ী চলে।

৯. নমনীয়তা

এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থা নমনীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে। এ সরকার যেকোনো জরুরি অবস্থা বা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

Related Posts