Home » নিয়ন্ত্রণ কি বা কাকে বলে? নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব আলোচনা কর।
নিয়ন্ত্রণ কি বা কাকে বলে নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব

নিয়ন্ত্রণ কি বা কাকে বলে? নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব আলোচনা কর।

by Susmi
0 comment

নিয়ন্ত্রণ কি বা কাকে বলে?

নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সহজে বলা যায়, পূর্ন নির্ধারিত মান অনুযায়ী কার্য সম্পাদনের যাবতীয় প্রক্রিয়াই হলো নিয়ন্ত্রণ।

ব্যাপক অর্থে বলা যায়- নিয়ন্ত্রণ হলো ব্যবস্থাপনার এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যাবলি সম্পাদিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ, কার্যের বিচ্যুতি অনুসন্ধান এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা

নিচে নিয়ন্ত্রণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা দেয়া হলো-

১. হেনরী ফেয়ল (Henry Fayol) এর মতে, “নিয়ন্ত্রণ হলো গৃহীত পরিকল্পনা, জারিকৃত নির্দেশনা ও প্রতিষ্ঠিত নীতি অনুযায়ী কার্য পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করা।”

2. অইরিক ও কুঞ্জ (Weihrick & Koontz) এর মতে, পরিকল্পনা অনুযায়ী যাতে কার্য সম্পাদিত হয় তা নিশ্চিত করার জন্য সম্পাদিত ব্যক্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজ পরিমাপ ও সংশোধন করাকেই নিয়ন্ত্রণ বলে।

পরিশেষে বলা যায়, পরিকল্পনা ও নির্ধারিত মানের আলোকে প্রতিষ্ঠানের কার্যাদি সম্পন্ন হচ্ছে কিনা তা মূল্যায়ন বিচ্যুতি ঘটলে তা নিরূপণ বিচ্যুতির কারণ নির্ণয় ও তা বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনীমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যে পৌঁছার প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ বলে।

আরও পড়ুন:   ম্যাকগ্রেগর এর X ও Y তত্ত্ব ব্যাখ্যা কর

নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা

একটি প্রতিষ্ঠানের সকল কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তনশীল পরিবেশে প্রতিষ্ঠানকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে, বড় ধরনের ভুল থেকে প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য ছোট ভুল, বড় ভুলে পরিণত হবার আগেই তা সনাক্ত করতে সাহায্য করে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে, লোকসানের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে। ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণের এসব গুরুত্ব নিম্নোক্ত আলোচনায় তুলে ধরা হলো-

১. পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা

পরিকল্পনার সাথে নিয়ন্ত্রণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। সঠিক নিয়ন্ত্রণ কৌশলের মাধ্যমে পরিকল্পনার বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিমাপ করা যায়। ফলে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সহজতর হয়।

২. কর্তৃত্ব অর্পণ

প্রতিষ্ঠানের সকল বিভাগে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যবস্থাপক নিশ্চিন্তে অধস্তনের নিকট কর্তৃত্ব অর্পণ করতে পারেন।

৩. লোকসানের ঝুঁকি হ্রাস

সঠিক ও কার্যকর নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার কারণে সব রকমের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রিত হয় বলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়ে। এতে প্রতিষ্ঠানে লোকসানের ঝুঁকি কমে যায়।

৪. সমস্যার কারণ চিহ্নিতকরণ

পরিকল্পনা মোতাবেক বাস্তব কাজ পরিচালিত না হলে বুঝতে হবে কাজের ক্ষেত্রে কোথাও সমস্যা রয়েছে। কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবস্থাপকগণ সমস্যার কারণ চিহ্নিত করতে পারেন এবং যথাসম্ভব তা সংশোধনও করতে পারেন।

৫. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ

উত্তম নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রতিষ্ঠিত হলে প্রতিষ্ঠানের উপরের স্তরে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রাখার প্রয়োজন হয় না। এর মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা অযোগ্য ব্যবহার কমানো যায় বিধায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হয়।

৬. সমন্বয়সাধনে সহায়তা

কার্যকর নিয়ন্ত্রন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ ও কর্মীর কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধনে সহায়তা করে। সমন্বয় সাধনের কারণে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

৭. পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা

প্রতিষ্ঠানে কিংবা এর পরিবেশে কোনো পরিবর্তন সাধিত হতে পারে। কার্যকর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এ পরিবর্তনশীল অবস্থা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে পারে এবং পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করে।

৮. অপচয় হ্রাস

সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকলে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রত্যেক ব্যক্তি তার দায়িত্ব সঠিক পরিকল্পনা মোতাবেক পালন করতে সচেষ্ট হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের অপচয় হ্রাস পায়।

৯. ব্যবস্থাপকের সময় ও শ্রম সাশ্রয়

প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা থাকলে ব্যবস্থাপককে প্রতিষ্ঠানের কাজ দেখাশুনা করতে অধিক সময় দিতে হয় না। বরং অন্যান্য কাজে তিনি অধিক মনোনিবেশ করতে পারেন। ফলে তার সময় ও শ্রম বাঁচে।

১০. ভুল-ত্রুটি থেকে অব্যাহতি

অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুল দিনের পর দিন ঘটতে থাকলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। নিয়ন্ত্রণ এ ধরনের ভুল পূর্ব থেকে সনাক্ত করতে সাহায্য করে। ফলে প্রতিষ্ঠান অনিবার্য ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায়।

১১. দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ

শুধু ভুল ভ্রান্তি বা বিচ্যুতি সনাক্তকরণই নয়, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তার কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সহায়তা করে। এতে প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।

১২. ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনয়ন

নিয়ন্ত্রণহীনতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সীমালঙ্ঘন করতে প্ররোচিত করে। এছাড়া সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত ব্যবস্থাপনার অধিকাংশ কাজই বেপরোয়াভাবে পরিচালিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে ব্যবস্থাপনাকে গতিশীল ও সুশৃঙ্খল করতে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক।

সুতরাং, ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক কার্যাবলি সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণে কোনো কোনো লেখক controlling সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন- Management itself is controlling অর্থাৎ ব্যবস্থাপনাই নিয়ন্ত্রণ।

Related Posts