Home » বাণিজ্যিক পত্র কি বা কাকে বলে? একটি আদর্শ বাণিজ্যিক পত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
বাণিজ্যিক পত্র কি বা কাকে বলে

বাণিজ্যিক পত্র কি বা কাকে বলে? একটি আদর্শ বাণিজ্যিক পত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।

by Susmi
0 comment

বাণিজ্যিক পত্র কি বা কাকে বলে?

যে পত্রের মাধ্যমে ব্যবসায় সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ স্থাপন করা হয় তাকে বাণিজ্যিক পত্র বলে। অর্থাৎ ব্যবসায়-বাণিজ্যে লেনদেন সম্পর্কে লিখিত পত্রকে বাণিজ্যিক পত্র বলা হয়। বাণিজ্যিক যোগাযোগের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে বাণিজ্যিক পত্র যোগাযোগই হলো সবচেয়ে সহজ, সুলভ, নির্ভরযোগ্য ও স্থায়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা। পত্র যোগাযোগের মাধ্যমে জটিল বিষয়সমূহ বার্তা গ্রহীতার যোগ্যতা অনুসারে ব্যাখ্যাসহ অত্যন্ত সহজ, সরল, বোধগম্য ও নির্ভুল ভাষায় ব্যক্ত করে যোগাযোগের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জন করা যায়।

বাণিজ্যিক কার্যকলাপে লিপ্ত দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তথ্য ও ভাবের আদান-প্রদানের লক্ষ্যে যেসব পত্র রচিত হয় তাকে ব্যবসায়িক পত্র বা বাণিজ্যিক পত্র বলে।

বাণিজ্যিক পত্রের সংজ্ঞা

কয়েকজন ব্যবস্থাপনাবিদ বাণিজ্যিক পত্রের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করেছেন-

অধ্যাপক টেইনটর বলেন, “বাণিজ্যিক বিষয়ে লিখিত সকল ধরনের পত্রকেই বাণিজিক্য পত্র বলে।”

অধ্যাপক হ্যানসনের মতে, “The letters which are exchanged among businessman in connection with business affairs are called business letters.”

W. J. Weston-এর মতে, “Commercial correspondence is a system of conductiong business transaction by means of writing.”

ড. এম, এ মান্নান বলেন, “ব্যবসায়ীগণ তাদের ব্যবসায় সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ কর নিজেদের মধ্যে যে পত্র বিনিময় করে তাকে বাণিজ্যিক পত্র বলে।”

আরও পড়ুন:   লিখিত ও মৌখিক যোগাযোগের পার্থক্য গুলো আলোচনা কর

একটি আদর্শ বাণিজ্যিক পত্রের বৈশিষ্ট্য

আধুনিক জটিল ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায় জগতে তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ বিশেষভাবে ব্যবসায়িক পত্রের উপর নির্ভরশীল। ব্যবসায়িক পত্র ব্যবসায়-বাণিজ্যে জড়িত বিভিন্ন পক্ষগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধনস্বরূপ। তাই এটা সঠিকভাবে প্রণীত না হলে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। এর বিষয়বস্তু, ধারাবাহিকতা, ভাষার সরলতা ও মাধুর্যের উপর ব্যবসায়িক সাফল্য নির্ভর করে। অন্যান্য পত্র যোগাযোগের ন্যায় ব্যবসায়িক পত্রেরও কতিপয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে একটি আদর্শ বাণিজ্যিক পত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করা হলো-

১. স্পষ্টতা

ব্যবসায়িক পত্রের ভাষা ও বক্তব্য স্পষ্ট হতে হবে। অস্পষ্টতার জন্য পত্র রচনার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। অর্থাৎ পত্রের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

২. সরলতা

ব্যবসায়িক পত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এর বক্তব্য ও ভাষা সহজ ও সরল হতে হবে।

৩. সু-পরিকল্পনা

একটি আদর্শ ব্যবসায়িক পত্রের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো পরিকল্পিত উপায়ে এর বিষয়বস্তু সাজাতে হবে এবং তদনুযায়ী পত্র লিখতে হবে।

৪. সংক্ষিপ্ততা

বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি সর্বদা অল্প কথায় তার মূল বক্তব্য তুলে ধরে। তাই ব্যবসায়িক পত্র সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

৫. সম্পূর্ণতা

পত্রের বক্তব্য আংশিক বা অসম্পূর্ণভাবে উপস্থাপিত হলে পাঠকের পক্ষে এর মর্ম উদঘাটন করা সম্ভব নয়। তাই ব্যবসায়িক পত্র সম্পূর্ণভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

৬. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

হাতে লেখা হোক আর টাইপ করা হোক উভয় ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক পত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে রচনা করতে হবে।

৭. প্রাসঙ্গিকতা

পত্র লেখার উদ্দেশ্য প্রাসঙ্গিক হতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা যাবে না। কারণ পত্র রচনার মূলে নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য জড়িত থাকে।

৮. নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ

ব্যবসায়িক পত্র রচনার জন্য প্রচলিত কাঠামো বা বিষয়বিন্যাস রীতি হয়েছে। সুতরাং পত্র রচয়িতাকে প্রচলিত কাঠামো অনুসরণ করে পত্র রচনা করতে হবে।

৯. নিরপেক্ষতা

পত্র লেখককে অবশ্যই সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তার বক্তব্য বিষয় তুলে ধরতে হবে। তার লেখায় যে কোথাও পক্ষপাতিত্ব ফুটে না ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রেখে ব্যবসায়িক পত্র রচনা করতে হবে।

১০. মূল বিষয়বস্তু বিন্যাস

ব্যবসায়িক পত্রের মূল বক্তব্য এলোমেলোভাবে উপস্থাপন করা উচিত নয়। পাঠকের আগ্রহের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিষয়বস্তুকে গুরুত্বের ক্রমিক ভিত্তিতে উপস্থাপন করতে হবে।

১১. ভুল-ত্রুটিমুক্ত

পত্রের বক্তব্য ত্রুটিপূর্ণ হলে তা একদিকে যেমন লেখককে বিরূপভাবে সমালোচিত করে, অন্যদিকে পত্র লেখার উদ্দেশ্য অর্জনও ব্যাহত হয়। তাই বাণিজ্যিক পত্র রচনার করার সময় বক্তব্যের ভুল-ত্রুটিমুক্তের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

১২. অতি কথন বর্জন

ব্যবসায়িক পত্রে বেশি কথা বা অতি কথন বর্জন করতে হবে। প্রয়োজনীয় বক্তব্য সহজ-সরল ভাষায় লিপিবদ্ধ করে পত্র শেষ করা উচিত।

১৩. পাঠকের কথা মনে রাখা

বাণিজ্যিক পত্র পাঠকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও বিষয়বস্তু বুঝবার ক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনাপূর্বক লিখতে হবে। অন্যথায় পাঠকগণ পত্রের মূল বক্তব্য অনুধাবনে সক্ষম হবে না।

১৪. লেখকের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের প্রকাশ

পত্র লেখকের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ তার লেখা ব্যবসায়িক পত্রে ফুটে উঠবে। মার্জিত ভাষা, সৌজন্যবোধ, সরলতা, সংক্ষিপ্ততা ইত্যাদির মদ্য দিয়ে লেখকের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়।

১৫. সৌজন্য

ব্যবসায়িক পত্রের বিষয়বস্তুতে ব্যবসায়িক সংবাদ ও তথ্যাদি স্থান পায় বলে এতে ব্যক্তিগত ভাবাবেগ প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। তবে ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধির জন্য পত্র রচয়িতাকে বেশ কিছু সৌজন্য প্রকাশক শব্দ ব্যবহার করতে হয়।

১৬. সূত্র নম্বর

এটি একটি ‍গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। নথিবদ্ধকরণের সুবিধার্থে পত্রপ্রাপক প্রতিটি পত্রে সূত্র নম্বর সংযোজন করে থাকেন।

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে ব্যাপক বিস্তৃত ব্যবসায়-বাণিজ্যে বাণিজ্যিক পত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি ব্যবসায়-বাণিজ্যের সংযোগ প্রতিষ্ঠা রক্ষা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এর সঠিকতার উপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভরশীল। তাই পত্র লেখককে উপরিউক্ত বিষয়সমূহের উপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

Related Posts