পরিভাষা কি বা পরিভাষা বলতে কি বোঝায় তা অনেকেরই অজানা। অনেকে হয়তো শব্দটির সাথে অপরিচিতও। কিন্তু বাংলা ভাষায় শব্দটির রয়েছে বিশাল গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। আর তাই আজকের আমাদের আর্টিকেলের বিষয় পরিভাষা কি ও বাংলা পরিভাষার গুরুত্ব। আশাকরি, লেখাটি পড়ে উপকৃত হবেন।
পরিভাষা কি?
জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রয়োজনেই কোন কোন শব্দ ক্ষেত্র বিশেষে বিশেষ বা বিশিষ্টার্থবোধক অর্থ গ্রহণ করে। যেমন- ‘শব্দ’ কথাটির অর্থ ধ্বনি বা আওয়াজ। কিন্তু ব্যাকরণে শব্দ বলতে বোঝায় অর্থবহ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি যার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘ওয়ার্ড’। অনেকের মতে এসব বিশিষ্টার্থবোধক শব্দের নামই হলো পরিভাষা।
সোজা করে বলতে গেলে, সংক্ষেপে কোনো বিষয়কে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করে এমন শব্দই হল পরিভাষা।
ইংরেজি ‘Definition’ শব্দের বাংলা অনুবাদ হলো ‘পরিভাষা’। এর কাছাকাছি আরেকটি ইংরেজি শব্দ ধরা যায় ‘technical term’-যার বাংলা অনুবাদ হচ্ছে ‘পারিভাষিক শব্দ’।
পরিভাষা বনাম সাধারণ শব্দ
সাধারণ শব্দের সঙ্গে পারিভাষিক শব্দের পার্থক্য একটা জায়গায়, আর তা হলো- সাধারণ শব্দ দিয়ে একাধিক ভাব প্রকাশ করা যায়, কিন্তু পরিভাষা একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে না। একাধিক ভাব নির্দেশের জন্যও একই পরিভাষা ব্যবহৃত হতে পারে না। যেমন- ‘মাথা’ শব্দটি দিয়ে একাধিক ভাব বা অর্থ প্রকাশ করা যায়-গ্রামের মাথা, রাস্তার মাথা, চৌমাথা, মাথা ধরা ইত্যাদি। তাই ‘মাথা’ শব্দটি একটি সাধারণ শব্দ। অন্যদিকে, ‘সমাস’ বলতে পরস্পর অর্থসঙ্গতি বিশিষ্ট একাধিক পদের এক পদে পরিণত হওয়া ছাড়া আর কিছুই বোঝায় না। তাই ‘সমাস’ বাংলা ব্যাকরণ শাস্ত্রের একটি পারিভাষিক শব্দ।
পরিভাষার বৈশিষ্ট্য
পরিভাষা বা পারিভাষিক শব্দের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান-
- সংক্ষেপে কোনো বিষয়কে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করে;
- পন্ডিতগণের সম্মতির মাধ্যমে স্থিরীকৃত হয়;
- একটি মাত্র ভাবকেই কেবল প্রকাশ করে;
- একাধিক ভাবকে প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হয় না;
- মূলের সঙ্গে সঙ্গতিহীন হলেও তার প্রযুক্ত অর্থই শব্দটির যথার্থ পারিভাষিক অর্থ।
পরিভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
পৃথিবীতে কোনো ভাষাই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রয়োজনীয় সব শব্দ সব ভাষাতে পাওয়া যায় না। বিকল্প শব্দ ও সহজবোধ্যতার জন্যই পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করা হয়। নিম্নে পরিভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো –
১। পরিভাষার মাধ্যমে ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা যায়।
২। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক শব্দকে বিশিষ্ট অর্থে ব্যবহারের জন্য পরিভাষা বা পারিভাষিক শব্দের প্রয়োজন হয়।
৩। অনুবাদের ক্ষেত্রে পরিভাষা বা পারিভাষিক শব্দের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৪। পরিভাষা বা পারিভাষিক শব্দ ব্যবহারের ফলে একটি ভাষার সাথে আরেকটি ভাষার একটি যোগাযোগ তৈরি হয়।
৫। পরিভাষা বা পারিভাষিক শব্দ ব্যবহারে ভাষা গতিশীল হয় ও সুন্দর হয়।
পরিভাষা বা পারিভাষিক শব্দ চেনার উপায়
বর্তমানে আমরা জেনে না জেনে পদে পদে অনেক পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করছি। এখন কথা হচ্ছে ঐ সব পারিভাষিক শব্দ চেনার উপায় কি?
যে শব্দগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ কথাবার্তায় তেমন প্রয়োজন পড়ে না কিন্তু ঐ বিশেষ জ্ঞানের আলোচনায় শব্দটি যদি অনিবার্যভাবে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তাহলেই বুঝতে হবে শব্দটি একটি পারিভাষিক শব্দ। যেমন- সমাস সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে অবশ্যই ‘পূর্বপদ’, ‘পরপদ’, ‘সমস্যমান পদ’, ব্যাসবাক্য এসব শব্দগুলোর সাহায্য ছাড়া আলোচনাই করা যাবে না। সুতরাং আপনি ধরে নেবেন ঐ শব্দগুলো পারিভাষিক শব্দ।
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা
সব সময় পারিভাষিক শব্দ আবার এতো সহজে চেনা যায় না। কারণ বর্তমানে পারিভাষিক শব্দের বহুল ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা এতটা বেড়েছে যে এগুলোকে আর পারিভাষিক শব্দই মনে হয় না। যেমন- উকিল, মোক্তার, আবাসিক, অনাবাসিক ইত্যাদি।
পারিভাষিক শব্দের উদাহরণ
নিচে কিছু পারিভাষিক শব্দের উদাহরণ তুলে ধরা হলো-
- Abbreviation — সংক্ষেপণ
- Academic — অধিবিদ্যা / বিদ্যায়তনিক
- Academic year / session — শিক্ষাবর্ষ
- Account — হিসাব
- Acknowledgement — প্রাপ্তিস্বীকার
- Acting — ভারপ্রাপ্ত/ অস্থায়ী
- Acting editor — ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
- Adaptation — অভিযোজন
- Address of welcome — অভিনন্দনপত্র বা সংবর্ধনা ভাষণ
- Admission — ভর্তি, প্রবেশ
- Administrator — প্রশাসক
- Abstract — সার বিমূর্ত
- Administrative — প্রশাসনিক
- Admit card — প্রবেশপত্র
- Adult education –বয়স্ক শিক্ষা
- Adviser — উপদেষ্টা
- Affidavit — শপথনামা/হলফনামা
- Agenda — আলোচ্য-সূচি
- Agent — প্রতিনিধি / অনুসংগঠক / এজেন্ট
- Agreement — চুক্তি / সম্মতি/মতৈক্য