Home » প্রেষণা কি বা কাকে বলে? প্রেষণার গুরুত্ব আলোচনা কর।
প্রেষণা কি বা কাকে বলে প্রেষণার গুরুত্ব

প্রেষণা কি বা কাকে বলে? প্রেষণার গুরুত্ব আলোচনা কর।

by Susmi
0 comment

প্রেষণা কি বা কাকে বলে ?

প্রেষণা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অধিকতর কর্মপ্রচেষ্টা চালানোর ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা। মানুষ তার কর্ম প্রচেষ্টার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো কাজে অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত ও প্ররোচিত হলে এ প্রক্রিয়াটি প্রেষনা হিসেবে অভিহিত হয়ে থাকে। প্রেষণা মানুষের অন্তরে নিহিত একটি সুপ্ত শক্তি যা উজ্জীবিত হলে মানুষ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে। প্রেষিত ব্যক্তি স্বেচ্ছায়, স্বীয় উদ্যোগে, অধিকতর দক্ষতার সাথে তার কার্য সম্পাদনে সচেষ্ট হয়।

অভাব বা প্রয়োজনবোধ থেকেই প্রেষণার উদ্ভব হয়। মানুষের অতৃপ্ত বাসনা পূরণ হলে সে প্রেষিত হয়েছে বলা যায়।

প্রেষণার সংজ্ঞা

প্রেষণা সম্পর্কে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা বিশারদের সংজ্ঞা নিম্নে তুলে ধরা হলো-

১. S. A. Sherlekar এর মতে, “যে ব্যবস্থাপকীয় কার্যের সাহায্যে ব্যক্তিবর্গকে কার্যসম্পাদনে অনুপ্রাণিত, উৎসাহিত ও তাড়িত করা যায় তাকে প্রেষণা বলে।” ( Motivation is an managerial function to inspire, encourage and impel people to take required action.)

২. Keith Devis এবং John W. Newstrom এর মতে, “কাজের দিকে কর্মীকে ধাবিত করার শক্তিই হলো প্রেষণা।” ( Motivation is the strength of the driver towards an action.)

আরও পড়ুন:   সমন্বয় কাকে বলে? সমন্বয়ের গুরুত্ব আলোচনা কর।

৩. Michael Jucious এর মতে, “প্রেষণা হচ্ছে ব্যবস্থাপক কর্তৃক সে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ যা কর্মীদেরকে নির্ধারিত কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে উৎসাহিত ও প্রণোদিত করে।”

অতএব, উপরের আলোচনা হতে এটা বলা যায় যে, প্রেষণা হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থাপকীয় প্রক্রিয়া যা কোনো কর্মীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কার্যসম্পাদনে উদ্বুদ্ধ কর, ফলে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সে তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করতে সচেষ্ট হয়।

প্রেষণার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা

যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি তার মানব সম্পদ তথা শ্রমিক-কর্মী। শ্রমিক কর্মীদের সন্তুষ্টি অর্জন ব্যতীত সংগঠনের কার্যসমূহ সাফল্যজনকভাবে সম্পাদিত হতে পারে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের প্রেষণাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রেষণা যেকোনো সংগঠনের জন্য নিম্নলিখিত গুরুত্ব বহন করে থাকে-

১. উৎপাদন বৃদ্ধি

উপযুক্ত প্রেষণা দানের ফলে শ্রমিক-কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের সকল কাজে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই প্রেষণা ও উৎপাদনের সম্পর্ককে নিম্নোক্ত সমীকরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়-

p = f(a × m)

যেখানে,

p = কর্ম-সম্পাদন (performance)

f = অপেক্ষক (function)

a = কার্যদক্ষতা (ability)

m = প্রেষণা (motivation)

২. মানব সম্পদের সঠিক ব্যবহার

প্রেষণা কর্মীদের  স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। ফলে কর্মী তার প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা প্রতিষ্ঠানের কাজে নিয়োজিত করে। এতে মানব সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

৩. দক্ষতা বৃদ্ধি

প্রতিষ্ঠানের কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের প্রেষনা দেয়া হলে কর্মীরা তাদের প্রতি প্রদত্ত দায়িত্ব পূর্ণমাত্রায় পালন করতে সচেষ্ট হয়। এতে কাজের প্রতি তাদের মমত্ব বাড়ে। কর্মীরা সকল কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে বিধায় তাদের দক্ষতা ও কর্ম-অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পায়।

৪. অপচয় হ্রাস

প্রেষণা কর্মীদেরকে দক্ষতার সাথে কর্ম সম্পাদনে প্রেরণা যোগায়। এতে কাজের ক্ষেত্রে সময় এবং সম্পদের অপচয় হ্রাস পায়।

৫. কর্মীদের চাকুরি ত্যাগের হার হ্রাস

প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধাদি দেয়া হলে অর্থাৎ প্রেষিত করা হলে তারা সহজে উক্ত প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যেত চায় না। এতে প্রতিষ্ঠান কর্ম-ত্যাগ বা শ্রম-ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস পায়।

৬. শ্রমিক আন্দোলন হ্রাস

যে প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের প্রেষণা কাম্য পর্যায়ে থাকে সে প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক আন্দোলন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। ফলে উৎপাদন অব্যাহত গতিতে চলতে থাকে।

৭. নির্দেশনার সঠিক বাস্তবায়ন

প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রেষনা উঁচু মানের হলে ব্যবস্থাপকগণ সহজে তাদের দ্বারা নির্দেশ পালন করিয়ে নিতে পারেন। কারণ অনুপ্রেষিত কর্মীরা সহজে ব্যবস্থাপকের নির্দেশ পালন করে।

৮. সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ

অনুপ্রেষিত কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সম্পদ যথা- যন্ত্রপাতি, কাগজপত্র, কম্পিউটার ও অন্যান্য মালামাল সঠিকভাবে সংরক্ষণে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে।

৯. প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি

কর্মীদের মধ্যে প্রেষণা বিরাজ করলে তারা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আনয়নে সদা তৎপর থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি পায়।

১০. ব্যবস্থাপনা-শ্রমিক সম্পর্কের উন্নয়ন

কর্মীদের প্রেষনা উঁচু মানের হলে তারা ব্যবস্থাপকদের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তৎপর থাকে এবং তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। এতে ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকদের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে।

১১. সৃজনশীলতার বিকাশ

কর্মীদের মধ্যে প্রেষণা বিরাজমান থাকলে তারা সৃজনশীল চিন্তা চেতনা বিকাশে উদ্যোগী হয়। তাদের সব ধারণা ও উন্নয়নমূলক চিন্তা প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

১২. সহজতর লক্ষ্য অর্জন

সর্বোপরি অনুপ্রেষিত কর্মীদের কর্ম সন্তুষ্টি পূর্ণমাত্রায় বজায় থাকে বিধায় তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা দ্বারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয়।

সুতরাং, দেখা যায়, প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের চাকাকে সচল রাখে, কর্ম-উদ্দীপনার পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিল্প সম্পর্ক গতিশীল রাখে এবং সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে সজীবতা আনে। এ কারণেই Mr. Gellerman প্রেষণাকে ‘ব্যবস্থাপনার মজ্জা’ বলে অভিহিত করেছেন।

 

Related Posts