Home » বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব,

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

নদী মাতৃক এদেশের প্রধান পেশা কৃষি। সে জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি কৃষি। এদেশের শতকরা ৬৪ ভাগ (অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০০৫) ভাগ লোক কৃষিজীবী। দেশের মোট জাতীয় আয়ের প্রায় ৩২% এবং বৈদেশিক মুদ্রার এক বিরাট অংশ কৃষি হতে আসে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব

নিম্নে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১. জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস

বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ২১.৯১ ভাগ কৃষি হতে আসে। সুতরাং কৃষিই এদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি এবং জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস।

২. প্রধান উপজীবিকা

বাংলাদেশের মানুষের প্রধান উপজীবিকা কৃষি। এদেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল।

মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেলের উৎপাদন ও বন্টন আলোচনা কর।

৩. খাদ্যের যোগান

কৃষি বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য যোগায়। এ দেশের শতকরা ৬৪ জন লোক কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকার ফলে অধিকাংশ খাদ্য কৃষি হতে আসে। সুতরাং কৃষি আমাদের দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের যোগান দিয়ে থাকে।

৪. শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ

বাংলাদেশের শিল্পোন্নতি প্রায় সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কারণ পর্যাপ্ত খনিজ সম্পদের অভাবে এদেশে কৃষিনির্ভর শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেছে। ফলে পাট, কার্পাস, রেশম, চা, চিনি, সিগারেট প্রভৃতি অনেক শিল্পের কাঁচামাল যোগান দেয় কৃষি।

৫. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস হলো বিভিন্ন প্রকার কৃষিজ পণ্য ও কৃষিজাত দ্রব্য। যেমন- পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চা, তামাক ইত্যাদি। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা ৭০ ভাগই কৃষি ও কৃষিনির্ভর শিল্প হতে আসে। বাংলাদেশে ২০২২-২৩ সালে কৃষিজাত পণ্য হতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিমাণ ৬১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার।

৬. সরকারি আয়ের উৎস

বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস কৃষি। জমির খাজনা, কৃষিপণ্য পরিবহণ বাবদ রেলভাড়া, কৃষিপণ্যের রপ্তানি শুল্ক প্রভৃতি বাবদ সরকার প্রচুর অর্থ উপার্জন করে।

৭. রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নতি

বাংলাদেশ হতে প্রতিবছর প্রচুর কৃষিজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। সুতরাং কৃষি এদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য, বিশেষ করে রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নতির প্রধান সহায়ক।

৮. বাসস্থানের উপকরণ যোগান

এদেশের জনগণের বাসস্থানের উপকরণ যোগায় কৃষি। বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য, যেমন-বাঁশ, শন, পাটখড়ি, খড় প্রভৃতি দ্বারা ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়।

৯. শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার সৃষ্টি

কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে কৃষকদের আয় বাড়ে এবং শিল্পজাত দ্রব্যাদির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশের শিল্পোন্নতি হয় এবং দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে।

১০. বস্ত্রের যোগান

কৃষি বাংলাদেশের জনগণের বস্ত্রের যোগান দেয়। সুতিবস্ত্র, রেশম, রেয়ন প্রভৃতি বস্ত্রের কাঁচামাল এদেশের কৃষি হতেই পাওয়া যায়।

১১. শিল্পোন্নয়নের ভিত্তি

বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন সম্পূর্ণভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এদেশের অধিকাংশ শিল্পের কাঁচামাল কৃষি সরবরাহ করে।

লৌহ ও ইস্পাত শিল্প কাকে বলে? এ শিল্প গড়ে ওঠার কারণ সমূহ কি কি?

১২. জ্বালানি সরবরাহ

কৃষি হতে প্রাপ্ত বাঁশ, কাঠ, পাটকড়ি প্রভৃতি এদেশের জনগণের জ্বালানি উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

১৩. মোট জাতীয় উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধি

বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষি উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কৃষকের আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১৪. আমদানি হ্রাস

পূর্বে বাংলাদেশকে প্রতিবছর ২০/২৫ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতো। ইদানিং দেশে কৃষিজ শস্যের ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা কিছুটা খাদ্যঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি।

উপসংহার

কৃষিই বাংলাদেশের অর্থনীতির বুনিয়াদ এবং মেরুদণ্ড। কৃষির সাফল্য অথবা ব্যর্থতার সাথে এদেশের অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষি একদিকে যেমন দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য যোগান দেয় তেমনি অন্যদিকে দেশের শিল্পায়নে সাহায্য করে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বৃদ্ধি করে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অত্যধিক।

Related Posts