বাংলাদেশের বন্যার কারণ ও প্রতিকার
নিম্নে বাংলাদেশের বন্যার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:-
প্রকৃতির দুই রূপ সৃষ্টি ও ধ্বংস। প্রকৃতি একদিকে গঠন করছে। অন্যদিকে বিনাশ করছে। সে একদিন কোমল, অন্যদিকে কঠোর। একদিকে বক্ষ, অন্যদিকে সংহারক। ঝড়-ঝঞ্চায়, অগ্ন্যুৎপাতে ও বন্যায় প্রকৃতির ভৈরবী মূর্তিকে খুঁজে পাই। তবে সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যার আঘাতই সামগ্রিক।
বন্যার কারণ সমূহ
১. অত্যাধিক বৃষ্টি
নদী পার্বত্য অঞ্চল হতে উৎপন্ন হয়ে সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পার্বত্য অঞ্চলে ও সমভূমি অঞ্চলে অতিরিক্ত বারিপাতের ফলে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং নদীর দু তীর প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কি | দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ধাপসমূহ আলোচনা কর |
২. বরফগলা পানি
বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীই হিমালয় পর্বত হতে উৎপন্ন হয়েছে। হিমালয় পর্বতে হঠাৎ অতিরিক্ত বরফ গলতে থাকলে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বাংলাদেশের নিম্ন অঞ্চলে প্রবল বন্যা দেখা যায়।
৩. নদীর তলদেশ ভরাট
নদীর পানিতে প্রচুর পলিমাটি থাকে। প্রতিবছর বন্যার সময় নদীর পানির সাথে পলিমাটি পরিবাহিত হয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়। ফলে যখন প্রবল বারিপাতের সূচনা হয় তখনই নদী এর দুই পার্শ্বের স্থলভাগকে প্লাবিত করে প্রবাহিত হয়।
৪. খালের অভাব
দেশের অভ্যন্তরের পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত খাল না থাকলে বন্যা দেখা দেয়। বর্ষাকালে আমাদের দেশে নিম্ন অঞ্চলের নদীসমূহে জলস্ফীতি ঘটে এবং খালের অভাবহেতু বন্যার সৃষ্টি হয়।
৫. নিম্নভূমির অস্তিত্ব
বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যতু হাওড়, দীঘি, খাল-বিল রয়েছে। এসব নিম্নভূমি বৃষ্টির পানিতে সহজেই ডুবে যায় এবং বন্যার সৃষ্টি হয়।
বন্যার প্রতিকার
নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলো অবলম্বনপূর্বক প্রলয়ঙ্করী ও সর্বনাশা প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত হতে বাংলাদেশকে রক্ষা করা সম্ভবপর হবে।
১. নদীর গভীরতা বৃদ্ধি
বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ড্রেজারের দ্বারা গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে।
২. খাল পুনঃখনন
বাংলাদেশের অসংখ্য খাল সংস্কারের অভাবে ভরাট হয়ে গিয়েছে। এ সমস্ত খাল পুনঃখনন করতে হবে। অন্যথায় নদীর গভীর থাকা সত্ত্বেও খালের অভাবহেতু বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।
৩. বাঁধ নির্মাণ
নদীর উভয় পার্শ্বে বাঁধ নির্মাণ করলে এর দুই পার্শ্বের এলাকা প্লাবনের হাত হতে রক্ষা পায়। সমুদ্রের উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধের সাহায্যে বন্যা বা লোনা পানি হতে শস্যক্ষেত্র রক্ষা পেতে পারে।
৪. রেলপথ ও সড়ক নির্মাণের সময় সাবধানতা
রেলপথ ও সড়ক নির্মাণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন এটি পানি নিষ্কাশনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি না করে। প্রয়োজনে পানি পথের উপর বাঁধ না দিয়ে পুল বা সেতু নির্মাণ করতে হবে।
দুর্যোগ কত প্রকার ও কি কি? |
৫. নদীর গতি পরিবর্তন
নদীর গতি পরিবর্তন করেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন বহ্মপুত্র নদীর ২২ লক্ষ ৫ কিউসেক পানি যদি মেঘনা নদীতে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে ময়মনসিংহ ও সিলেট জেলার প্রায় ৩০ লক্ষ একর জমি বন্যার হাত হতে রক্ষা পায়।
৬. যৌথ কর্মসূচি
বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী ভারতে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের প্রবেশ করছে। কাজেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সার্থক রূপায়নের জন্য বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশকে যৌথভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।