Home » মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব আলোচনা কর

মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব

চাহিদা মানব জীবনের চিরন্তন সঙ্গী। আর এই চাহিদার সৃষ্টি অসীম অভাব থেকে। এই অসীম অভাব মেটানোর তাগিদেই মানুষ নিরন্তর সংগ্রাম করে চলে। সমাজের সর্ব শ্রেণীর মানুষের চাহিদা পর্যবেক্ষণ করে প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী A. H. Maslow প্রেষণার ক্ষেত্রে একটি সার্বজনীন তত্ত্ব প্রদান করেছেন। এই তত্ত্বটিকেই মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব বা Maslow’s Need Hierarchy বলা হয়।

মাসলো মানুষের চাহিদাগুলোকে পাঁচ শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। তাঁর মতে, এসব চাহিদাগুলো ধাপে ধাপে একজন কর্মীর সামনে আসে। অর্থাৎ প্রথমটির অভাব পূরণ হওয়ামাত্রই দ্বিতীয়টি অনুভূত হয়। এভাবে একের পর এক একজন কর্মীর চাহিদা দেখা দেয়।

আরও পড়ুন:   প্রেষণা কি বা কাকে বলে? প্রেষণার গুরুত্ব আলোচনা কর।

নিম্নে আব্রাহাম মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব ব্যাখ্যা করা হলো-

মাসলোর তত্ত্বমতে মানুষের পাঁচটি ক্রমিক চাহিদা নিম্নরূপ-

১. শারীরিক প্রয়োজন (Physiological Needs)

২. নিরাপত্তার প্রয়োজন (Security Needs)

৩. সামাজিক প্রয়োজন (Social Needs)

৪. আত্মতৃপ্তির প্রয়োজন (Ego Needs)

৫. সৃজনশীলতা ও বিশেষ অবদানের প্রয়োজন (Self Actualisation Needs)

মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব

শারীরিক বা দৈহিক প্রয়োজন

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের ন্যায় অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনসমূহ এর অন্তর্গত। এটাকে ন্যুনতম বাঁচার প্রয়োজন হিসেবেও অভিহিত করা হয়। সৃষ্টির আদিকাল হতে মানুষ এ জাতীয় প্রয়োজন অনুভব করে আসছে। বস্তুত মানুষের ন্যুনতম বাঁচার প্রয়োজন মিটানোর উপরই যে কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সার্থকতা নির্ভর করে। অধিকন্তু যে কোন কারবারি প্রতিষ্ঠানেরই উচিত এর কর্মীদিগকে ন্যূনতম বাঁচার প্রয়োজন মিটানোর মাধ্যমে কর্মে উদ্বুদ্ধ করা।

নিরাপত্তার প্রয়োজন

ন্যুনতম বাঁচার প্রয়োজন মেটানোর সাথে সাথেই মানুষ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সকল প্রকার অনিশ্চয়তা ও দুর্ঘটনার হাত হতে নিজেকে ও তার পরিবারকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়। তবে বিভিন্ন প্রকার অনিশ্চয়তার মধ্যে যেহেতু আর্থিক অনিশ্চয়তাই প্রধান তাই প্রত্যেক কর্মীই তার চাকুরী ও আয়ের স্থায়ীত্বের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে থাকে।

সামাজিক প্রয়োজন

মানুষ যখন কিছুটা আর্থিক স্বচ্ছলতা ও নিরাপত্তাবোধে তৃপ্ত হয় তখনই সে বন্ধ-বান্ধব পেতে আগ্রহী হয়। প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাও যখন প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধাসহ স্থায়ী চাকুরীতে বহাল হয় তখনই তারা সামাজিক প্রয়োজন অনুভব করে এবং বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে আগ্রহী হয়। উল্লেখ্য যে, উন্নত দেশসমূহের প্রায় সকল কর্মীর পক্ষেই বিভিন্ন সামাজিক প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হলেও আমাদের মত অনুন্নত দেশে খুব কম সংখ্যক কর্মীর পক্ষেই এটা সম্ভব।

আত্ম তৃপ্তির প্রয়োজন

অন্যান্য প্রয়োজন মিটানোর পর মানুষ আত্মতৃপ্তির উপরই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আত্মতৃপ্তিতেই অনেকে জীবনের অর্থ খুঁজে পায়। ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং আত্মতৃপ্তির জন্যই কর্মীদের বড় চাকুরী, গাড়ি, বাড়ি ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, উচ্চ স্তরের কর্মীদের আত্মতৃপ্তির প্রয়োজনেই তাদেরকে ব্যয়বহুল গাড়ি, বাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদির সুযোগ করে দেয়া হয়।

সৃজনশীলতা ও বিশেষ অবদানের প্রয়োজন

আত্মতৃপ্তির পরেই মানুষ সৃজনশীলতা ও বিশেষ অবদানের প্রয়োজন অনুভব করে। এ পর্যায়ে উন্নীত হওয়া শ্রমিক কর্মীদের পক্ষে খুবই দুরূহ ব্যাপার। এটা হলো একজন ব্যক্তি নিজেকে যে পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার উপযুক্ত মনে করে সেই পর্যায়ে উন্নীত হওয়া। শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজসেবা ও বিজ্ঞান ইত্যাদি কিছু সংখ্যক ক্ষেত্রেই সৃজনশীলতা ও বিশেষ অবদানের সুযোগ রয়েছে। বলা বাহুল্য মুষ্টিমেয় মহামনীষীর পক্ষেই এ পর্যায়ে উন্নীত হওয়া সম্ভব হয়েছে।

মাসলোর প্রেষণা তত্ত্বের সমালোচনা বা সীমাবদ্ধতা

মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী হলেও অনেকেই এর সমালোচনা করেছেন। নিম্নে মাসলোর প্রেষণা তত্ত্বের সমালোচনা উল্লেখ করা হলো-

১। মাসলোর মতে, মানুষের আচরণ অভাব দ্বারা পরিচালিত হয়। কিন্তু অভাব ব্যতীত মানুষের আচরণ আরও অনেক বিষয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

২। এ তত্ত্বে প্রতিটি অভাবে পৃথক স্বত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ কখনও একটি মাত্র অভাব পূরণের দ্বারা প্রেষণা লাভ করে না।

৩। এ তত্ত্বটি সকল সময়ে, সকল স্থানে এবং সকল পরিস্থিতিতে ব্যবহার উপযোগী নয়।

৪। মাসলোর মতে, সকল সময় মানুষের চাহিদার ধরন একই।

৫। মাসলো চাহিদাকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করেছেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির চাহিদার মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। যে কোন একটি অভাব সকল কর্মীর মধ্যে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।

৬। মাসলো অভাবকে যে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন, তা সর্বজনস্বীকৃত নয়।

Related Posts