Home » ম্যাকগ্রেগর এর X ও Y তত্ত্ব ব্যাখ্যা কর
ম্যাকগ্রেগর এর X ও Y তত্ত্ব ব্যাখ্যা

ম্যাকগ্রেগর এর X ও Y তত্ত্ব ব্যাখ্যা কর

by Susmi
0 comment

ব্যবসায় সংগঠনের কর্মীদের প্রকৃতি ও আচরণের ওপর নির্ভর করে ব্যবস্থাপকগণ তার অধস্তনদের প্রণোদনা দানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ব্যবস্থাপকগণ যদি মনে করেন তার অধস্তনরা অলস ও কর্মবিমুখ তাহলে তিনি এক প্রকার প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন আর যদি তার মত প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম পরিচালনা হয় অন্যরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ডগলাস এম ম্যাকগ্রেগর মানুষের এই আচরণের বৈচিত্র্যতার ওপর ভিত্তি করে “The Human Side of Enterprise” নামক গ্রন্থে X ও Y নামে দুটি উল্লেখযোগ্য তত্ত্বের অবতারণা করেন যা একসাথে X ও Y তত্ত্ব নামে অধিক পরিচিত।

X ও Y তত্ত্ব এর ব্যাখ্যা

নিচে ডগলাস ম্যাকগ্রেগর এর X ও Y তত্ত্ব এর ব্যাখ্যা করা হলো

X তত্ত্ব

এ তত্ত্বে মানুষের প্রকৃতি ও আচরণ সম্পর্কে চিরাচরিত স্বৈরাচারী ধারণা পোষণ করা হয়। এ তত্ত্ব অনুসারে মানুষকে যন্ত্রতুল্য মনে করা হয় এবং সবসময় তাদেরকে কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণে রেখে কাজ আদায় করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে একনায়কত্বতা বা স্বৈরতান্ত্রিকতাই এ তত্ত্বের মূল কথা।

X তত্ত্বে কর্মীদের আচরণ সম্পর্কে নিম্নোক্ত ধারণাসমূহ পোষণ করা হয়-

১. কর্মীরা স্বভাবতই অলস প্রকৃতির এবং তারা কাজ পছন্দ করে না।

২. অধিকাংশ কর্মী ফাঁকিবাজ এবং সুযোগ পেলেই দায়িত্ব এড়াতে চায়।

৩. কর্মীদেরকে দিয়ে কাজ আদায় করতে হলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, চাপ প্রয়োগ এবং শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৪. কর্মীদের জন্য কঠোর নিয়মশৃঙ্খলার প্রবর্তন করা আবশ্যক হবে।

৫. গড়পড়তা কর্মীরা তাদের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তার খুব একটা প্রয়োগ করে না, এ কারণে তারা নির্দেশিত ও পরিচালিত হতে পছন্দ করে।

৬. তারা উচ্চাকাঙ্ক্ষার অধিকারী হয় এবং সর্বোপরি নিরাপত্তা প্রকাশ করে।

আরও পড়ুন:   মাসলোর চাহিদা সোপান তত্ত্ব আলোচনা কর

Y তত্ত্ব

এ তত্ত্বে কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ, কর্মতৃপ্তি লাভের ইচ্ছা, নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে প্রচেষ্টা, তাদের চিন্তা শক্তি, সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা, এবং লক্ষ্য অর্জনে এসব উপকরণ ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক বিকাশ ও আন্তমানবিক সম্পর্কেও প্রেষণার উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

Y তত্ত্বের ধারণাসমূহ নিম্নরূপ-

১. মানুষ কাজকে খেলাধূলা অথবা বিশ্রামের মতই সহজ ও স্বাভাবিকভাবে আগ্রহের সাথে গ্রহণ করে।

২. প্রকৃতিগতভাবে মানুষ অলস নয়। বরং কার্যের অনুপযুক্ত পরিবেশ তার মধ্যে অলসতার ভাব আনয়ন করতে পারে। যেমন- একই কাজ তৃপ্তিদায়ক অথবা বিরক্তিকর হতে পারে শুধুমাত্র কার্যের পরিবেশের ভিন্নতার জন্য।

৩. কোনরূপ বল প্রয়োগ বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই স্বউদ্যোগে ও স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে মানুষ অর্পিত দায়িত্ব পালনে আগ্রহী থাকে।

৪. মানুষের চিন্তাশক্তি, সৃজনশীলতা ও সম্ভাবনা আছে, যা সে উপযুক্ত পরিবেশ কর্ম সম্পাদনকালে ব্যবহার করতে ইচ্ছুক থাকে।

৫. ব্যবস্থাপকের কাজ হলো কর্মীদের মধ্যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করা এবং লক্ষ্য অর্জনে ঐ সম্ভাবান ব্যবহার করতে সহায়তা করা।

অতএব X ও Y তত্ত্ব উভয়ই মানুষের আচার আচরণ, ভাব এবং ইচ্ছার প্রতি বিপরীত ধারণা প্রদান করে। তবে আমরা যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে অতিক্ষুদ্র নিম্নস্তরের মানুষের কাছে X চাহিদাটি প্রাথমিকভাবে কার্যকরী। আর Y সকলক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় আধুনিক প্রেষণার মুখ্য উপাদান হিসেবে মানবিক আবেদন সৃষ্টি করতে সক্ষম। তাই ব্যবস্থাপনায় Y তত্ত্বের গুরুত্ব অপরিসীম।

Related Posts